কার্তিক মাসের শেষ দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের তাড়াশ উপজেলায় অতিথি পাখির আগমন শুরু হয়েছে। তবে চলনবিলের এই অঞ্চলে শিকারিদের হাতে কিছু পাখি মারা পড়ছে, যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল বাজার ও দীঘিসগুনা বাজারে অতিথি পাখি বিক্রি হয়। পাখিশিকারিরা রাতের বেলায় পাখি শিকার করে ভোরে বাজারে নিয়ে আসেন। এছাড়া, বারুহাঁস ইউনিয়নের বস্তুল বাজার ও পঁওতা বাজারে বক পাখিরও বিক্রি হচ্ছে।
দুটি স্থানীয় শিকারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাঁদের মতে, পাখি শিকারের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। তারা বলেন, "অন্য কাজের পাশাপাশি অল্প শ্রমে পাখি ধরে বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা আয় করা যায়।" স্থানীয়রা অতিথি পাখির জন্য আগ্রহী থাকায় শিকারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন এবং অনেকেই তাদের বাড়ি থেকে পাখি কিনে নিয়ে যান।
একটি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম বলেন, চলনবিলের পানি নামার সময় প্রচুর ছোট মাছ ও পোকামাকড় পাওয়া যায়, যা অতিথি পাখিদের আকর্ষণ করে। তবে শিকারিরা জাল ও ফাঁদ ব্যবহার করে এসব পাখি ধরে। তিনি উল্লেখ করেন, বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পাখিশিকারিদের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে।
চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাখি শিকারের ছবি পোস্ট করা হচ্ছে, যা আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি তুলে ধরে। তিনি জানান, এই অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
ভিলেজ ভিশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফ খন্দকার বলেন, "শিকারিরা এবং ক্রেতারা একই সঙ্গে অসচেতন এবং চালাক।" তাঁরা অন্যায় জানলেও এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা বন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, শিকারিদের অবস্থান জানার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।