ঢাকা, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, রবিবার

নদী খননে ২০২ বিঘা কৃষি চাষের উপযোগী



পরিবেশ

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৬ মাস আগে) ১৯ মে ২০২৫, সোমবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৮:৩০ অপরাহ্ন

agribarta

কংস ও ভোগাই-কংস নদ খননের ফলে ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনার ১৩৫ নটিকেল মাইল নৌপথে নাব্যতা ফিরেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ানের কারণে নৌপথের সঙ্গে নদী পারের ৫৫টি হাট-বাজার যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া নদী থেকে খননকৃত মাটি (বর্জ্য) দিয়ে নিচু জমি ভরাট করায় ২০২ বিঘা জমিকৃষি চাষের উপযোগি করা হয়েছে। নৌপথে সবচেয়ে কমখরচে পণ্য পরিবহন করা যাবে। এছাড়াও নৌপথে রয়েছে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা।

দেশের অর্থনীতে বড় ভূমিকা রেখেছে নৌপথ। মানুষের লোভের বলি হয়ে এসব নৌপথ কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। দেশের সব নৌপথ সচল করার নিদের্শনা নিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। বিআইডাব্লিউটিএ বর্তমানে নৌপথ উদ্ধার করা হয়েছে। একই সাথে এ প্রকল্প সরকারের ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। তা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ শিপিং রিপোর্টার ফোরম-এর কর্মকর্তা ও সদস্যের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নৌপথের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সে কারনে নৌপথ খননের ওপরও জোর দেয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খননের নামে কেউ দুর্নীতি করবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। নদী খনন কাজের সুবিধার্থে ৩৫টি ড্রেজার ক্রয় করা হচ্ছে। 

একই সঙ্গে বড় বড় ড্রেজার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে এ সব ড্রেজার বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজার বহরে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার ইনকিলাবকে বলেন, বিআইডাব্লিউটিএ বর্তমানে নৌপথ উদ্ধার করে কাজ করছে। প্রকল্প গুলো থেকে সরকারের ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। তার পর কিছু লোক আমাদের ড্রেজিং সেক্টরের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে প্রকৃত সৎ একজন কর্মকর্তাকে জনসম্মুখে হেয় করা অপচেষ্টা বই অন্য কিছু নয়। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করবো এবং করছি।

জানা গেছে, সরকারের গৃহীত সংস্কারের প্রাথমিক পর্যায়ে ‘৫৩টি নৌপথ ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায়ঃ ২৪টি নৌপথ)’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গৃহীত প্রকল্পের আওতায় গত ২০১৯-২০২০ হতে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে কংস ও ভোগাই কংস নদ ড্রেজিং (খনন) করা হয়েছে। ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ ৭৯ হাজার ১২০ টাকার ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। কংস ও ভোগাই-কংস নদ খননের ফলে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার ১৩৫ নটিকেল মাইল নৌপথে নাব্যতা ফিরেছে। 

এই নৌপথের সঙ্গে নদী পারের ৫৫টি হাট-বাজারযুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া নদী থেকে খননকৃত মাটি (বর্জ্য) দিয়ে ডোবা জায়গা ভরাট করায় ২০২ বিঘা জমিকৃষি চাষের আওতায় এসেছে। যা ওই অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থায় আমুল পরিবর্তন শুরু হয়েছে। মৃতপ্রায় কংস ও ভোগাই-কংস নদড্রেজিংয়ের ফলে বর্তমানে সারাবছর মিলছে পানি। এসব নদীর পানি দিয়ে চলছে জেলা গুলোর কৃষকের সেচে কার্যক্রম। ফলে এলাকার কৃষকেরদের হাতের মুঠোয় পৌঁছে গেছে সেচব্যবস্থা। তাই বেড়েছে কৃষি উৎপাদন এখন মাঠজুড়ে ফসলের হাসি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, নৌপথে ৫টি প্যাকেজে ৭২ লাখ ৯৭ হাজার ৯১.৭৫ ঘনমিটার মাটিড্রেজিং-এর জন্য ব্যয় হয়েছে ১১২ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি বডি সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফর্মেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) ৩য় পক্ষ হিসেবে ড্রেজিং এর আগে ও পরে এবং কাজ চলমান অবস্থায় হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করেছেন।তারা সার্বক্ষণিক ড্রেজিং কাজ মনিটরিং করেছেন। ড্রেজিং এর ফলে কি উপকার বা অপকার হচ্ছে তাও মনিটরিং করা হচ্ছে। ৩য় পক্ষ হিসেবে তারা সঠিকভাবে ড্রেজিংকৃত মাটির পরিমাণও নির্ণয় করেছেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন আরো বলা হয়, কোদাল দিয়ে মাটি কেটে নদী খনন বা মাটি স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না। স্থানীয় বালু দস্যুদের বলগেট ব্যবহার করে কোন ঠিকাদার ড্রেজিং কাজ করেনি। 

নিয়োজিত ৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের ৯টি ড্রেজার প্রায় ৩ বছর ড্রেজিং করে কাজটি সফলভাবে শেষ করেছে। ফলে সরকার আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছে। যা টাকার অঙ্কে ৩০০ কোটি যা কৃষি উৎপাদনে নতুন আশার জোগান দিচ্ছে। এছাড়াও আমিষের অভাব মিটেছে। নদী খননের পর সারা বছর নদীতে মাছ তাদের বংশ বিস্তার করে চলেছে। হারিয়ে যাওয়া অনেক জলজ প্রাণীর দেখা মিলছে। হারিয়ে যাওয়া অনেক মাছই এখন এইসব নদীতে বসবাস করছে। 

নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার সময় পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। খননকৃত মাটি দিয়ে নিচু জায়গা ভরাট করায় সেখানে চাষাবাদের পাশাপাশি গবাদি পশু লালন- পালরে ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ধর্মপাশা থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার পরিবহনের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে শুরু হয়েছে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল। এ ছাড়া ৬ থেকে ১০ ফিট গভীরতা মালবাহী ট্রলারও চলাচল নিশ্চিত করা গেছে। কংসনদ ড্রেজিংয়ের বর্জ্য ব্যবহার করে ফুলপুর খেলার মাঠ, জৈনপুর ও দোবাইল হাওর বাঁধ নির্মিত হয়েছে। 

শুকনো মৌসুমে সেচের পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়ায় ফসলের চাষাবাদ ও কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। এ ছাড়া গাগলাজোড়-ধর্মপাশা-মোহনগঞ্জ, বাঞ্ছারামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০ কিলোমিটার নিচু জায়গা ভরাট করে গবাদি পশুর বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীতে মাছের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মৎস্যজীবী মানুষ পুরোনো পেশায় ফিরে আসছেন। যারা নদীর নব্যতা সংকটে পড়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এদিকে খননকৃত মাটি ডোবা, পুকুরসহ নিচু জমিতে ফেলার কারণে জমির দাম প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। 

কংস ও ভোগাই-কংস নদী ড্রেজিং-এর সফলতা সম্পর্কে সিইজিআইএস, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন, বিভিন্ন এদিকে ড্রেজিং-এর মাটি ব্যবস্থাপনার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় হতে জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে ড্রেজিং-এর মাটি ব্যবস্থাপনা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ক্ষমতা অর্পণ-পিপিআর ২০০৮, সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক বিআইডব্লিউটিএ’র সকল কার্যাদি সদস্য (প্রকৌশল), চেয়ারম্যান এবং কর্তৃপক্ষ সভার সিদ্ধান্তক্রমে বাস্তবায়িত ও সম্পাদিত হয়। 

এক্ষেত্রে একক কোনো ব্যক্তির নিজ ক্ষমতা অপব্যবহার করার সুযোগ নেই। সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মেউয়ারি মধুপুর বাজার গ্রামের বাসিন্দা রানা মিয়া জানান, কংস ও ভাগাইল-কংস নদী নব্যতা হারিয়ে মৃত হয়ে পড়েছিলো। বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং করে ঐতিহ্যবাহী নদীরনাব্যতা এবং নদীর প্রবাহ ফিরিয়েছে। নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার পূর্ব ইদ্রা গ্রামের রফিক মোহাম্মদ জানান, গত ৩২ বছর থেকে খেয়া পারাপারের কাজ করি। 

দু’বছর আগেও নদীশুকিয়ে যেত তখন খেয়া পারাপার না থাকায় বেকার হয়ে পড়তাম। নদীতে পানি না থাকায় সকলেই হোটে মরাগাঙ পার হতো। এভাবে বছরের গুরুত্বপূর্ণ দুমাস আমদের বেকার থাকতে হয়েছে। নদী খনন করার ফলে নদীর নব্যতা ফিরেছে। খেয়ার কদর বেড়েছে।

অপদিকে ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিআইডব্লিউটিএ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম সুনামের সঙ্গে শেষ হয়েছে। ৫৩টি নৌপথ ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায়ে ২৪টি নৌপথ) শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করেছেন। 

এসব সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাছিল করতে না পেরে একটি কুচক্রি মহল আমাকে হেনেস্তা করার মিশনে নামে। চরিত্র হনন এবং ব্যক্তিগত সুনাম নষ্টসহ দাপ্তরিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে আয়কর নথির মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে।

বিআইডব্লিউটিএ প্রধান প্রকৌশলী ( ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদার ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের অধিদপ্তর দেশের নৌ খাতে কাজ করে আসছে। একটি চক্র দেশের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। এসব কাজ উন্নয়ন প্রকল্পের বাধা গ্রস্ত করা ছাড়া কিছু না।

পরিবেশ থেকে আরও পড়ুন

সর্বশেষ