ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার

বাকৃবির সেরা ৫ গবেষণার বিষয়গুলো



ক্যাম্পাস

বাকৃবি প্রতিনিধি:

(৩ দিন আগে) ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

agribarta

দেশের অন্যতম প্রধান কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, ও কৃষি প্রকৌশলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণায় এই বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজারটির বেশি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। গবেষণার এই প্রযুক্তিগুলো কৃষকের কাছে পৌঁছানোর কারণে কৃষির উৎপাদন বেড়েছে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা গবেষণারগুলোরধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ থাকছে প্রথম  পর্ব। এ পর্বে থাকছে সেরা ৫ গবেষণার বিষয়গুলো।

বাউ কুল: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল জাদুঘর খ্যাত বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার হতে অবমুক্ত হয় জাতটি। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বত্র এটার চাষ হচ্ছে। অধিক লবণাক্ত জায়গা যেমন-মংলা, শরনখোলা, মোড়লগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চল; বালু জায়গা যেমন- সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া দ্বীপ, টেকনাফ, কক্সবাজার, মংলা, আবার পাহাড়ি এলাকা যেমন- রাংঙ্গামাটি সর্বত্র এটার চাষ হচ্ছে। দ্রুত ফলনশীল, লাগানোর ৪-৫ মাসেই কাঙ্ক্ষিত ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। বাকৃবি জার্মপ্লাজম সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. এমএ রহিম জাতটির উদ্ভাবন করেন। বিশ্বের ৬০টির দেশ বাউকুল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জাতটি ছড়িয়ে গেছে। এর বিনিময়ে তারা বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থও দেয় মেধাস্বত্বের মাশুল হিসেবে।

বাউ ধান-৩: ব্লাস্ট ও লিফব্লাইট প্রতিরোধী এবং বোরো মৌসুমে চাষ উপযোগী উচ্চফলনশীল আগাম ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। নতুন এই জাতের ধানের নাম রাখা হয়েছে বাউ ধান-৩। গবেষক অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বর্তমানে ইউজিসি প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ধানের এ জাতটি  দেশে জনপ্রিয় ব্রি ধান-২৮ এর বিকল্প হতে পারে বলে দাবি গবেষক ড. লুৎফুল হাসানের। 

নতুন উদ্ভাবিত জাতটি সম্পর্কে অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, বর্তমানে ধানের নেকব্লাস্ট আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ধান উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের ধানের উৎপাদন ঠিক রাখতে হলে বিকল্প জাতের দরকার হবে। এই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) থেকে একটি ‘কৌলিক সারি’ এনে এসিআইয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গবেষণা করা হয়। ব্লাস্ট ও লিফ ব্লাইট প্রতিরোধী এবং ফলন ব্রি ধান-২৮ থেকে বেশি হওয়ায় বাউ ধান-৩ নামে অবমুক্ত করা হয়। 

বাউ ব্রয়লার: দেখতে হুবহু দেশি মুরগির মতো, কিন্তু শারীরিক বৃদ্ধি ব্রয়লার বা বিদেশি কোনো জাতের মুরগির মতোই। এমন জাতের মুরগি উদ্ভাবন করেছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। এই মুরগিই এবার ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে। এই মুরগি পালন করে সফল হয়েছেন অনেক খামারি। মাত্র ৪০-৪২ দিনে এই মুরগির ওজন ১ কেজি ছাড়িয়ে যায়। সারাদেশের মতো সিরাজগঞ্জেও জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই মুরগি। জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ আলী এবং অধ্যাপক ড. মো. বজলুর রহমান মোল্লা দীর্ঘদিন গবেষণা করে ‘বাউ ব্রো মুরগি বা বাউ মুরগি’ নাম দিয়ে নতুন জাতের দুটি স্টেইন বা জাত উদ্ভাবন করেন। উদ্ভাবিত জাত দুটির নাম রাখা হয়েছিল বাউ-ব্রো-হোয়াইট ও বাউ-ব্রো-কালার। 

বাউ এসটিআর ড্রায়ার: প্রচলিত পদ্ধতিতে ধানকে চাল এবং চালকে ভাত করে খাবার টেবিলে পৌঁছাতেই ১৪ ভাগই অপচয় হয়। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ধান শুকাতে প্রচুর দুর্ভোগও পোহাতে হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে বিএইউ-এসটিআর ড্রায়ার (ধান শুকানো যন্ত্র)। বিদ্যুৎ ব্যবহারে এ যন্ত্রটিতে মাত্র ৭৪ পয়সায় ১ কেজি ধান শুকানো যাচ্ছে। জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহারে যন্ত্রটিতে মাত্র ৮৭ পয়সায় প্রতি কেজি ধান শুকানো যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ড্রায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে- এ ড্রায়ারে মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় ৫০০ কেজি ধান শুকানো যায়। আর ধান বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতাও থাকছে প্রায় ৯০ ভাগ। ধান শুকানোর যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা ও তার গবেষক দল এবং গবেষণা প্রকল্পের ইন-কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ছিলেন অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল আলম।

বাউ সয়েল টেস্টিং কিট: বাউ সয়েল টেস্টিং কিটের মাধ্যমে মাটিতে কী পরিমাণ সার দিতে হবে, তা খুব সহজেই জানা যায়। এই যন্ত্রের ব্যবহারও খুব সহজ। কৃষক মাঠে থেকেই এ পরীক্ষা করতে পারেন। এ কিট দিয়ে মাটি অম্ল না ক্ষারীয়, তা জানা যায় এবং ফসলের দরকারি নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, সালফার, ফসফরাস, অন্যান্য উপাদানসহ অণুজীবের পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। এতে পরিমিত রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির গুণাগুণ অক্ষত থাকে এবং ফলন ভালো হয়। টেস্টিং কিটের মাধ্যমে মাটি পরীক্ষা করে মাটি ও ফসলের চরিত্রানুযায়ী রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে সুফল পাচ্ছেন কৃষকেরা। আর মাত্রাতিরিক্ত সার প্রয়োগ করতে না হওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচও কমেছে। গবেষণার প্রধান গবেষক ও বাকৃবির কৃষি অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. জহির উদ্দিন বলেন, ‘বাউ সয়েল টেস্টিং কিট’ এর মাধ্যমে মাটিতে কী পরিমাণ সার দিতে হবে, তা খুব সহজেই জানা যায়। কৃষক মাঠে থেকেই এ পরীক্ষা করতে পারবে। মাটিতে পুষ্টি কম থাকলে সার বেশি দিতে হবে। একারণে সারের খরচ বাড়লেও ফলন বেশি হওয়ায় লাভ বেশি হবে।