
জয়পুরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় সরিষার খেত থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৌ-চাষীরা। পুরো মাঠ যেন সরিষার হলুদ ফুলের চাদরে ঢাকা। মাঠজুড়ে কেবল সরিষার ফুলের গন্ধ ও মৌমাছির গুঞ্জন।
জেলার বিভিন্ন স্থানে ফসলির জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌ-চাষীরা। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে। জেলায় সবচেয়ে বেশি মৌ-চাষ হচ্ছে সদর উপজেলার পুরানাপৈল, হাতিগাড়া, তুলাট ও জলাটুল এলাকায়। এছাড়া পাঁচবিবি, কালাই, আক্কেলপুর ও ক্ষেতলাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, জেলায় এবার ৩০ টন সরিষা ফুলের মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার হাতিগাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাশের গাইবান্ধা জেলা থেকে আগত আপেল ইসলাম নামে এক মৌ-চাষী তার পছন্দের সরিষা খেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রানী মৌমাছি। রানী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এ চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন মৌ-চাষীরা।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষীরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এ মৌ-চাষের মাধ্যমে চাষীরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এসব সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে।
মৌচাষী নূর ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরিষা খেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করি। অন্য আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষে রাখি। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। আকার ভেদে একটি বাক্সে ২০-৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এখানে মৌচাষের বিশেষ বাক্স কলনি রয়েছে ১০০টি। প্রতিটি কলনিতে খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা। ’
জেলা কৃষি উপপরিচালক রাহেলা পরভীন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার হেক্টর। তবে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে কৃষকের বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ, রাজস্ব প্রদর্শনী ও ফলোআপ কার্যক্রমসহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষককে সহায়তা ও উদ্বুদ্ধকরণের ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর সরিষা আবাদ হয়েছে। সরিষা খেতে মৌমাছির বিচরণ থাকায় ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হয়, ফলে সরিষার ফলনও হয় বেশি।
জয়পুরহাট বিসিকের উপব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৩০ টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ১০০ কৃষককে পরামর্শ ও উৎসাহিত করছি এবং বিগত দিনে মৌচাষের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। যাতে সরিষা খেতে মৌবাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌ-চাষ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।’