ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার

আমন মৌসুমে কৃষকদের প্রস্তুতি চলছে



সম্পাদকীয়

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(১ মাস আগে) ৭ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

agribarta

বাংলাদেশের কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং জনগণের জীবিকার প্রধান উৎস। ধান দেশের প্রধান ফসল, যা মানুষের খাদ্য তালিকার মূল উপাদান হিসেবে বিবেচিত। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন দপ্তর ও গবেষণা ইনস্টিটিউট উন্নত, উচ্চফলনশীল এবং জলবায়ু সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন ও কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে।

দেশে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। তবে ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে খাদ্য নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খরা, বন্যা, লবণাক্ততা, শৈত্যপ্রবাহ ও শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগও কৃষিকে প্রভাবিত করে।

বর্তমানে আমন মৌসুম চলছে, যেখানে জুলাই-আগস্টে আমন বপন সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন পরিচর্যা চলছে। তবে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলা প্লাবিত হয়েছে, যা আমনের চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়েছে এবং কিছু এলাকায় রোপণ বিলম্বিত করেছে। আমন ধান সাধারণত কৃষকদের জন্য একটি নিরাপদ ফসল হিসেবে পরিচিত। ফলন বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত জাত ও ভালো বীজ নির্বাচন, জমি প্রস্তুতি, সঠিক বয়সের চারা রোপণ এবং সার ও পানি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত জাতগুলো ব্যবহার করলে আমনের উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। উল্লেখযোগ্য উফশী জাতের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি জাত যেমন বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৩০ এবং ব্রি ধান৪০ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। খরা প্রবণ এলাকার জন্য ব্রি ধান৫৬ ও ব্রি ধান৭১ উপযোগী, আর বন্যা প্রবণ এলাকার জন্য ব্রি ধান৫১ ও বিনাধান-১১ উপযুক্ত।

ধান গাছের জীবনচক্রে তিনটি বৃদ্ধি পর্যায় রয়েছে: অঙ্গজ বৃদ্ধি, প্রজনন পর্যায় এবং পরিপক্ব পর্যায়। সঠিক সময়ে কার্যকরী কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চারা রোপণের সময় গভীরতা ২-৩ সেন্টিমিটারের বেশি হওয়া উচিত নয়। সর্বোচ্চ কুশির অবস্থায় নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ এবং জমিতে পানি ধরে রাখা ফলনের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে।

রোপা আমনের দীর্ঘ ও মধ্যম মেয়াদি জাতগুলোর উপযুক্ত রোপণ সময় পুরো শ্রাবণ মাস (১৫ জুলাই-১৫ আগস্ট)। স্বল্পমেয়াদি জাতের রোপণের সময় ১০ শ্রাবণ থেকে ৩১ শ্রাবণ (২৫ জুলাই-১৫ আগস্ট)।

সার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দীর্ঘ ও মধ্যম মেয়াদি জাতের জন্য ইউরিয়া ২৩ কেজি, ডিএপি ৮ কেজি এবং এমওপি ১৪ কেজি প্রয়োজন। স্বল্পমেয়াদি জাতের জন্য ইউরিয়া ২০ কেজি এবং ডিএপি ৭ কেজি যথাক্রমে প্রয়োজন।

আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য চারা রোপণের ৩৫-৪০ দিন পর্যন্ত জমিকে আগাছামুক্ত রাখতে হবে। পোকামাকড়ের আক্রমণ কমাতে কীটনাশক ব্যবহারে বিরত থাকা উচিত প্রথম ৩০ দিন। রোগ নিয়ন্ত্রণে খোলপোড়া ও ব্ল্যাস্ট রোগের বিরুদ্ধে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন।