দখল-দূষণে মৃতপ্রায় করতোয়া উন্নয়ন প্রকল্প ফাইলবন্দি

প্রাণি সম্পদ/
এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(১ বছর আগে) ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৩৩ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৬:১৩ পূর্বাহ্ন

agribarta

দখল-দূষণে বগুড়ার করতোয়া নদী এখন মৃতপ্রায়। বিভিন্ন স্থানে পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ, ড্রেনের আবর্জনা ফেলায় তলদেশ ভরাট হয়ে মরে যাচ্ছে নদীটি। একসময়ের স্রোতস্বিনী নদীটিতে পানিপ্রবাহ না থাকায় বড় নালায় পরিণত হয়েছে। এ নদী বাঁচাতে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প ১২ বছর ধরে ফাইলবন্দি হয়ে আছে। প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।

জানা যায়, বগুড়া জেলার একসময়ের প্রমত্তা নদী ছিল করতোয়া। নদীটি দখল ও দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বগুড়া অঞ্চলে এটি এখন নামেই নদী হিসেবে পরিচিত। নদীর পাড় দখল শুরু করে উচ্চ ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ টিনশেড বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার নদীর মধ্যেই সীমানাপ্রাচীর দিয়ে দখল করে ভবন তৈরি করছে প্রভাবশালীরা। শহরের ময়লা ও কলকারখানার বর্জ্য ফেলায় পানি দূষিত হওয়ায় নদীতে মাছও পাওয়া যায় না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের চেলোপাড়া, উত্তর চেলোপাড়া, মালতীনগর, ফুলবাড়ী, মাটিডালি, রাজাবাজার, ফতেহ আলী সেতু, মহাস্থানগড় এলাকায় দখলের হার সবেচেয়ে বেশি। উল্লেখিত এলাকায় দখল অব্যাহত রয়েছে।

বগুড়া জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় ১৮০ কিলোমিটার করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন পুণ্ড্রনগরীর গোড়াপত্তন হলেও সেই সভ্যতার সঙ্গে এখন করতোয়া নদীও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিতে চলেছে।

করতোয়া নদী বগুড়া শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে জেলার শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোনায় বাঙালি নদীতে গিয়ে মিলেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ কিলোমিটার। এর মধ্যে অর্ধেকাংশ নদী দূষণ, দখল, ভরাট, পানিপ্রবাহ না থাকায় এখন মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে।

১৯৮৮ সালে বন্যার সময় তৎকালীন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরের খুলশিচাঁদপুর এলাকায় বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণের মাধ্যমে করতোয়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। সে সময় ওই অংশে করতোয়ার মূল স্রোত একটি শাখা নদীর মাধ্যমে বাঙ্গালী নদীর সঙ্গে যুক্ত করে। এতে গোবিন্দগঞ্জ থেকে বগুড়ার দিকে করতোয়া নদীর প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে সরু খালে পরিণত হয়। একদিকে পানিশূন্যতায় প্রবাহ বন্ধ, অন্যদিকে ভরাট আর দখলের ফলে নদীটি এখন মৃত। শহরের ভেতরের যে যেখানে পেরেছে নদীর পাড় দখলে নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছে। শুষ্ক মৌসুমে এ দখল তৎপরতা বেশি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। করতোয়া নদীতে দুই-একটি স্থানে পানি দেখা গেলেও শহর ও শহরতলির প্রায় ২৭ কিলোমিটারে শুধু ড্রেনের কালো পানি বয়ে যায়।

বগুড়া শহরের চেলোপাড়া করতোয়া নদীপাড়ের বাসিন্দা ও কবি জয়ন্ত কুমার দেব জানান, করতোয়া নদী দখল হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রশাসন থেকে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরে আবারো অনেকেই সেই স্থানে অস্থায়ীভাবে ঘর তুলেছেন। নদীতে বর্ষা মৌসুম বা বন্যার সময় ছাড়া পানি দেখা যায় না। নদীর তলায় এখন ড্রেনের কালো পানি দেখা যায়। নদী থেকে প্রতিদিন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অপরিচ্ছন্ন করতোয়া নদী পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বগুড়া জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্র জানায়, শহরের মধ্যে করতোয়া নদীর কয়েকটি স্থানে দখল হয়েছে। নদী দখল হয়ে যাওয়া স্থানে বাড়িঘর, ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। একাধিকবার করতোয়া নদী দখলের সঙ্গে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ৩৫ জন দখলদারের মধ্যে ২৮ জনকে মুক্ত করা হয়েছে। বাকিগুলো মামলা রয়েছে। একই সঙ্গে নতুন করে দখলদারের তালিকা তৈরি হচ্ছে। নতুন দখলদারের বিরুদ্ধেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাজমুল হক জানান, করতোয়া নদী রক্ষায় বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১১ সালে প্রথম পদক্ষেপটি গ্রহণ করা হয়। সে সময় থেকে ‘করতোয়া নদী উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে একটি প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে সবুজ পাতায় রয়েছে। সম্প্রতি করতোয়া নদী উন্নয়ন প্রকল্পটি আবারো সমীক্ষার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ রিপোর্ট পুনরায় সমীক্ষা করে আগামী মার্চ-এপ্রিলে রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে করতোয়া নদীর পরিবেশ দূষণ বন্ধ, শহরের যানজট নিরসনে সড়ক নির্মাণ। করতোয়া নদীর বগুড়া জেলা অংশের শিবগঞ্জ উপজেলার উত্তরের সীমানা থেকে শেরপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত মোট ১২৩ কিলোমিটার এলাকা খনন। একই সঙ্গে খনন করা হবে সুবিল খাল ৩১ কিলোমিটার, ইছামতী নদী ও গজারিয়া খালের ৭৫ কিলোমিটার। নদীর দুই পাড়ের ২৭ কিলোমিটার এলাকায় ২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা ও ৬ ফুট ওয়াকওয়ে নির্মাণ, মাস্টার ড্রেন নির্মাণকাজ, পানি নিয়ন্ত্রণে তিনটি অবকাঠামো নির্মাণ, নদীর দুই পাড়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, পানির ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণকাজ। প্রকল্পের অধীনে ভূমি অধিগ্রহণ থাকবে। এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।