সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে দ্রুত ডেইরি খামার সম্প্রসারিত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে একদিকে বর্তমানে বাংলাদেশ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ, আপরদিকে প্রচুর বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। শিক্ষিত যুব সমাজের বড় একটা অংশ এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝেও ডেইরি খমারের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, প্রচলিত খমার ব্যবস্থাপণায় অনেকেই লোকসানেরও সম্মুখীন হচ্ছেন। বাংলাদেশে ডেইরি খামারে লোকসানের অন্যতম কারণ হচ্ছে খামারে কাজ করার শ্রমিক স্বল্পতা। শ্রমিক স্বল্পতার কারণে খামারের দৈনন্দিক কার্যাবলি সম্পাদন করা কঠিন। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হতে পারে ডেইরি খামার যান্ত্রিকীকরণ। এই চিন্তা থেকেই ডেইরি খামারের বর্জ্য অপসারণের জন্য বাংলাদেশে ব্যবহার উপযোগী স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ আজমল হুদা তপন।
"অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার" একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র যা স্ক্রাপারের সাহায্যে গরুর দাঁড়ানো অবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেইরি খামারের গরুর খামারের বর্জ্য পরিষ্কার করবে ও ড্রেনের মাধ্যমে বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে জমা করবে এবং যন্ত্রটিকে সঠিকভাবে সংরক্ষন করলে এটি দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী থাকবে।" বলছিলেন যন্ত্রটির উদ্ভাবক ডাঃ মোঃ আজমল হুদা তপন।
তিনি আরো জানান, " বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি খামারের বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা আমাকে ভাবাত। আমি চিন্তা করতাম যদি খামারে স্বয়ংক্রিয় কোন যন্ত্র লাগানো যায়, তাইলে এটি খুব সহজেই ডেইরি খামারের জীবনিরাপত্তা নিশ্চিত করে শ্রমিকের উপর নির্ভরশিলতা কমিয়ে নিয়ে আসতে পারে। এই চিন্তা থেকেই আসলে আমার কাজ শুরু করা। যখন বিসিএসের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলাম, তখন থেকেই ধীরে ধীরে আমার চিন্তার বাস্তবায়ন শুরু করলাম এবং বর্তমানে এটি আমার নিজের ডেইরি খামারে খুব সফলভাবে কাজ করছে।"
এগ্রিবার্তা.কমের এই প্রতিবেদক ডাঃ আজমল হুদা তপনের নিজস্ব ডেইরি খামার পরিদর্শনকালে দেখতে পান, "অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার" যন্ত্রটি খুব স্বাভাবিকভাবেই খামারে কাজ করছে এবং এতে খামারের গরুর কোন ধরণের সমস্যা হচ্ছে না। খামারীকে প্রাথমিক কিছু প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই খুব সহজেই এই যন্ত্রের কার্যাবলি বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব। সাধারণত আমাদের দেশে যে সব খামারে ১০-১২টি গরু আছে, সেখানে এই যন্ত্রটি হতে পারে খামার যান্ত্রিকীকরণেই প্রাথমিক পদক্ষেপ।
খামারে "অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার" ব্যবহারের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, যেখানে শ্রমিকের মাধ্যমে খামার পরিচালনা করলে ১০-১২ টি গরুর খামারে দশ বছরে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা শুধু বর্জ্য অপসারণে শ্রমিকের মজুরি বাবদ প্রয়োজন হয়, সেখানে এই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবহারে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা প্রয়োজন। প্রাথমিক ভাবে যন্ত্রটি প্রস্তুত করতে ষাট হাজার টাকা প্রয়োজন, তবে যন্ত্রটির উদ্ভাবক জানান, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে গেলে আরো কম দামে খামারিদের যন্ত্রটি সরবরাহ করা সম্ভব।
এই ডেইরি খামারে দীর্ঘদিন যন্ত্রটি ব্যবহার করছেন রেজাউল করিম লালমিয়া। তিনি জানান, "আগে অনেক সময় খামারে কাজের লোক পাওয়া না গেলে খামার অপরিষ্কার হয়ে থাকত এবং খামারে প্রায়ই বিভিন্ন রোগ বালাই লেগে থাকত কিন্তু বর্তমানে আর এই যন্ত্র ব্যবহারের ফলে এসব সমস্যা নাই।"
ডাঃ আজমল হুদা তপন এই যন্ত্রটি কার্যকর অবস্থায় নিয়ে আসতে অনেকের পরামর্শ নিয়েছেন, বিশেষ করে মোঃ আসাদুজ্জামান লোটাসের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং আশা করেন খুব শীঘ্রই যন্ত্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্ভব হবে।
"অটোমেটিক ফার্ম ক্লিনিং স্ক্রাপার" নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। সরকারি সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে আরো উন্নত ও সাশ্রয়ী উপায়ে এটি তৈরি করা যাবে এবং সারাদেশের ডেইরি খামার যান্ত্রিকীকরণে এই যন্ত্র ভূমিকা রাখবে' আশাবাদ ব্যক্ত করেন যন্ত্রটির উদ্ভাবক।
যন্ত্রটি কিভাবে কাজ করে, সেটা ভিডিওতে দেখতে পারেন এই লিংকে (http://bit.ly/370ktf) ক্লিক করে।