দুই মাস বন্ধের পর ফের পোনা উৎপাদনে যশোরের ২৫ হ্যাচারি

সমকালীন কৃষি/
এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(১০ মাস আগে) ৭ মে ২০২৩, রবিবার, ৭:৩১ পূর্বাহ্ন

agribarta

মার্চ মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত রেণু পোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। কিন্তু দুই মাস ধরে বয়ে যাওয়া তীব্র দাবদাহে ডিম উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যে কারণে চলতি মৌসুমে রেণু পোনা উৎপাদন কম হবে। এবার পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ কেজি। গত বছরও উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার কেজি।

দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ রেণু পোনা যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। অথচ নানা কারণে যশোরের চাঁচড়া মৎস্যপল্লীতে হ্যাচারির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। গত বছরও ৩৪টি হ্যাচারিতে রেণু উৎপন্ন হয়, কিন্তু এবার ২৫টি হ্যাচারি উৎপাদনে গেছে। বাকি হ্যাচারিগুলোয় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পাঁচ বছর আগেও এখানে ৭৮টি হ্যাচারি ছিল।

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে যশোরে ৩৪টি পোনা হ্যাচারি দুই বছর বন্ধ রাখা হয়েছিল। ভরা মৌসুমে উৎপাদনে যেতে না পারায় তখন রেণু পোনা খাতের উদ্যোক্তাদের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানিয়েছিলেন হ্যাচারি মালিকরা।

রেণু পোনা উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা ভাইরাস, শ্রমিক সংকট, পোনার দাম কমে যাওয়া এবং বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দুই বছর হ্যাচারিগুলো বন্ধ করতে তারা বাধ্য হয়েছিলেন।

যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ও ফাতিমা হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী ফিরোজ খান বলেন, ‘যশোরে গত বছর আমরা ১ লাখ ২০ হাজার কেজি রেণু পোনা উৎপাদন করেছিলাম।এ বছর লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। কেননা মৌসুমের শুরুতে দুই মাস ধরে চলেছে তাপপ্রবাহ। এতে ডিম উৎপাদন সম্ভব হয়নি। তার পরও ২৫টি হ্যাচারি উৎপাদন শুরু করেছে। উৎপাদনের গেলেও আমরা বিদ্যুৎ বিল ও পোনার হরমন ইনজেকশন পিজি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কেননা আগে আমরা বিদ্যুৎ বিল দিতাম কৃষিতে। এখন সেখানে দিতে হচ্ছে শিল্প রেটে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এছাড়া মাছের হরমন ইনজেকশন পিজি আগে প্রতি পিস ছিল ৮ টাকা, সেখানে এখন কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়।’

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রেণু পোনা উৎপাদনে যশোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেলায় ২৫টি হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে কার্প জাতীয় রেণু পোনা উৎপাদন ৬৪ দশমিক ৮৬ টন। জেলায় রেণু পোনার চাহিদা ১৫ দশমিক ২৩ টন। উদ্বৃত্ত ৪৯ দশমিক ৬৩ টন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। তেলাপিয়া পোনা ১০১ দশমিক ৪০ মিলিয়ন উৎপাদন হচ্ছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে ৯৮ দশমিক ৮৫ টন। তেলাপিয়ার উদ্বৃত্ত ৬ দশমিক ৫৫ টন। পাঙাশ রেণু উৎপাদন ৩ দশমিক ৬২ টন এবং শিং, মাগুর, পাবদা, গুলসা রেণু উৎপাদন শূন্য দশমিক ৮৫ টন।

যশোরে মোট ৫১টি বাঁওড় রয়েছে। যার আয়তন ১৮ হাজার ৮৪ হেক্টর। মূলত এসব বাঁওড় থেকে মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত মাছ দেশের অর্ধেক চাহিদা মেটানো হয়।

যশোরের হ্যাচারিগুলো রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, বিগহেড, থাই সরপুঁটি, মিরর কার্প, জাপানি, চিতল, আইড়, তেলাপিয়া, মনোসেক্স তেলাপিয়া, শিং, কৈ, থাই কৈ, পাঙাশ প্রভৃতি মাছের পোনা উৎপাদন করে। জেলার দুই লাখ মানুষ মাছ উৎপাদন, চাষ ও সংশ্লিষ্ট পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।

জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, ‘সবসময় আমাদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রেণু পোনা উৎপাদন করতে হয়। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ব্যাহত হয় রেণু পোনা উৎপাদন। করোনার প্রভাবে দুই বছর উৎপাদন করতে পারলাম না। এতে এ খাতের সঙ্গে জড়িত ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারো প্রচণ্ড তাপদাহে উৎপাদন কম হবে।’

মাছচাষী অহিদুল্লাহ লুলু বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহের প্রভাবে রেণু উৎপাদন বন্ধ ছিল। ফলে নতুনভাবে সেভাবে উৎপাদন হবে না। কেননা সামনে চাহিদা কমে যাবে।’

এ বিষয়ে যশোর জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রভাব আমাদের মৎস্য সেক্টরে পড়েছিল। এবারো মৌসুমের শুরুতে ছিল তাপদাহ। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ডিম উৎপাদন করা যায় না। তার পরও রেণু পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। ব্যবসায়িক মন্দাসহ নানা কারণে অনেক হ্যাচারি বন্ধ রয়েছে।’