ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার

পটুয়াখালীতে কৃত্রিম খাদ্যে কোরাল মাছ উৎপাদন



মৎস্য

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(১ মাস আগে) ১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

agribarta

আনোয়ার হোসেনের ৩০ শতকের পুকুরটি দীর্ঘদিন ধরে পতিত ছিল। লবণাক্ততার কারণে মাছ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। তবে, সম্প্রতি কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে কোরাল মাছ চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন আনোয়ার। এক বছরের মধ্যে পাঁচ গ্রাম ওজনের কোরাল মাছের পোনা দুই থেকে সাড়ে তিন কেজি ওজনের হয়েছে।

আনোয়ার হোসেন (৫৫) পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের মাইটভাঙ্গা গ্রামে বসবাস করেন। তাঁর সফলতা দেখে এলাকার অন্যান্য মাছচাষিদের মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের শিক্ষকেরা উপকূলীয় এলাকায় কৃত্রিম খাদ্যে কোরাল মাছ চাষের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করেছেন।

গত বুধবার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, লবণাক্ততার কারণে তাঁর পুকুরে মাছ চাষ সম্ভব হয়নি। এক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পরীক্ষামূলকভাবে কোরাল মাছ চাষের প্রস্তাব দিলে তিনি রাজি হন। পুকুরে মোট ৭০০ পোনা ছাড়া হয়। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের কিছু ঘেরে কোরাল মাছ চাষ হলেও সাধারণত ছোট মাছ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরামর্শে তিনি বাজার থেকে মাছের খাবার কিনে ব্যবহার করেন, যার ফলে এক বছরে মাছের ওজন দুই থেকে সাড়ে তিন কেজি হয়েছে।

আনোয়ার বলেন, প্রতিদিনই এলাকার অন্যান্য মাছচাষিরা তাঁর পুকুরে আসছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন। যদি ব্যবসার জন্য কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে কোরাল মাছ চাষ করা সম্ভব হয়, তাহলে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক শৈবাল সহযোগে কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে কোরাল মাছ চাষ’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পটি কলাপাড়ার আলীপুরের মাটিভাঙ্গা গ্রামে শুরু হয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক প্রধান গবেষক হিসেবে এবং সহকারী প্রধান গবেষক হিসেবে মো. আরিফুর রহমান কাজ করছেন। এই প্রকল্পটি সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় মৎস্য অধিদপ্তরের অর্থসহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।

আরিফুর রহমান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কোরাল মাছ চাষ হয়ে আসছে, কিন্তু কৃত্রিম খাদ্যের অভাবে তা জনপ্রিয় হয়নি। তাই তারা মাছচাষিদের মধ্যে কৃত্রিম খাদ্যে কোরাল মাছ চাষের সব উপকরণ সরবরাহ করেছেন এবং ২৫০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। দেশে কোরাল মাছের হ্যাচারি না থাকায় থাইল্যান্ডের হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনা সংগ্রহ করে নার্সারি পুকুরে নার্সিং করে পরে পুকুরে মজুত করা হয়।

প্রধান গবেষক মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সামুদ্রিক শৈবাল সহযোগে কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের হ্যাচারিতে উৎপাদিত কোরাল মাছ চাষের পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ৫ গ্রাম ওজনের কোরাল এক বছরে দুই থেকে সাড়ে তিন কেজিতে পৌঁছেছে। এটি শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, সারা দেশের উপকূলীয় এলাকার চাষিদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তাঁদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদী।