ঢাকা, ৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার

বাকৃবিতে ছাত্রদলের প্রকাশ্য কর্মসূচিতে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা, প্রশাসন নীরব



ক্যাম্পাস

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর, বাকৃবি প্রতিনিধি

(১ সপ্তাহ আগে) ২৭ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার, ৪:৪৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:৪৭ অপরাহ্ন

agribarta

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও প্রকাশ্যে দলীয় ব্যানারেই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্র রাজনীতির প্রকাশ্য কর্মসূচির প্রতিবাদে বিভিন্ন দফায় বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রদলের নাম ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত পানির বোতল ও দলের নাম লেখা কলম বিতরণ করেছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে তাদের ওই কার্যক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণাও করেন তারা। এর আগে ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে বিভিন্ন ছাত্রসমিতির স্টল পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তথ্য ও সহায়তা প্রদান করার জন্য স্টলগুলো পরিদর্শনের সময় উপাচার্যের সাথে ছিলেন বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক মো. আতিকুর রহমান, সদস্যসচিব মো. শফিকুল ইসলামসহ ছাত্রদলের অন্যান্য নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ সংলগ্ন রাস্তায় ইসলামী ছাত্রশিবির ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের মাঝে দলীয় মোড়কে খেজুর বিতরণ করেছে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এসকল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা। পরে এতে যোগ দেন শহীদ শামসুল হক হল ও জামাল হোসেন হলের শিক্ষার্থীরা। প্রায় তিনশতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে ওই মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন তারা। এসময় ‘রাজনীতির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘রাজনীতির দোসররা হুঁশিয়ার সাবধান’-সহ রাজনীতির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফজলুল হক হলের এক শিক্ষার্থী  জানান, ‘ফজলুল হক হলে যে সকল শিক্ষার্থীরা আগে ছাত্রলীগ করতেন তারাই এখন ছাত্রদলের রাজনীতি করার জন্য অন্যদেরকে আহবান করছেন। অনেকদিন ধরেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সাথে লিয়াজোঁ করে এই অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার দিন ছাত্রদলের কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার জন্য হল থেকে ছাত্রদের আহবান জানানো হয়। ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ছাত্রদলের নামে পানি বিতরণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটির প্রচারণা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন হলের শিক্ষার্থীরা। পরে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা।’

শামসুল হক হলের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের নামে পানি ও কলম বিতরণের ঘটনাটি প্রশাসনকে জানানোর পরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রদলের এ সকল কর্মকাণ্ডকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেই আমরা মনে করছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অর্জিত এই রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে আবার লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির আবির্ভাবকে কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তারা।

এর আগেও গত ৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ব্যানারে আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে মৌন মিছিল করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেসময় ছাত্রদলের ওই কার্যক্রমের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দলীয় ব্যানারে অনুষ্ঠান করার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ভালোভাবে বুঝতে পারেননি। তারা সামনে এ ধরনের কাজ আর করবেন না বলেও সেসময় জানিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু নিয়মিতই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় তাদের আড্ডা দিতে দেখা যায়। এরপরেও আবার এই ভর্তি পরীক্ষার সময় তারা দলীয় নাম ব্যবহার করে পানি ও কলম বিতরণ করেছেন এবং সেটি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনেই। বারবার তারা দলীয় নামে বা ব্যানারে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো ও প্রশাসনের নীরবতায় শিক্ষার্থীরা আঙুল তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দিকে। তারা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় হচ্ছে এসব কার্যক্রম।

এ বিষয়ে বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতি করি। আমাদের কাজটা হল উনার বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমরা এটা মিছিল মিটিংয়ের মাধ্যমে না করে ভালো কাজের মাধ্যমে করার চেষ্টা করি। তবে আমরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনোকিছু করিনি। গরমের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের পানি খাওয়ানোর উদ্দেশ্য থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া।’

এদিকে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বাকৃবিতে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় তারা শিবিরের নামযুক্ত মোড়কে খেজুর বিতরণ করেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান। এবিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফাযায়েল আহমেদ বলেন, ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে আমরা ক‍্যাম্পাসের বাহিরে সাধারণ দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্যে খেজুর বিতরণ করেছি। ক‍‍্যাম্পাসে আমরা কোন ধরনের শোডাউন, মিছিল করিনি এবং অনান‍্য রাজনৈতিক সংগঠনের মতো কোন ধরনের কর্মসূচি পালন করিনি। আমরা বরাবরই ক‍্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ক‍্যাম্পাসের পরিবেশ যাতে ঘোলাটে না হয় তা আমাদের কামনা। আমরা বিশ্বাস করি এতদিন ছাত্র রাজনীতি যে চিত্র আমরা দেখেছি তার ব‍্যাপক সংস্কার প্রয়োজন।

তবে ছাত্ররাজনীতির প্রকাশ্য কর্মসূচির বিষয়ে প্রশাসনের জবাবদিহিতা চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রক্টরিয়াল বডিকে জানিয়েছে যে, তারা কোনো দলীয় ব্যানারে বা দলের নামে স্টল দেবে না। তাদের পানির বোতল বা কলমগুলো আমরা যাচাই করে দেখি নি, এটি আমাদের ভুল হয়েছে। শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সাথে আলোচনা না করেই মিছিল করেছে, যা একেবারেই কাম্য নয়। রাত দুইটা পর্যন্ত তারা মিছিল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় অনেক অসুস্থ ব্যক্তি আছেন, ছোট বাচ্চারা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা থেকে গতকাল রাতে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে অনেক অভিযোগও এসেছে। আমি সার্বিক নিয়ে আলোচনায় বসব।’

এ বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। পরবর্তীতে তাকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ক্যাম্পাস থেকে আরও পড়ুন

সর্বশেষ