
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার দুর্গম যমুনা নদীর চরে লাল সোনা খ্যাত শুকনা মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পেয়ে মরিচ চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। কাজিপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন যমুনার চরে অবস্থিত। চরের ইউনিয়নগুলো হলো নাটুয়ারপাড়া, মনসুরনগর, খাসরাজবাড়ি, চরগ্রিস, নিশ্চিন্তপুর ও তেকানি। এ ছাড়া বাকি ৬ ইউনিয়ন হলো কাজিপুর সদর, সোনামুখী, চালিতাডাঙ্গা, মাইজবাড়ি, শুভগাছা ও গান্ধাইল। কাজিপুর উপজেলার সব ইউনিয়নেই কমবেশি শুকনা মরিচ আবাদ হয়। তবে যমুনা নদীর চরের ইউনিয়নগুলোতে শুকনা মরিচ চাষ বেশি হয়। চরের পলিমাটি কৃষকের আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। এখানকার কৃষকের ভাগ্যের চাকাও ঘুরেছে।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর কাজিপুর উপজেলায় ৪৪০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে যমুনা নদীর চরের ৬ ইউনিয়নের চরাঞ্চলেই আবাদ হয়েছে ৭০ ভাগ। নতুন পলিমাটিতে মরিচ চাষ ভালো হওয়ায় কৃষকরা মরিচ চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠেছে। শুকনা মরিচ চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এ বছর মরিচের বাম্পার ফলন হওয়ায় ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চরের কৃষকরা মরিচ চাষ শুরু করেছে। মরিচের ফলন কীভাবে ভালো হবে সে বিষয়ে নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর চরাঞ্চলে স্থানীয় জাত, বেড গোল্ড, বিজলী প্লাস, বালিজুরি জাতের মরিচ চাষ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ৯ উপজেলায় ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ১০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়ে মোট ১ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে।
চাষকৃত মরিচের মধ্যে হাইব্রিড জাতের বিজলী, যমুনা, রশনী, ঝিলিক, উন্নত জাতের মধ্যে বারি-৩, সুপার সনিক, রংপুরী, বগুড়া ছাড়াও স্থানীয় জাতের মরিচের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে শুকনা মরিচের উৎপাদন হয়েছে দুই দশমিক ৫৯ টন। শুকনা মরিচের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজর ৫১৯ টন। এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। আর শুকনা মরিচ মণ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। সিরাজগঞ্জের যমুনার চরে উৎপাদিত কাঁচামরিচ ও শুকনা মরিচ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনতে আসছেন পাইকাররা। প্রতি সপ্তাহের শনি ও বুধবার কাজিপুরের নাটুয়াপাড়ায় হাট বসে। এই হাট থেকে দেশের বড় বড় কোম্পানির প্রতিনিধিসহ ব্যাপারীরা মরিচ কিনে নিয়ে যান। অনেক ব্যাপারী হাট থেকে মরিচ কিনে চরের তপ্ত বালুর ওপর শুকিয়ে নেন। সোনামুখী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মরিচ চাষি আনছার আলী জানান, এ বছর ১ বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। কাঁচা মরিচ বিক্রি করেও চার মণ শুকনা মরিচ রেখেছেন। এই ১ বিঘা মরিচ ক্ষেতে চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। বর্তমানে মরিচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। চার মণ মরিচ ৯৬ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
নাটুয়াপাড়ার কৃষক আব্দুল করিম বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এক বিঘা জমিতে তিনি মরিচের চাষ করেছেন। এরই মধ্যে ২০ মণ কাঁচামরিচ বিক্রি করেছেন। আরও চার মণ মরিচ শুকিয়ে রেখেছেন। তিনি জানান, এখন যদি শুকনা মরিচ বিক্রি করি তাহলে প্রায় এক লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারব।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার সাদাত বলেন, ভালো দামের আশায় চরের কৃষকরা মরিচ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ বছর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। যার বেশিরভাগই চর এলাকায় হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের এ বিষয়ে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসান শহীদ সরকার বলেন, মরিচের ভালো দাম থাকায় যমুনার চরের কৃষকরা মরিচ চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। চলতি বছর জেলায় ১ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর জেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে।