ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমায় রমজানের বাজার নিয়ে শঙ্কা

কৃষি অর্থনীতি/
এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৮ মাস আগে) ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ৮:০৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৭:৪৪ পূর্বাহ্ন

agribarta

দেশে নিত্য ভোগ্যপণ্যের সিংহভাগই আমদানিনির্ভর। ছোলা, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ প্রধান কয়েকটি পণ্যের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় রমজান মাসে। তবে এলসি সংকটে আমদানি কমে যাওয়ায় আসন্ন রমজান অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন হতে যাচ্ছে দেশের ভোক্তাদের জন্য। এখনই উদ্যোগ নেয়া না হলে রোজার আগে পণ্যবাজার নতুন অস্থিরতার দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খোদ ব্যবসায়ীরাই।

ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ। দেশের মোট পণ্যের প্রায় অর্ধেকই নিয়ন্ত্রিত হয় এ বাজার থেকে। আর এসব পণ্য আমদানির সঙ্গে যুক্ত চট্টগ্রামভিত্তিক একাধিক শিল্প গ্রুপ। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের তারল্য সংকট ছাড়াও ডলার সংকটের কারণে আমদানি ভোগ্যপণ্য বন্দর থেকে খালাস করতে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে আসন্ন রোজায় পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে রমজানের নিত্যপণ্য দ্রুত কিনে মজুদ করছেন।

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে পাঁচটি জাহাজ রমজানের জন্য আনা পণ্য নিয়ে ১০ থেকে ৫৮ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় রয়েছে। মূলত ডলার সংকটে এলসির (ঋণপত্র) অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় পণ্য খালাস বন্ধ রেখে বন্দরে অপেক্ষা করছে জাহাজগুলো। খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর পাইকারি বাজারে চিনি, ভোজ্যতেলসহ নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম মণপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। যদিও টানা এক বছর ধরে ধারাবাহিক উত্থানের পর কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছিল আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্যের বাজার। সাম্প্রতিক আমদানি সংকট নতুন করে আবারো অস্থিরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরের সর্বশেষ ছয় মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আগের বছরের (২০২১ সালের) একই সময়ের তুলনায় ২ লাখ ৭ হাজার ৯৪৬ টন কম আমদানি হয়েছে অপরিশোধিত চিনি। এছাড়া ক্রুড পাম অয়েল আমদানি কমেছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৯ টন, ছোলা ১৪ হাজার ১৬৪ টন, খেজুর ৩৯০ টন। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ তিন মাসে এলসি খোলার হার ২৮ শতাংশ কমে ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯ টন। এর মধ্যে ক্রুড সয়াবিন অয়েল ৪৭ শতাংশ কমে হয়েছে ৮৮ হাজার ৭২৪ টন, পরিশোধিত সয়াবিন ২৩ শতাংশ কমে এলসি খোলা হয়েছে ২ হাজার ৩৭৩ টন এবং সয়াবিন সিডস আমদানি ৮৩ শতাংশ কমে ৭৮ হাজার ২০ টন হয়েছে। অপরিশোধিত পাম অয়েলের এলসি ১০০ শতাংশ কমে হয়েছে ২৩০ টন, ছোলা ৪৭ শতাংশ এলসি কমে ৭৫ হাজার ৩১৯ টন এবং খেজুর ৩০ শতাংশ এলসি কমে গিয়ে আমদানি হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৩ টন।

মূলত শেষ অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির এলসির মাধ্যমে আমদানি হওয়া পণ্যগুলোই রোজার সময়ে বাজারে সরবরাহ হবে। তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রোজার জন্য আমদানি করা পণ্যের জোগান কম হওয়ায় এবার পণ্যের সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের সংকট তৈরির আশঙ্কা। পাইকারি বাজারে আমদানিকারক পর্যায় থেকে সরবরাহ আগের মতো না হওয়ায় এরই মধ্যে নতুন করে পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। রোজার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে সাধারণ ভোক্তারা পণ্য কেনা শুরু করলে বাজারে সংকট প্রকট হতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরাও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পণ্য বাজারে রোজার সময় চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। চিনি, ভোজ্যতেল, ডালজাতীয় পণ্য রমজানে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়। পূর্বের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও রোজাকে সামনে রেখে এলসি খুলতে সমস্যা থাকায় কিছুটা সংকটে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার এরই মধ্যে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নির্দেশনাও দিয়েছে। এখনো পণ্য আমদানি শুরু করলে রোজার আগে চাহিদামতো পণ্য আসার সুযোগ আছে।’

ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে বার্ষিক যে পরিমাণ ভোজ্যতেল, চিনির চাহিদা রয়েছে তার প্রায় দ্বিগুণ চাহিদা তৈরি হয় রমজানে। এছাড়া রোজায় বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ ছোলা, ২০-৩০ শতাংশ ডাল ও ৭০-৮০ শতাংশ খেজুরের চাহিদা রয়েছে। ফলে হঠাৎ চাহিদা বাড়ার কারণে রোজার মাসে এসব নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয় দেশের বাজারে। রোজা শুরুর অন্তত দুই সপ্তাহ আগেই বাজারে পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকটি পণ্যের প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা থাকায় খুচরা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়ে যায়। মাঠপর্যায় থেকে পাইকারি বাজারে চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানিকারক ও সরবরাহকারী পর্যায় থেকেও মজুদের মাধ্যমে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এবারের রোজার আগে আমদানি নিয়ে সংকট থাকায় দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান না করলে বাজার অস্থিরতার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকার মেসার্স হাটহাজারী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য বাজার সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা স্থিতিশীল। তবে আসন্ন রোজায় বাড়তি চাহিদার কারণে পণ্যবাজারে সংকটের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।’ এ কারণে এখন থেকে অনেকেই পণ্য মজুদের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।