ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, রবিবার

রামুতে ১৪০ হেক্টরজুড়ে তামাক চাষ: স্বাস্থ্য-পরিবেশে মারাত্মক ঝুঁকি



পরিবেশ

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৭ মাস আগে) ৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:৪৬ অপরাহ্ন

agribarta

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় লাগামহীনভাবে বাড়ছে তামাক চাষ। পাহাড়, নদীতীর ও ফসলি জমির পাশাপাশি এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরেও গড়ে উঠছে তামাক প্রক্রিয়াকরণ ঘর। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, অনেক স্কুল-মাদ্রাসার পাশে যত্রতত্র স্থাপন করা হচ্ছে এসব তামাক পোড়ানোর ঘর।

সম্প্রতি এ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রামু উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম চৌধুরী তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে যেসব তামাক পোড়ানোর ঘর রয়েছে, সেগুলো সাত দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে। অন্যথায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে সেগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে রামুতে ১৪০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজারকুল, কাউয়ারখোপ, মনিরঝিল, মৈষকুম, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, নাপিতেরচর এবং ফাক্রিকাটা এলাকায় বাঁকখালী নদীর দুই পাড়জুড়ে তামাকের ক্ষেত। চাষ হয়েছে পাহাড়ি এলাকাতেও।

স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ঝুঁকি সত্ত্বেও অধিক লাভের আশায় অনেক কৃষক তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে তামাক কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহায়তা, ঋণ এবং বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাব। তবে ফলশ্রুতিতে নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমির উর্বরতা, হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রামু উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান জানান, “তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের লোভ দেখিয়ে ঋণ দেয়, আর কৃষক বাধ্য হয়ে তামাক চাষে নেমে পড়ে। তামাক চাষে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে, যা মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ।”

আরেকটি গুরুতর সমস্যা হলো, তামাক শুকানোর জন্য কাঠের জ্বালানি হিসেবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটা হচ্ছে। এতে বন উজাড়ের ঝুঁকি বাড়ছে, যা জলবায়ু ও প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এছাড়া তামাক চাষ হওয়া জমিতে ভবিষ্যতে অন্য কোনো ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়ে।

তামাক চাষ বন্ধে সরকারি উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান না হলেও কিছু বেসরকারি সংস্থা পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছে। তবে কৃষক পর্যায়ে সচেতনতা না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলো এখনও কার্যত বিনা বাধায় চাষে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে এখন প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ—প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, স্থানীয় সমাজ ও গণমাধ্যমকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে তামাকের এই আগ্রাসন ঠেকাতে।

পরিবেশ থেকে আরও পড়ুন

সর্বশেষ