ঢাকা, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার

হাওরের বুকে চিরে সড়ক নির্মাণ, কৃষি-কৃষকের সর্বনাশ



পরিবেশ

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(১ মাস আগে) ২০ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন

agribarta

সুনামগঞ্জের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো ধান চাষ। এখানকার ১২টি উপজেলার ১৩৭টি হাওরে প্রায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন ১০ লাখেরও বেশি কৃষক। তবে এবার কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাংহাই হাওরের কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে—কারণ তাদের কষ্টের ফসল গোলায় তোলার আগেই সেখানে শুরু হয়েছে সড়ক নির্মাণের কাজ।

হাওরের মাঝখান দিয়ে নির্মিতব্য চার কিলোমিটার সড়কের জন্য কৃষকদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। জমির মালিকদের জানানো তো দূরের কথা, ধান নষ্ট হওয়াটাকেও গুরুত্ব দেয়নি সংশ্লিষ্টরা।

সাংহাই হাওরের কৃষক হাসান আহমেদ বলেন,

"হাওরের মাঝখান দিয়ে যেভাবে ধান নষ্ট করে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটা দুঃখজনক। আমরা যারা কৃষক, সবাই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।"

আরেক কৃষক তারিফ মিয়া বলেন,

"আমার চার একর জমি এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। জমিটুকু হারিয়ে আমি পথে বসে গেছি।"

হাওর এলাকার পরিবেশ নিয়ে কাজ করা নেতা ওবায়দুল হক মিলন বলেন,

"হাওরে এমন সড়ক হলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে। এতে শুধু কৃষক নয়, পুরো পরিবেশেরই ক্ষতি হবে।"

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় এই সড়ক নির্মাণ করছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেবি ইনোভেশন। প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এই সড়ক গত বছর শুরু হলেও পানির কারণে কাজ থেমে যায়। এবার মার্চের শুরুতে আবারও কাজ শুরু হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মুরাদ আহমদ বলেন,

"যাদের জমি সড়ক নির্মাণের জন্য নেওয়া হচ্ছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি না, সেটা বলতে পারবো না।"

শান্তিগঞ্জ উপজেলার ইউএনও সুকান্ত সাহা বলেন,

"হাওরের মাঝখান দিয়ে এমন সড়ক হওয়া উচিত নয়। এতে পরিবেশের ক্ষতি হবে। তবে কেউ অভিযোগ করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।"

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন,

"হাওরের প্রকৃতি ও কৃষকদের ক্ষতি করে কোনো কাজ করা ঠিক হবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।"

সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর জীবন ও জীবিকা ধাননির্ভর। সেখানে অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তা কৃষকদের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এখন কৃষকরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় রয়েছেন।