agribarta

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদী হত্যার আয়োজনের আর কী বাকি


কৃষি

প্রথম আলো

(১ সপ্তাহ আগে) ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ৪:১২ অপরাহ্ন

agribarta

একেকটা নদী মানে একেকটা জনপদের জীবিকার বড় উৎস। নদী ছাড়া পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও কৃষি সুরক্ষা কল্পনা করাই অসম্ভব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নদী বলতে আমরা যা বুঝি, তার অস্তিত্ব কি এখন আছে? সোমেশ্বরী, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনাসহ আরও অনেক নদীর নানা অংশের দিকে তাকালে বোঝা যায়, এখানে নদী তার চরিত্র হারিয়ে স্রেফ বালুমহালে পরিণত হয়েছে। কৃষক, জেলে, মাঝি নন, দেশের নদ-নদীর সুফলভোগী এখন বালুখেকো ও দখলদারেরা। এখানে স্থানীয় প্রশাসনের যা করণীয়, তা মোটাদাগে অনুপস্থিত।

জামালপুর শহর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুটি বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতারাই হচ্ছেন বালুমহাল দুটির ইজারাদার। তবে বালুমহাল দুটি থেকে বালু তুলতে গিয়ে নদটিকেই হত্যা করছেন তাঁরা।

বালু উত্তোলনকারীরা ব্রহ্মপুত্র নদের এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তাঁদের বালুখেকো বললে অত্যুক্তি হবে না। নদের বুক খুঁড়ে তুলে নেওয়া হচ্ছে শত শত ট্রাক বালু। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যত্রতত্র বড় বড় পুকুর ও ডোবার সৃষ্টি হয়েছে। নদের মাঝখানে ও তীরে বিশাল বিশাল বালুর স্তূপ। এককালের খরস্রোতা নদটির ক্ষতবিক্ষত দশা দেখে মনে হয়, ব্রহ্মপুত্র এখানে যেন নদ নয়, কেবলই বালুমহাল।

বালু তোলার জন্য ইজারাদারদের কিছু শর্ত দিয়ে থাকে জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেসব শর্ত আদৌ মানা হয় না এবং এর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, তা ব্রহ্মপুত্রের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। শর্ত ভঙ্গ করে ইজারাদারের বদলে বালু তুলছেন ব্যবসায়ীরা। বালুমহালে টোল আদায় করার সুযোগ না থাকলেও প্রকাশ্যেই তা করা হচ্ছে। আরও ভয়াবহ হচ্ছে, অননুমোদিত খননযন্ত্রে তোলা হচ্ছে বালু।

ইজারা দেওয়ার আগে বালু ব্যবসায়ীরা লুকিয়ে বালু তুলতেন। তখন বালু তোলার পরিমাণ ছিল কম। এখন নামমাত্র মূল্যে বালুমহাল ইজারা দেওয়ার পর প্রকাশ্যে দিন-রাত বালু তুলে নদটিকে মরা খালে পরিণত করে ফেলা হয়েছে। অপরিকল্পিত বালু তোলায় নদ ভাঙতে ভাঙতে মহাসড়কের একদম কাছে চলে এসেছে। মহাসড়ক, মানুষের ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানালে বালু ব্যবসায়ীরা তাঁদের হুমকি দিচ্ছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের সব নদ-নদীতেই কেন বালুমহাল করতে হবে? বেপরোয়াভাবে বালু তোলার কারণে নদীর সর্বনাশ হয়ে যাওয়ার পরও কেন বালুমহাল বন্ধ করা হচ্ছে না? কেন ইজারাদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয় না জেলা প্রশাসন। আশা করি, জামালপুর প্রশাসন কাজেকর্মে এসব প্রশ্নের উত্তর দেবে। নদী তদারকির অভিভাবক জেলা প্রশাসন ব্রহ্মপুত্রকে যথাযথভাবে সুরক্ষা দেবে, সেটিই আমরা চাই।