agribarta

ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূমি আইন লঙ্ঘন করে পুকুর খনন, কৃষি জমির সর্বনাশ


কৃষি

ইত্তেফাক

(২ সপ্তাহ আগে) ৬ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

agribarta

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন করে অবাধে উর্বর ও তিন ফসলি জমি কেটে দিনে-রাতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। আইনের তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। বিশেষ করে রমজান মাসের শুরু থেকে প্রায় শতাধিক অবৈধ পুকুর খনন করা হয়ে গেছে।

এদিকে সচেতন জনেরা মনে করছেন, স্বার্থান্বেষী মহলের পুকুর খনন বন্ধ করতে হলে সাধারণ লোকজনসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যমতে আসতে হবে। নয়তো শেষ অবদি একটি পুকুরও আটকে থাকবে না।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বির্স্তীর্ণ মাঠে-মাঠে পুকুর খনন করা হচ্ছে। আগে সাধারণত রাতে খনন করতেন। উপজেলার আট ইউনিয়নেই পুকুর খনন চলছে। সবচেয়ে বড় বড় পুকুর খনন করা হচ্ছে নওগাঁ ইউনিয়নের মাঠে-মাঠে। কোনো কোনো পুকুরে রাতে পাঁচটি ভেক্যু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়। দিনে একটি দিয়ে খনন করেন। রাতের খনন কাজের শেষে একটি মেশিন পুকুরে রেখে বাকিগুলো পুকুরের আশ পাশের বাড়িতে আড়ালে রেখে দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে প্রান্তিক কৃষক মনছুর রহমান, সুলতান মাহমুদ, ছোহরাব আলী, শামসুল হক, ছাবেদ আলী, জুরান আলী, মজিবর মল্লিক, রেজাউল করিম, জহুরুল ইসলাম, আব্দুল মোতালেব, শাহাদত হোসেন বলেন, সাধারণ কৃষকের কথা চিন্তা না করে যাদের জমি বেশি তারা অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র পুকুর খনন করছেন। এসব পুকুরের পাড় ঘেষে আমাদের যেটুকু জমি রয়ে গেল তাতে নিশ্চিত জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। ফসলের আবাদ করে খেতে পারব না।

তাড়াশ থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলছেন, অবৈধভাবে পুকুর খনন করার অপরাধে জমির মালিকদের বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছেন ১১টি। ডিবি বাদী হয়েছেন ১টি মামলার। অন্য ১২টি মামলার বাদী ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তারা। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪১ জনকে। এরা অধিকাংশই জমির মালিক। মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন। আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

জানা গেছে, অবৈধ পুকুর খননে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন নওগাঁ ইউনিয়নের বাবু তালুকদার, আলাউদ্দীন, আলম, শফি, শামিম হোসেন, আলী, আফছার, আকিব্বর, খাজা ও আফজাল হোসেন। এদের খননকৃত কোনো কোনো পুকুর ২০ থেকে ৬৭ বিঘা আয়তনের।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খালিদ হাসান বলেন, এ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা ও বেশ কয়েক জনকে জেল দেওয়া হয়েছে। তারপরও অবৈধ পুকুর খনন বন্ধ করা যাচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছোট বড় ১৫শ ৮৬ টির মতো পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে আবাদি জমি কমেছে ৮শ ১৫ হেক্টর। একইসঙ্গে শস্য ভাণ্ডার হিসাবে খ্যাত তাড়াশ উপজেলায় খাদ্য উৎপাদন ব্যাপক হারে কমতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, গত মাসের আইন-শৃঙ্খলা সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তাড়াশে আর একটি পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না। বরং পুকুর থেকে ভেক্যু মেশিন রয়েছে জব্দ করে আদালতে পাঠানো হবে।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুইচিং মং মারমা বলেন, অধিকাংশ পুকুর রাতে খনন করা হয়। আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে।