
বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবি করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে। কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজারের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজারের আকার প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার হলেও, চাহিদা পূরণে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়। এতে মোট কৃষিপণ্যের বাজার দাঁড়ায় ১৫ বিলিয়ন ডলারে। বিশ্লেষকদের মতে, এত বিপুল পরিমাণ আমদানি নির্ভরতার পরেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবি প্রশ্নবিদ্ধ।
দেশে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের ফলে গমের চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু স্থানীয় উৎপাদন প্রায় ১৪-১৫ শতাংশ মাত্র, বাকিটা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। গত বছর গমের মোট সরবরাহ ছিল ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার টন, যার মধ্যে ৭২ লাখ ৭৫ হাজার টনই আমদানি করা হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে গম আমদানি প্রায় ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে, সাম্প্রতিক বন্যার কারণে ধান উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। যদিও গত অর্থবছরে চাল আমদানির প্রয়োজন হয়নি, তবে চলতি বছর সরকার ১০ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা করেছে।
বাংলাদেশে বেশিরভাগ কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই আমদানির ওপর নির্ভরতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মসুর ডালের ৭০ শতাংশই বিদেশ থেকে আসে, যেখানে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৩০ শতাংশ। একইভাবে, পেঁয়াজের চাহিদার বড় অংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হলেও ২৫-৩০ শতাংশ পচে নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ঘাটতি পূরণে আমদানির আশ্রয় নিতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষিপণ্য আমদানি হয়েছে ৫.৩ বিলিয়ন ডলারের, যা পরের বছর ৪.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমলেও, এখনো বহু খাদ্যপণ্য বিদেশ থেকে আনতে হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে আমদানির বিকল্প খুঁজতে হবে। স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার ও কৃষিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রিপন কুমার মণ্ডল মনে করেন, শুধুমাত্র ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে দেশীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ে এবং আমদানির ওপর নির্ভরতা কমে।
দেশের কৃষিখাতকে শক্তিশালী করতে গবেষণা বাড়ানো, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা ও কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার ওপর বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন। কিছু পণ্যের আমদানি কমানো গেলেও, কিছু ক্ষেত্রে আমদানির বিকল্প নেই। তবে পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে বাংলাদেশকে সত্যিকারের স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা সম্ভব।