ঢাকা, ২১ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার

নতুন প্রজাতির মথ আবিষ্কৃত বাংলাদেশে



গবেষণা

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৪ মাস আগে) ২৬ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ৬:০৩ অপরাহ্ন

agribarta

প্রাণীবিজ্ঞানী দম্পতি মো. জহির রায়হান এবং সায়েমা জাহান চট্টগ্রামের একটি ল্যাবে মথ পালন এবং গবেষণা করেছেন। তারা ছয় মাসের গবেষণার পর নতুন মথের একটি প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন, যার নামকরণ করা হয়েছে প্যারাক্সিনোয়াক্রিয়া স্পিনোসা (Paraxenoacria spinosa)।

প্যারাক্সিনো শব্দটি গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ অদ্ভুত বা অস্বাভাবিক। আর আক্রিয়া হলো একটি মথের গণ। সাধারণত আক্রিয়া গণের মথগুলোর সামনের ডানায় এক্সকাভেশন থাকে, কিন্তু রায়হান ও সায়েমার আবিষ্কৃত এই মথের পেছনের ডানায় এটি অবস্থিত। এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই তারা এটিকে 'অদ্ভুত আক্রিয়া' বা প্যারাক্সিনোয়াক্রিয়া নামকরণ করেছেন।

প্রজাতির নাম 'স্পিনোসা' শব্দটি 'স্পাইন' (কাঁটা) থেকে এসেছে, কারণ এই মথের পুরুষের যৌনাঙ্গে ছয় থেকে সাতটি লম্বা কাঁটা রয়েছে, যা এটিকে বিশেষ করে তোলে। রায়হান বলেন, “প্রকৃতির প্রতিটি জীবের জন্য একটি বৈজ্ঞানিক নাম থাকা জরুরি। এটি বিজ্ঞানীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ভাষার মতো কাজ করে।”

বৈজ্ঞানিক নামকরণের ক্ষেত্রে গণ হলো নাম এবং প্রজাতি হলো বিশেষণের মতো। যেমন, মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হল হোমো সেপিয়েন্স (Homo sapiens), যেখানে হোমো মানে মানব এবং সেপিয়েন্স মানে বুদ্ধিমান।

জীবজগতের বিভিন্ন প্রজাতিকে তাদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যা বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রায়হান ২০১৮ সালে মথ নিয়ে কাজ শুরু করেন, কারণ মথ ও প্রজাপতি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জীববৈচিত্র্য। তাদের মধ্যে অনেক বৈপরীত্য রয়েছে—কিছু মথ রেশম তৈরি করে আবার কিছু ফসলের জন্য ক্ষতিকর।

রায়হান ও সায়েমা ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণীবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর রায়হান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্টোরিতে গবেষণা কর্মসূচিতে যোগ দেন, যেখানে তিনি মথের রেশমের বিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন।

এদিকে, সায়েমা সুন্দরবনের ক্রো প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা করছেন, যা বিলুপ্তির পথে রয়েছে।

এ বছরের এপ্রিল মাসে রায়হান ও সায়েমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মথের লার্ভা সংগ্রহ করেন এবং নিজেদের ল্যাবে পালন করতে শুরু করেন। তারা লার্ভাগুলোকে প্রাপ্তবয়স্ক মথ হওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করেন।

রায়হান বলেন, "আমরা অন্যান্য পরিবারের সঙ্গে তুলনা করে দেখেছি যে এটি সম্পূর্ণ নতুন গণ এবং নতুন প্রজাতি।" এরপর তারা তাদের নিবন্ধটি জুটেক্সা নামক বৈজ্ঞানিক জার্নালে পাঠান এবং সেখানে এটি প্রকাশিত হয়।

রায়হান জানান, “মথের নমুনাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। নতুন আবিষ্কৃত নমুনাগুলো প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরে রাখা হয় যাতে ভবিষ্যতে গবেষণা করা যায়।”

মথের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রায়হান বলেন, “পেঁপে ফুলের পরাগায়ণের জন্য বিশেষ একটি মথ প্রয়োজন, যাকে হক মথ বলা হয়। এই মথ ছাড়া পৃথিবীতে পেঁপে থাকতে পারে না।”

মথ বিভিন্নভাবে আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—রেশম উৎপাদন থেকে শুরু করে খাদ্য চেইনে তাদের অবদান রয়েছে।

গবেষণা থেকে আরও পড়ুন

সর্বশেষ