‘‌পরিবেশবান্ধব’ ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি

কৃষি অর্থনীতি/

(১ বছর আগে) ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

agribarta

ইট বিক্রিতে বলা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব। কিন্তু সেই ইট তৈরি করা হচ্ছে পরিবেশের ক্ষতি করে। কৃষিজমির মাটি দিয়ে তৈরি করা ইটকে বলা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব। শুধু তাই নয়, ইট পোড়ানোর সময় আশপাশের বসতিতে পড়ছে প্রভাব। স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে। ইমরানী অটো ব্রিক ফিল্ড নামে এ ইটভাটার অবস্থান মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের সামনের খীল এলাকায়। পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এ ইটভাটার নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড় ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত ওই ইটভাটায় আশপাশ থেকে কেটে নেয়া হয়েছে এক ও দুইফসলি জমির মাটি। এছাড়া পাশের বাগমারা এলাকা থেকে একফসলি ২৫-৩০ বিঘা জমির টপ সয়েল বা ওপরের মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। মাটি কাটতে ব্যবহার করা হয়েছে এক্সক্যাভেটর। দেড়-দুই ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেয়ায় এসব জমিতে বৃষ্টি হলে জমবে পানি, ফলবে না কোনো ফসল। কৃষিজমির এসব মাটি টিলাসমান উঁচুতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কারখানার পাশেই। প্রতি রাতে কৃষিজমি কেটে আনা এ মাটি দিয়েই  তৈরি হচ্ছে ইট।

স্থানীয় তেলিগ্রামের কৃষক আমির হোসেন বলেন, ‘‌রাতের বেলায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে ইটভাটার লোকজন ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে। অনেক জমির মালিক বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে এ এলাকায় চাষাবাদের মতো কোনো জমি থাকবে না।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে করেরহাটের সামনের খীল এলাকায় টিলার পাদদেশে প্রায় দুই একর জায়গার ওপর ইমরানী অটো ব্রিক ফিল্ড নামের ইটভাটাটি নির্মাণকাজ শুরু হয়। গত বছর পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করলেও এ বছর থেকে পুরোদমে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় ভাটাটি। অবৈধ উপায়ে ইটভাটা স্থাপন করা হলেও পাহাড়ি এলাকার নির্জন জায়গা হওয়ায় প্রশাসনের তেমন নজরদারি নেই এখানে।

ইটভাটার পাশের টিলায় বসবাস করা হাসিনা বেগমের দাবি, ‘‌ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু করার পর থেকে তাদের গাছে আর ফল ধরছে না। ভাটায় বড় মোটর বসিয়ে পানি তোলায় গ্রীষ্মকালে টিউবওয়েলে পানি ওঠে না।’  

জানতে চাইলে ইমরানী অটো ব্রিক ফিল্ডের ব্যবস্থাপক নয়ন বলেন, ‘‌অনেকে কৃষিজমির টপ সয়েল কাটলেও সব দোষ এসে পড়ছে আমাদের ওপর। আমরা সব দপ্তরের কাগজপত্র ঠিক করে ইট উৎপাদন করছি। আর আমাদের কারখানায় কৃষিজমির কোনো মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে না।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আশ্রাফ উদ্দিন বলেন, ‘‌সম্প্রতি ইমরানী অটো ব্রিক ফিল্ড কারখানাটি পরিদর্শন করেছি। কারখানাটির করা আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে আছে। এখনো কোনো ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।’

জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘‌কৃষিজমির মাটি কেটে নিয়ে কোনো কারখানারই ইট তৈরির সুযোগ নেই। আর ইমরানী অটো ব্রিক ফিল্ড নামের কারখানাটি অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কারখানাটি এখনো অনুমোদন পায়নি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব আমরা।’