agribarta

ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খামারের বিষাক্ত বর্জ্য খালের পানিতে, হুমকিতে কৃষি-মৎস্য চাষ


মৎস্য

কালবেলা

(২ সপ্তাহ আগে) ৬ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন

agribarta

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ-নবাবপুর ইউনিয়নে কোনো নিয়মনীতি না মেনে খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে কয়েকশ মুরগির খামার। এসব খামারের বিষাক্ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। এতে দূষিত হচ্ছে খালের পানি। এ ছাড়াও পানিতে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের নাকে কাপড় দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। খালের দূষিত পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে পারছেন না স্থানীয় কৃষক। দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ছে ফসলের জমিতে। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের, মৎস্য চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। ফলে এসব খামারির বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, পরিবেশদূষণ না করার জন্য খামারিদের বারবার নির্দেশনা দিলেও মানছেন না তারা।

মার্চ মাসের উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় খালে বর্জ্য ফেলার কারণে পানি দূষিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিন।

সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নবাবপুর-আমিরাবাদ ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার এলাকার খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে কয়েকশ মুরগির খামার। খালের দুই পাশে খালপাড় ভরাট করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। মুরগির বর্জ্যে ও ময়লায় খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগে থেকেই। মুরগির বর্জ্যে দূষিত হয়ে পানি কালো হয়ে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

দেখা যায়, খালের পাড়ের খামারী পাইপের মাধ্যমে খামারের বর্জ্য খালে দিচ্ছে এবং খাল থেকে একটু দূরের খামারিও মাটির নিচ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বর্জ্য খালে দিচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, খামারিদের মুরগির বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে খালটি। কৃষকরা আগে তাদের চাষাবাদে খালের পানি ব্যবহার করতেন। এখন সেটি সম্ভব হয় না। তাদের দাবি, বর্জ্যে দূষিত হয়ে খাল-বিল ও জলাশয়কে বিষের খনিতে পরিণত করেছে। এতে কৃষকরা বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করেই চাষাবাদ করতে হয়।

পূর্ব সফরপুর গ্রামের শিক্ষক একরাম উদ্দিন জানান, খালটির দূষণে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। দিনের বেলায় দুর্গন্ধ কিছুটা কম থাকলেও রাতে দুর্গন্ধ বাড়ে। দিনে এবং রাতে প্রচুর মশা দেখা যায়। মহদিয়া গ্রামের কৃষক আফসার উদ্দিন বলেন, পানিদূষণের আগে খালের পানিতে নানা ধরনের দেশীয় মাছ আসত। এলাকার মানুষ সে মাছ ধরত। এখন দূষণের কারণে মাছে তো দূরের কথা, খালের পানিতে ব্যাঙ বা সাপও থাকতে পারে না। এ ছাড়া বর্ষাকালে খালের পানি উপচে ছড়িয়ে পড়ে ফসলের জমিতে। এতে ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে দিন দিন।

সাহেবের হাট এলাকার কয়েকজন মুরগির খামারি এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খামারের বর্জ্য ও পানি সরাসরি খালে ফেলা হয় না। খালের পানিতে নিয়মিত ওষুধ ও চুন দেওয়া হয়। জৈবসার উৎপাদনের কারণে কিছু গন্ধ হয়।

খামারি নুরনবী ও সবুজ জানান, আমরা কয়েকজন খামারি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করেছি৷ সবাই যদি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করে তাহলে খালের পানিতে এত ময়লা হবে না। যারা বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করছে না তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মতে সোনাগাজী উপজেলায় ৫২৩টি মুরগির খামার রয়েছে। যার মধ্যে ৮০ শতাংশ খামার আমিরাবাদ-নবাবপুর ইউনিয়নের খালের পাড়ে অবস্থিত।

নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম বলেন, মুরগির খামারের বর্জ্যে খালের পানি একেবারে দূষিত হয়ে গেছে। এ ব্যপারে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় একাধিকবার বলা হলেও খামারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বছরে এক-দুবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কয়েকজন খামারিকে জরিমানা করা হলেও আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যায়নি। জরিমানার টাকা কম হওয়ায় খামারিরা ভয় পায় না। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরে একাধিকবার জানানোর পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক হিরন বলেন, যেসব খামারি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট না করে খালে বর্জ্য ফেলছে তাদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নিকট লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নেবু লাল দত্ত বলেন, খামারে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এবং খামার বায়োসিকিউরিটির আওতায় নিয়ে আসার জন্য খামারিদের বারবার চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই নির্দেশনা মানছে না। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট না থাকলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট আছে কিনা জরিপ করা হচ্ছে।

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান জানান, খামারের বর্জ্যে খালের পানির অবস্থা খুব খারাপ। পানির দুর্গন্ধে ওই এলাকার মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। কৃষকরাও খালের পানি জমিতে ব্যবহার করতে পারছে না। খামারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।