বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করে সরকারি নীতি বাস্তবায়ন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৬ জন নতুন কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। গত অর্থবছরে এসব নতুন কৃষকদের ৩ হাজার ১১৬ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এদিকে, বিকেবির আরেকটি বড় সাফল্য হলো রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় আহরণ।
চলতি বছরের আট মাসে কৃষি ব্যাংক ১৯৭৬.২১ মিলিয়ন ডলার অর্থ্যাৎ ২৪,৩২৪ কোটি টাকা রেমিটেন্স আহরণ করেছে। সে হিসাবে কৃষি ব্যাংক প্রবাসী আয় সংগ্রহে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে। এরই ধারাবাহিক সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স আহরণে রেকর্ড ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। যে কারণে কৃষি ব্যাংকের বর্তমান অবস্থান আটটি সরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম এবং সব ব্যাংক অর্থাৎ ৬২টি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয়।
এ প্রসঙ্গে বিকেবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্চিয়া বিন্তে আলী বলেন, রেমিটেন্স সংগ্রহে কৃষি ব্যাংকের বর্তমান অবস্থান আটটি সরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রথম এবং সব ব্যাংক অর্থাৎ ৬২টি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয়। রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণ হলো সারাদেশে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ১ হাজার ৩৮টি শাখা এবং ৪টি উপশাখার সবকটি অনলাইনে দ্রুত ও ডিজিটাল সেবা প্রদান করায় প্রবাসী আয় বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। এছাড়া বিকেবি দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, শতভাগ নিরাপদ ও আস্থশীল হওয়ায় রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে বিকেবির দিকেই ঝুঁকছে প্রবাসীরা।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সরকারের কৃষি নীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যা ভর্তুকি সুদে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। প্রণোদনা স্কিমের আওতায় ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ স্বল্প সুদে অধিক সংখ্যক প্রকৃত চাষি ও খামারি উপকৃত হয়েছেন। দেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিকেবি।’
বিকেবি সূত্রে জানা যায়, দেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সাম্প্রতিক অর্থ বছরে কৃষি ঋণ বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে কৃষি ব্যাংক। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে কৃষি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা; যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকায়। চলতি অর্থবছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা।
পাশাপাশি কৃষি ব্যাংক অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিএমএসএমই খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৬৮কোটি টাকা; যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৩৫ দশমিক ১৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৮৯৫ দশমিক ৪২ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লি খাতে ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এটি আগের বছরের তুলনায় ২.৬৩ শতাংশ বেশি, যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্য ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এ বছর রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৩,৮৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে শুধু কৃষি ব্যাংকেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি বছর কৃষি ঋণ নীতিমালায় নতুন বেশকিছু দিকনির্দেশনা যোগ হয়েছে।
