চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হালদা নদী আজ প্রাণ হারাচ্ছে একটি রাবার ড্যামের কারণে। ভূজপুর এলাকার এই রাবার ড্যাম এখন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ রুদ্ধ করে দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ভাটির দিকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় পানি নেই বললেই চলে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাছের প্রজনন, আর সেচ সংকটে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১,৩০০ হেক্টর জমিতে।
নদী গবেষক ও পরিবেশবিদদের মতে, এই রাবার ড্যামই হালদার মৃত্যুর মূল কারণ। বুয়েট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের যৌথ প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে এই বাঁধ অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে শিল্প গোষ্ঠীর চাপের কারণে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এমনকি গত ৩১ মার্চ বাঁধ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফটিকছড়ির ভূজপুর থেকে রোসাংগিরি পর্যন্ত নদীর তলদেশে পানি নেই, কোথাও কোথাও চর জেগে উঠেছে। কৃষকেরা বাধ্য হয়ে বালতি দিয়ে সামান্য পানি সংগ্রহ করে সবজির ক্ষেতে ব্যবহার করছেন।
পাইন্দং, সুয়াবিল, হারিয়ালছড়ি ও দৌলতপুর এলাকার কৃষকেরা জানান, এক সময় হালদার পানির ওপর নির্ভর করে বোরো ধান ও সবজির চাষ হতো। নদীর পানি ছিল এ অঞ্চলের কৃষির প্রাণ। এখন সেই পানি নেই। মাটিও হয়ে পড়েছে অনুৎপাদনশীল।
ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন বলেন, “হালদার জন্য প্রকল্প এলেও নদীটি বাঁচছে না। বরং ধীরে ধীরে মরছে। মা মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। গত বছর ডিম ছাড়েনি রুই জাতীয় মাছ, এবারও একই শঙ্কা।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, “রাবার ড্যামের ফলে হালদার ভূগর্ভস্থ পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। হালদা হারিয়ে ফেলছে তার প্রজনন ক্ষমতা।”
ফটিকছড়ির উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথও একমত। তিনি বলেন, “উজান এলাকায় উপকার মিললেও ভাটিতে তীব্র পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে, যার ফল ভোগ করছে কৃষক ও মৎস্য খাত।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ জানান, “হালদাকে ঘিরে যে প্রকল্প চলছে, পানি না থাকলে সেগুলোর ভবিষ্যৎও ঝুঁকিতে পড়বে।”
একটি বাঁধের কারণে ধ্বংসের মুখে পড়েছে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা। এখন প্রয়োজন দৃঢ় নীতিগত সিদ্ধান্ত ও দ্রুত পদক্ষেপ—না হলে হারিয়ে যাবে একটি নদী, হারাবে হাজারো প্রাণ ও জীবিকা।
