সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও ন্যায্য অধিকার রক্ষার সংগ্রাম ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে, শিক্ষকদের নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষত, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ কে এম জাকির হোসেনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার পরিবর্তে বারবার তাদের বিরোধিতা করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ড. জাকির হোসেন তাদের দাবির প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন না করে বরং তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষ করে, ৪ আগস্ট ২০২৪ সালে শেখ হাসিনাতেই আস্থা (শান্তি) মিছিলে তিনি নেতৃত্ব দেন, যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালানো হয় এবং অনেক নিরীহ শিক্ষার্থী প্রাণ হারায়। এই মিছিলে অংশ নেওয়া তার অবস্থানকে আরও বিতর্কিত করে তুলেছে।
তার উপর আরও সমালোচনা এসেছে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির বিরুদ্ধে সাক্ষর দেওয়ার মাধ্যমে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির পক্ষে অবস্থান নিচ্ছিলেন, ড. জাকির হোসেন তখন শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে গিয়ে ড. ইউনুসের বিচারের দাবিতে সাক্ষর করেন। তার এই পদক্ষেপ নৈতিকতার গুরুতর প্রশ্ন তোলে এবং তাকে শিক্ষকদের দায়িত্ব ও নৈতিকতার চরম বিচ্যুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক মিছিলে তার সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা করার বিষয়টিও প্রবল সমালোচিত। যখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করছিল, তখন ড. জাকির হোসেন তাদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করেন এবং শিক্ষকদের প্রাথমিক দায়িত্ব ভুলে যান। শিক্ষার্থীদের অধিকারের বিরুদ্ধে এমন অবস্থান নেওয়ার ফলে তার ভূমিকা গভীর সমালোচনার মুখে পড়েছে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালেয়র উপাচার্যরা যখন শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সরে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু ড. জাকির অজ্ঞাত স্থান থেকে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম প্রদান করেছে, কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে এবং অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।
ক্যাম্পাসের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপাচার্যদের পদত্যাগ না করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমও স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে গভীর অস্থিরতা বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বলেন, "লজ্জা থাকলে, তাকে দ্রুত এই পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিক্ষকদের নৈতিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত, যা তিনি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।"
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তার নৈতিক অবক্ষয় ও দায়িত্বহীন নেতৃত্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন একজন ব্যক্তির ভিসি পদে বহাল থাকা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে এখন সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ কে এম জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তিনি কোথাও কোনো মন্তব্যও দেননি।