রমজানে দেশে ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা

বাজারদর/
এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(১ বছর আগে) ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৭:৫২ পূর্বাহ্ন

agribarta

দেশে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। বিশ্ববাজারে কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও দেশের খুচরা বাজারে দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। রমজান মাস সামনে রেখে ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু এলসি জটিলতায় আমদানি সে চাহিদার জন্য পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে ফের দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত আমদানি না হলে বাজারে ফের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

দেশে ভোগ্যপণ্যের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরবরাহ আদেশ বা এসও পর্যায়ে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৭০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও একই মানের পাম অয়েলের দর ছিল ৪ হাজার ৫৫০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকা। একসময় পাইকারি বাজারে মাসভিত্তিক এসও বিক্রির রেওয়াজ থাকলেও আসন্ন রমজানে মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কায় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এসও বিক্রি কার্যত বন্ধ। এ কারণে পণ্যটির দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। এসও পর্যায়ে মণপ্রতি ৪ হাজার ৭০০ টাকার মধ্যে লেনদেন হলেও মিলগেট থেকে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৯০০ থেকে ৫ হাজার টাকা দরে। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে মণপ্রতি সুপার পাম অয়েল এসও পর্যায়ে লেনদেন হচ্ছে ৪ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ৯৫০ টাকায় এবং নগদে ৫ হাজার ১০০ টাকায়।

এছাড়া এসও পর্যায়ে সয়াবিন লেনদেন হচ্ছে ৬ হাজার ৪৫০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকায় এবং নগদে ৬ হাজার ৬০০ টাকায়। আসন্ন গ্রীষ্মে সয়াবিনের পরিবর্তে পাম অয়েলের চাহিদা বাড়তি থাকবে। এ কারণে সয়াবিনের পরিবর্তে পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েলের বাজার ধীরে ধীরে চাঙ্গা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত পাম অয়েলের বুকিং দর ছিল টনপ্রতি ৯৪০ ডলার, যা গত বছরের এপ্রিল-জুন পর্যন্ত ছিল ১ হাজার ৬৩৪ ডলার। ডিসেম্বরে সয়াবিনের টনপ্রতি বুকিং দর ছিল ১ হাজার ৪০৯ ডলার, যা গত বছরের এপ্রিল-জুন পর্যন্ত ছিল ১ হাজার ৮৮৭ ডলার। বর্তমানে পাম অয়েল ও সয়াবিনের দাম কমলেও দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, পর্যাপ্ত আমদানি না হওয়া, জ্বাালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জনিত কারণে সে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের এসও ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘দেশে চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের আমদানি হয়নি বলে দাবি করছে প্রধান ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলো। যার কারণে আগের তুলনায় বাড়তি দর হাঁকছে তারা। আসন্ন রোজা ও গ্রীষ্মকালীন চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় এখন থেকে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে এক সপ্তাহের মধ্যেই পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে আসন্ন রোজায় বাড়তি দামেই ভোজ্যতেল সংগ্রহ করতে হবে সাধারণ ভোক্তাদের।’

খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোলাবাজারে লিটারপ্রতি সয়াবিন ১৮৫ টাকায়, খোলা সয়াবিন ১৬৮-১৭২ টাকায়, খোলা পাম অয়েল ১২০-১২৫ টাকায় ও সুপার পাম অয়েল ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি সরবরাহ সংকট থাকায় এর চেয়ে বেশি দামেও খোলা সয়াবিন, পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েল বিক্রি হতে দেখা গেছে। বোতলজাত সয়াবিনও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রির অভিযোগ করছেন ভোক্তারা।

খাতসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রমজানে যেকোনো মাসের চেয়ে দ্বিগুণ ভোজ্যতেল বিক্রি হয়। শীত মৌসুমে সয়াবিনের পরিবর্তে প্রায় ৮০ শতাংশ চাহিদাই থাকে পাম অয়েলের। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ইন্দোনেশিয়া থেকে পাম অয়েলের সরবরাহ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় মালয়েশিয়ায় উৎপাদন ও রফতানি নিম্নমুখী। এতে একদিকে যেমন পাম অয়েলের দাম বাড়বে, তেমনি সরবরাহের অভাবে আমদানি কঠিন হয়ে পড়তে পারে। দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৭০-৮০ শতাংশ পাম অয়েলের ওপর নির্ভরশীল থাকায় আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে দেশে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ে শঙ্কিত ট্রেডিং ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অপরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৯ টন। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, শেষ প্রান্তিকে এলসি (ঋণপত্র) খোলার হার ২৮ শতাংশ কমে যায়। ওই সময় এলসি খোলা হয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯ টনের, অপরিশোধিত সয়াবিন অয়েলের এলসি ৪৭ শতাংশ কমে হয়েছে ৮৮ হাজার ৭২৪ টন, পরিশোধিত সয়াবিনের ২৩ শতাংশ কমে ২ হাজার ৩৭৩ টন এবং সয়াবিন তেলবীজ আমদানি ৮৩ শতাংশ কমে হয়েছে ৭৮ হাজার ২০ টন। অপরিশোধিত পাম অয়েলের এলসি ১০০ শতাংশ কমে হয়েছে ২৩০ টন।