.jpg)
নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের দাম এখনও কিছুটা চড়া থাকলেও, সামগ্রিকভাবে কৃষিপণ্য সরবরাহ ও দামে স্বস্তি ফিরে এসেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণকারী অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকর সিদ্ধান্ত ও দ্রুত পদক্ষেপের ফলেই বাজারে এ স্থিতিশীলতা এসেছে।
বিশেষ করে ২০২৫ সালের মার্চে রমজান মাসে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম ছিল ভোক্তাদের নাগালে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, উৎপাদন বৃদ্ধি, সার ও ডিজেল সরবরাহ, কৃষি প্রণোদনা ও ভর্তুকির বিস্তৃত কার্যক্রমের কারণে কৃষিপণ্যের বাজারে ভারসাম্য এসেছে।
চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের মজুত ছিল। আগের বছর ডলার সংকটের কারণে সার আমদানিতে সমস্যা হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে সেই সংকট অনেকটাই কেটেছে। ডিজেলের মূল্য হ্রাস এবং কৃষিঋণের পরিধি বাড়ানো কৃষকের খরচ কমাতে ভূমিকা রেখেছে। ফলে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাজারে তা সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছে ১০৯ লাখ টন, যা আগের বছরের তুলনায় চার লাখ টন বেশি। বর্তমানে বাজারে আলুর দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, যেখানে আগের বছর তা ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পেঁয়াজের দামও কমেছে, বর্তমানে ৫০–৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ছিল ৭০–৮০ টাকা। মরিচের দাম ২০০–৪০০ টাকা থেকে নেমে এসেছে ৪০–৫০ টাকায়। শীতকালীন সবজি—যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, শসা, শিমের সরবরাহ বাড়ায় গত ৫–৭ বছরের তুলনায় এবার দাম ছিল তুলনামূলক অনেক কম।
কৃষি সচিব ড. মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, “রোজায় কৃষক থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করে সরকার ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামে ৫০টি ট্রাকের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়েই উপকৃত হয়েছেন।” যদিও কিছু কিছু পণ্যের দাম এতটাই কমেছে যে কৃষকদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তবু সামগ্রিকভাবে বাজারে স্বস্তির আবহ বিরাজ করছে।
২০২৪ সালে আকস্মিক বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ৩৫টি জেলার ২.৯ লাখ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয় প্রায় ১০.৭ লাখ টন, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৬০৪ কোটি টাকা। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ১৫.৯৪ লাখ কৃষক পরিবারকে ২০৬ কোটি টাকার পুনর্বাসন সহায়তা দিয়েছে সরকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের কার্যকর নজরদারির কারণে কৃষিপণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ সঠিকভাবে হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবারের বোরো ধানে বাম্পার ফলন হবে এবং কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবেন।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে কৃষি খাতে সহায়তা নিয়ে চলমান আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগ দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষির দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি করছে।