রংপুরে চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, যা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষি বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টনেরও বেশি আমন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। এই উদ্বৃত্ত চাল অন্য জেলার চাহিদা মেটাতেও সক্ষম হবে।
কিন্তু কৃষক ও বর্গা চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সার, কীটনাশক এবং সেচের জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করেছেন। এর ফলে তারা লাভবান হতে পারছেন না। খাদ্য বিভাগ কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান না কিনে বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কৃষকদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তারা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্যও পাবেন না বলে আশঙ্কা করছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, ধান বিক্রি করতে গেলে খাদ্য কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। খাদ্য বিভাগ প্রতি বছর ধান সংগ্রহ অভিযানের নামে গল্প বানালেও প্রকৃত কৃষক ও বর্গা চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হয় না।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২৩ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু সেখানে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন।
এখন পর্যন্ত জেলার ৮ উপজেলায় ৩০ শতাংশের বেশি জমিতে ধান কাটা ও মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। হেক্টর প্রতি তিন টনেরও বেশি চাল উৎপাদিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকদের জমিতে সেচের প্রয়োজন হয়নি এবং যথাসময়ে বৃষ্টির পানি দিয়ে চারা রোপণ করা সম্ভব হয়েছে, যার ফলে বাম্পার ফলন হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রংপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠগুলো সোনালি ধানে ভরে গেছে। তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, ইউরিয়া সার পাওয়া গেলেও অন্যান্য সারের দাম অনেক বেশি ছিল এবং ক্ষেতমজুরদের মজুরি বেড়ে গিয়ে ৫০০-৬০০ টাকা হয়ে গেছে।
বর্গা চাষিরা জানান, তারা দাদন ব্যবসায়ী ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছেন কিন্তু এখন বিক্রি করতে হচ্ছে অর্ধেক দামে। বাজারে প্রতি মণ ধান ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রংপুর সদর উপজেলার কৃষকরা অভিযোগ করেছেন যে খাদ্য বিভাগ সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছে না এবং বড় ব্যবসায়ীদের কাছে কেনার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা তালিকা করার সময় বর্গা চাষিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন না, ফলে তারা ন্যায্য মূল্য পান না।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খাদ্য বিভাগ যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনত তবে তারা লাভবান হতে পারতেন। তবে এখন পর্যন্ত সরাসরি কেনার কার্যক্রম শুরু হয়নি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, এবারের আমন ধানের ফলন অত্যন্ত ভালো হয়েছে এবং জেলার খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন চাল অন্য জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে।