
ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব, কম বাজারদর, নাজুক সেচ ব্যবস্থাসহ নানা প্রতিকূলতায় গমের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন নড়াইলের কৃষকরা। এখন প্রতি বছর এ জেলায় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে গমের আবাদ। পাঁচ বছরে জেলায় গমের আবাদ বেড়েছে অন্তত ২৫ শতাংশ। সব ঠিক থাকলে এবারো বাম্পার ফলনের আশা করছেন নড়াইলের প্রান্তিক কৃষকরা।
জানা গেছে, বছর দশেক আগে নড়াইলের তিন উপজেলায় অন্তত পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে গমের চাষ হতো। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় গমের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এ জেলার কৃষকরা। সে সময় গম চাষ মারাত্মকভাবে কমে গেলেও ২০১৮ সাল থেকে আবার গমের আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা এবং সংখ্যাটা বাড়ছে প্রতি বছর। সে বছর আবাদ হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। পরের বছর প্রায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টরে। ২০২০ সালে জেলায় গমের আবাদ হয় ১ হাজার ৭৬৬ হেক্টরে, যা ২০২১ সালে বেড়ে ১ হাজার ৮৮৫ হেক্টরে পৌঁছায়। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৬০ হেক্টরে।
এ বছর জেলায় গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৮৫ হেক্টরে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গমের আবাদ হয়েছে ২ হাজার ১২০ হেক্টরে। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরে এ জেলায় গমের আবাদ বেড়েছে অন্তত ২৫ শতাংশ। সব ঠিক থাকলে এ বছরও গম চাষে লাভবান হওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।
সদর উপজেলার আউড়িয়া গ্রামের কৃষক আতিকুর রহমান জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় গম চাষে খরচ বেশি। সে অনুযায়ী বাজারে দাম পাওয়া যায় না। রোগবালাই যাতে কম হয়, সেজন্য গমের যত্ন নিতে হয় বেশি। তাছাড়া সেচ ব্যবস্থা ভালো নয়। এসব কারণেই মূলত গমের চাষ কমে গেছে। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গম চাষে বাম্পার ফলন হবে। বাজারদরও এখন ভালো। দাম কমে না গেলে কৃষক লাভবান হবেন।
লোহাগড়া উপজেলার মরিচপাশা গ্রামের কৃষক সুমন মোল্ল্যা জানান, বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ গম ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গমের দাম বেশি হওয়ায় আট বছর পর এবার ১২ কানি (৩৬ শতক) জমিতে আবাদ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আগামী বছর অন্তত এক একর জমিতে গমের আবাদ করার ইচ্ছা আছে।
কালিয়া উপজেলার চাচুড়ী গ্রামের কৃষক তমিজ শেখ বলেন, ‘বর্তমানে সার ও তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাই আবাদ খরচও আগের তুলনায় বেশি। আশা করছি গত বছরের থেকে বেশি দামে গম বিক্রি করতে পারব।’
লোহাগড়া উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক তজিবর শেখ বলেন, ‘নড়াইলে একসময় মাঠের পর মাঠ গম আবাদ হয়েছে। এখন আর সে চিত্র চোখে পড়ে না। কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে গমের চাষ বাড়তে শুরু করেছে দেখে ভালো লাগছে। আশা করি কৃষক গমের ন্যায্যমূল্য পাবেন।’
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ দীপক কুমার রায় বলেন, ‘ জেলায় সাধারণত উচ্চফলনশীল বারি গম-৩২ ও ৩৩ এবং ডব্লিউএমআই-২ জাতের আবাদ বেশি হচ্ছে। এই জাতের গমের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো এবং ফলন বেশি। ধান থেকে গমে সেচের পরিমাণ কম লাগে। তুলনামূলক গমের আবাদ লাভজনক। গমের বাজার দামও ভালো। তাই মাঝে গমের আবাদ কমে গেলেও এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে। চলতি মৌসুমে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭৭৬ টন।