ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, রবিবার

ধুঁকে ধুঁকে মরছে বুড়িগঙ্গা নদী



পরিবেশ

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৭ মাস আগে) ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:১৭ অপরাহ্ন

agribarta

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে চলা ঐতিহাসিক বুড়িগঙ্গা নদী আজ ধুঁকছে দূষণ ও দখলের ভয়াবহতায়। এক সময় যেখান দিয়ে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়ত, আজ সেই নদীতে জমে উঠেছে কালো পানি, ময়লা, দুর্গন্ধ—আর হারিয়েছে তার স্বাভাবিক প্রবাহ ও নাব্যতা। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের দেয়ালে থাকা ছবিগুলোই আজ সাক্ষ্য দেয় এই নদীর গৌরবময় অতীতের।

সদরঘাট, শ্যামবাজার, বাদামতলী, ওয়াইজঘাট ঘুরে দেখা যায়—হাটবাজারের পচা সবজি, হোটেলের ময়লা, শহরের স্যুয়ারেজ পানিসহ প্রতিনিয়ত টনকে টন বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট ময়লার গাড়ি থাকলেও, নিয়মবহির্ভূতভাবে পাড়েই এসব ফেলা হচ্ছে। ঢাকা সিটির ড্রেনেজ লাইন সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ায় বুড়িগঙ্গা এখন শুধু গন্ধযুক্ত কালো পানির এক করুণ দৃশ্যপট।

এছাড়াও নদীর পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান, কারখানা, আবাসন প্রকল্প ও জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র। যার ফলে দিনে দিনে সংকুচিত হচ্ছে নদীর আয়তন ও নাব্যতা। সাকার মাছ ছাড়া জলজ জীবনের আর কোনো অস্তিত্ব এখন প্রায় অনুপস্থিত।

বুড়িগঙ্গাকে রক্ষায় বিগত ১৫ বছরে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে ১২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ফল দেখা না যেতেই ২০১৬ সালে ১৮৮৬ কোটি টাকার আরেক প্রকল্প হাতে নেয় বিআইডব্লিউটিএ। তবে পরিকল্পনার দুর্বলতা ও বাস্তবায়নের গাফিলতিতে প্রকৃত চিত্র থেকে গেছে অপরিবর্তিত। পানি উন্নয়ন বোর্ডও ২০০৪ সালে একটি জরিপ চালিয়ে নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ নদীর মাধ্যমে যমুনার পানি এনে বুড়িগঙ্গা বাঁচানোর পরিকল্পনা করলেও, আজও বাস্তবে তার কিছু দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সাবেক অর্থ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার সুলতান বলেন, নদী তীরবর্তী শিল্পকারখানা সরাসরি বর্জ্য ফেলছে, এটাই বড় দূষণের কারণ। ২০২৩ সালে নদী রক্ষা কমিশন ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে দখলের জন্য দায়ী করে।

স্থানীয় মাঝি ফজলুল হক বলেন, “২৫ বছর আগে নদীর পানি ছিল স্বচ্ছ, গোসল করতাম। এখন পানি ব্যবহার অনুপযোগী—গন্ধে টেকা যায় না।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্যুয়ারেজ লাইনে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন ও দখল উচ্ছেদের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করলেই এখনও বুড়িগঙ্গাকে আংশিক ফিরিয়ে আনা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন।

পরিবেশ থেকে আরও পড়ুন

সর্বশেষ