মোখা থেকে ধান-আম বাঁচাতে হবে এখনই

সম্পাদকীয়/
ইফতেখার মাহমুদ

(১০ মাস আগে) ১৩ মে ২০২৩, শনিবার, ৭:২৪ পূর্বাহ্ন

agribarta

ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের কক্সবাজার উপকূলের যে দিকটায় আঘাত করতে পারে, সেখানকার অধিবাসীদের নিয়ে সবাই চিন্তিত। বিশেষ করে টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরের অধিবাসী এবং স্থানীয় বাঙালি ছাড়াও সেন্ট মার্টিনসহ আশপাশের দ্বীপের অধিবাসীদের নিয়ে চিন্তা রয়েছে।

ঝড়ের সময় ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতির বাতাস আর ভারী বৃষ্টি হলে বিপদ আরও বাড়বে। কিন্তু মানুষের ওই বিপদের সঙ্গে বোরো ধান আর বছরের সবচেয়ে সুমিষ্ট ফল আম-কাঁঠাল নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়ে গেছে।

এবারের গ্রীষ্মের গরমের কষ্টের সঙ্গে একটি সুখবরও জানা গিয়েছিল। টানা গরমের ফলে এবার বোরো ধান ৮ থেকে ১০ দিন আগে পেকে গেছে। দেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও সাতক্ষীরার আম পাকতে শুরু করেছে। তবে কাঁঠাল এখনো সামান্যই পেকেছে। আর ঠিক এ সময়ে এসে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ দেশের কক্সবাজার উপকূলের দিকে আসি আসি করছে। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে আসা বৃষ্টি ও বাতাসের গতির যে পূর্বাভাস এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মানুষের পাশাপাশি ধান ও আমের ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

কৃষি মন্ত্রণালয় বলেছে, এবার ২ কোটি ২০ লাখ টন বোরো ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু অঞ্চলে ৭০ থেকে ৮০ লাখ কাটা হয়েছে। তবে টেকনাফ ও কক্সবাজার এলাকায় ধান পুরো পাকেনি।

এ পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও আবহাওয়া অধিদপ্তর যৌথভাবে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বোরোতে ৮০ শতাংশ পেকে যাওয়া ধান কেটে ফেলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেটে ফেলা ধান পরিবহন করে নিরাপদ স্থানে রাখা না গেলে জমির এক পাশে প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। গাছে পরিপক্ব হওয়া সবজি ও ফল দ্রুত পেড়ে ফেলতে হবে। আর জমিতে সেচ, কীটনাশক ও সার দেওয়া বন্ধ রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে কৃষকেরা নিশ্চয়ই তা মানবেন। অনুসরণ করবেন। কিন্তু পাকা আম ও ধান তাঁরা কোথায়, কীভাবে নিরাপদে রাখবেন। সেটা নিয়েও ভয় আর দুশ্চিন্তা কাটেনি।

ঝড় আসতে আরও এক-দুই দিন বাকি আছে। এরই মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় এখনো ধান পুরোপুরি পাকেনি। হাওর ও চলনবিল এবং উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকার ধান কাটা শেষের দিকে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সম্ভাব্য জায়গা দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ধান এখনো পাকার উপযোগী হয়নি। ওই ধানগুলো কেটে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরানোর জন্য এখনই দ্রুত সিদ্ধান্ত এবং উদ্যোগ নিতে হবে।

কারণ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা এবং সাতক্ষীরার আমও পাকতে শুরু করেছে। ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতির বাতাস এবং মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হলে ওই আধপাকা আম ঝরে পড়ার আশঙ্কা আছে। এ পরিস্থিতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কোনো গাছের কয়েকটি আম পাকলেই বাকিগুলো পেড়ে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাতাসে ঝরে পড়া আম দ্রুত সংগ্রহ করে স্তূপ করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য বলেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার আগে পাকা আম দ্রুত গাছ থেকে সংগ্রহ করে তা দেশের ঝড় থেকে নিরাপদ জেলাগুলোতে সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য বিশেষ ট্রেন ও ট্রাকের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। কোভিডের সময় সরকার থেকে রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ ধরনের বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আম প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করে ওই আমগুলো কেনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এর ফলাফলও পাওয়া গিয়েছিল। কোভিড সংক্রমণের প্রথম দুই বছর ২০২০ ও ২০২১ সালে ওই উদ্যোগ বেশ কাজেও লেগেছিল।

দুই বছর ধরে ধান ও আম-কাঁঠালের ভালো দামের কারণে এ বছর এসব ফল-ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এ বছর ২৪ লাখ ৫০ হাজার টন আম ও ১৪ লাখ টন কাঁঠালের উৎপাদন হবে। এর মধ্যে কাঁঠাল এখনো খুব বেশি পাকেনি। কিন্তু দেশের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এলাকার আম পেকে গেছে, যার বড় অংশ উপকূলীয় জেলাগুলোর। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় ফল-ফসলের বিপদকেও আমলে নিতে হবে।

ঝড় শুরু হওয়ার আগে-ভাগে জরুরি ভিত্তিতে পেড়ে নেওয়া আমগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে হবে। এ জন্য ট্রেনের বিশেষ বগির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি বিশেষ ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলতে দিতে হবে। এ জন্য ফেরি ও মহাসড়কে এসব খাদ্যবাহী যানবাহনকে দ্রুত যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। অযথা হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, গত বছর হাওরের ফসলহানির দুর্ভোগ এখনো আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে। ওই বছর বোরোতে ধানের ক্ষতির পর চালের দাম একলাফে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে যায়, যা কমাতে এ বছরের বোরোর ফসল ওঠা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। দেশের দরিদ্র মানুষের সারা বছরের পুষ্টির অন্যতম জোগান আসে গ্রীষ্মকালীন আম-কাঁঠাল থেকে। এখানেও উৎপাদন কম হলেও তা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।