agribarta-কৃষকের চোখে বাংলাদেশ

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কম খরচে বেশি লাভ

নীলফামারীতে বাড়ছে চিনাবাদাম চাষ


কৃষি

জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর

(৪ দিন আগে) ২২ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

agribarta

বেশি লাভের আশায় নীলফামারীতে বাড়ছে চিনাবাদামের চাষ। কম ঝুঁকি, ব্যাপক চাহিদা ও বাজারে বাদামের ভালো দাম পাওয়ায় গতবারের তুলনায় চলতি মৌসুমে বেড়েছে বাদামের চাষ। কম খরচে বাদাম চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাদাম চাষাবাদে আগ্রাহী হচ্ছেন কৃষকেরা।

জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। বেলে দো-আঁশ মাটিতে বাদামের চাষ ভালো হয়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বাদাম চাষে তেমন শ্রম দিতে হয় না। এছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় বাদামে রোগবালাই কম থাকায় কীটনাশক প্রয়োগের ঝামেলা কম। ফলন ভালো হতে মাঝে মধ্যে কয়েকবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করলেই ফসল ভালো হয়। বাজারে বাদামের ভালো দাম থাকায় গত কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এখানকার চাষিরা।

নীলফামারী জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার নীলফামারী জেলায় ৬টি উপজেলার ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৩৭৭ মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগ জানায়, বাদাম চাষের জন্য উপযোগী জেলার খালিচা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, বালাপাড়া, ঝাড়সিংশ্বর চর, তিস্তার চর, চিলমারীর ডাঙ্গা, বড় রাউতা, চিলাই, জলদান পাড়া, বগুড়ার ডাঙ্গা ও ভোগডাবুড়ীসহ অনেক এলাকায় বাদাম চাষ হয়।

ডোমার চিকনমাটি এলাকার বাদাম চাষি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আগে পাট চাষ করতাম। এখন বাদাম চাষ করি। ২০ বছর থেকে বাদাম চাষ করি। প্রতি বিঘা ১৪-১৮ হাজার টাকা খরচ পড়ে। বাজারে তা বিক্রি করি ৪০-৫০ হাজার টাকা। বাদাম চাষাবাদে খরচ কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর ২ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ২০ কেজি বীজ লাগাতে হয়। প্রতি কেজি বীজ ২০০ টাকা করে। প্রতি বিঘায় ১০-১৪ মণ ফলন হয়ে থাকে। ফাগুন মাসে বীজ বপনের পর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষদিকে বাদাম জমি থেকে সংগ্রহ শুরু করবো।’

বড় রাউতার আলী হোসেন বলেন, ‘বীজের বাদাম আমি নিজেই আবাদ করি। তাতে বাদাম চাষে আমার খুব অল্প খরচ পড়ে। বাদাম চাষ করে পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। তিন ধরনের বাদাম এই এলাকায় জনপ্রিয়। এর মধ্যে চিলমারি, হাইব্রিড ও লরি আছে। তবে হাইব্রিড ও লরি জাতের বাদামের দাম কিছুটা বেশি। উচুঁ ও বালু মাটির জন্য বাদাম চাষ উপযুক্ত।’

চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের বাদাম চাষি রুবেল ইসলাম বলেন, ‘বাদাম মাটিতে রোপণের আগে জমি ভালো করে চাষ করতে হয়। জমিতে ৩-৪টি চাষ দিতে হয়। কারণ মাটি নরম থাকলে বাদাম আকারে বড় হয়। বাদাম ঘরে তোলা পর্যন্ত ২-৩ বার জমিতে স্প্রে করতে হয়। প্রতি স্প্রেতে বিঘায় খরচ হয় ২০০ টাকা করে। প্রতি বিঘায় দুইবার সার দিতে হয়। পটাশ ও ঢেপ সার ২০ কেজি করে দিতে হয় বিঘাপ্রতি।’

খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চর কিসামতের কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, ‘বাদাম চাষ করতে তেমন খরচ করতে হয় না। পরিশ্রমও কম করতে হয়। তাই এ বছর ১০ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে ভালো ফলনের আশা করছি। বাজারদর ভালো পেলে লাভবান হতে পারবো।’

ডোমার সদর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনেশ্বর রায় বলেন, ‘এলাকায় কম খরচে উচ্চ ফলনশীল চিনাবাদাম উৎপাদনের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিচ্ছি। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে চিনাবাদামকে মুক্ত রাখতেও পরিমিত পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাদামের ভালো ফলন আশা করছে কৃষি বিভাগ। কৃষক আমন ও আলু ওঠানোর পর বাদাম চাষ করেন। বাদাম তুলে আমন ধান লাগানো হয়। বছরে জমিতে তিনটি ফসল চাষ করতে পারছেন কৃষকেরা। এতে কৃষক সবদিক দিয়ে লাভবান হচ্ছেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চিনাবাদাম একটি লাভজনক ফসল। তাই কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে উপজেলা কৃষি উপসহকারী অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’