বঙ্গোপসাগরের পরিবেশ রক্ষায় বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর নিয়েছে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিক ফিশিং ট্রলারগুলোকে সমুদ্রে প্লাস্টিক ও পলিথিনসহ অপচনশীল বর্জ্য ফেলা থেকে বিরত রাখতে চালু হয়েছে এই উদ্যোগ।
প্রায় ২৫০টি বাণিজ্যিক ট্রলার এখন এসব বর্জ্য সাগরে ফেলার বদলে বিশেষ ডাস্টবিনে জমা করে কূলে ফিরিয়ে আনছে। ফলে বছরে ২০–২৫ মেট্রিক টন বর্জ্য সাগর দূষণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
প্রতিটি ট্রলারে ৩০ থেকে ৫০ জন নাবিক প্রায় ১৫ থেকে ৩০ দিন সাগরে অবস্থান করেন। এই সময়ের খাদ্য সরবরাহের প্রায় সবকিছুই পলিথিন বা প্লাস্টিকে মোড়ানো থাকে। আগে এগুলো সাগরেই ফেলে দেওয়া হতো—যার ফলে মাছের প্রজনন, খাদ্য চেইন এবং বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে। মাছের শরীরে প্লাস্টিক চলে আসার ফলে মানবদেহে ক্যানসার, হরমোন সমস্যা বা অন্ত্রের জটিলতাসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসাইন সাগর জানান, নাবিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে একটি সার্কুলার জারি করে ট্রলার মালিকদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করছে বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণে।
বর্তমানে ২৫০টি ট্রলার এই উদ্যোগের আওতায় থাকলেও সাগরে প্রায় ৩০ হাজার যান্ত্রিক নৌযান রয়েছে। ধাপে ধাপে এদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে করে সমুদ্রজীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণ নিশ্চিত করা যায়।
সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক মো. আবদুস ছাত্তার বলেন, "এই উদ্যোগ শুধু প্রশাসনিক নির্দেশে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, এটিকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবেও গড়ে তুলতে হবে।"
এই পদক্ষেপ যদি সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়, তাহলে তা শুধু বাংলাদেশের সামুদ্রিক পরিবেশ নয়, গোটা উপকূলীয় অর্থনীতির জন্য হবে একটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত।
