www.agribarta.com:: কৃষকের চোখে বাংলাদেশ
শিরোনাম:

করোনা সংক্রমণ: সরকারের কাছে প্রত্যাশা


 এগ্রিবার্তা ডেস্কঃ    ১৯ মার্চ ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৫:১৫   সম্পাদকীয় বিভাগ


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশনা দিয়েছে সব সাসপেক্ট কেস দ্রুত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে করোনা আছে কিনা। আক্রান্ত পাওয়া গেলে সাথে সাথে তাকে আইসোলেশনে নিতে বলা হয়েছে। সব সাসপেক্টকে পরীক্ষা না করলে এটি দেশে মহামারীর আকার ধারণ করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কেননা সাসপেক্টদের কারও শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকলে সেটি ছড়াতে থাকবে। যেসব দেশ করোনা পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে সেখানে প্রত্যেক সাসপেক্ট কেস কে পরীক্ষা করা হচ্ছেএবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। হোম কোয়ারাইন্টাইনে থাকা মানুষ নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুল, কলেজ ছুটি পেয়ে অনেকে ঘুরতে যাচ্ছে। সমুদ্র সৈকত বা দর্শনীয় স্থানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যজ্ঞান কম বা তারা পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ। এরকম পরিস্থিতিতে সরকার কি ভূমিকা রাখতে পারে সে লক্ষ্যেই এই লেখা।

১.মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কঠোর হোন। উন্নত অনেক দেশেই সরকার আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেক দেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। অতিশীঘ্রই মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগ করুন। অনেক বড় বিপদ এড়াতে এটির বিকল্প নেই। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কাজে লাগানো যেতে পারে।

২. বিদেশ থেকে যারা এসে হোম কেয়ারাইন্টাইনে না থেকে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা দরকার। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে কাজে লাগানো যেতে পারে। অথবা তাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইনে নিয়ে আসুন। নতুন করে যারা আসছেন,তাদের বিষয়ে শক্ত সিন্ধান্ত নেয়া দরকার।

৩. সব সাসপেক্ট কেস কে পরীক্ষা করার সক্ষমতা IEDCR এর আছে কিনা আর থাকলেও সমগ্র দেশের জন্য এটি কতটা বাস্তবসম্মত সেটি নিয়ে যথেষ্ট ভাববার সুযোগ রয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে এটিকে উম্মুক্ত না করা হলে রোগীর ভোগান্তিসহ সব সাসপেক্টকে পরীক্ষার আওতায় আনা কঠিন।এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত সিন্ধান্ত নিতে হবে।

৪. সব সাসপেক্ট কেস কে যাতে পরীক্ষার আওতায় আনা যায়, সে ব্যবস্থা করা জরুরি। করোনা মহামারী ঠেকাতে গেলে এটির কোন বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে করোনা পরীক্ষার কীট সংকট একটি বিষয়। এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। গণমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনা পরীক্ষার কীট তৈরী করেছে এবং তা অনুমোদনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠিয়েছে। তাই যদি হয় তবে সেটি খুবই সুখবর। সেক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটি পরীক্ষা করে অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা জরুরি।

৫. Tourist spot গুলোতে সাময়িক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। কেননা এখন এগুলোতে উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সব ধরনের নির্বাচণ কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা উচিত। এগুলো গণজমায়েতের অংশ। ইতোমধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ দেশগুলোতে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করেছে তারা।

৬. বিশেষ চিকিৎসক স্কোয়াড গঠন করা জরুরি। সেই সাথে তাদের পর্যাপ্ত personal protective equipment (PPE) এর ব্যবস্থা করতে হবে। এটি ছাড়া চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা যেমন বেড়ে যায়, তেমনি তাদের মাধ্যমে এটি ছড়ানোর ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

৭. বিশেষায়িত হাসপাতালে এটির চিকিৎসা সীমাবদ্ধ রাখা জরুরি। সব সরকারী হাসপাতালে এটি উম্মুক্ত করলে সংক্রমিত হওয়ার হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্যেক বিভাগীয় শহরের একটি করে হাসপাতাল ও ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালকে বিশেষায়িত ঘোষণা করে করোনা সংক্রমনের চিকিৎসা এগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা জরুরী।

৮. দেশের এই সংকটকালে দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, ভাইরোলজিস্ট, বিশিষ্ট চিকিৎসকদের মূলধারার সিন্ধান্ত গ্রহণে সম্পৃক্ত করা উচিত। করোনার কিট ডেভেলপমন্ট থেকে সনাক্তকরনে দেশের বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও বায়োলজিক্যাল রির্সাচ ইন্সটিটিউটগুলোকে সম্পৃক্ত করে সমাধানের পথ খোঁজা যায় কিনা সেটি ভাবা যেতে পারে। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রফেসরের বিদেশে উচ্চতর অনেক ল্যাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

৯. স্থানীয় সরকারকে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে গ্রাম পর্যায়ে এটি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে। মেয়র, কাউন্সিলর, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে করোনা প্রতিরোধে গণসচেতনতা তৈরীতে। প্রবাসীদের হোম কোয়ারান্টাইনের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনকে নজরদারী বাড়াতে হবে। এই সংকট মোকাবেলায় সব রাজনৈতিক দলকে একসাথে কাজ করতে হবে, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা রাখা উচিত দেশের এই সংকট মোকাবেলায়। যেখানে উন্নত সব দেশ এটি মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমরা সবাই এগিয়ে না আসলে এটি মোকাবেলা করা সত্যিই কঠিন হবে।

১০. বাংলাদেশের স্বনামধন্য ক্রিকেটার, বিশিষ্ট ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের দিয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধী বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা বিটিভি সহ সকল মিডিয়ায় প্রচার বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেননা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশ এখনও বিটিভির ওপর নির্ভরশীল।

১১. এই সংকট মোকাবেলায় অতিসত্তর সরকারি একটি তহবিল গঠন করা জরুরি। যেটি এ সঙ্কট থেকে উত্তোরনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও গবেষণায় ব্যয় হবে। এর পাশাপাশি আমাদের মত জনবসতিপূর্ণ দেশে সংক্রামক ব্যধি প্রতিরোধে বহুতল বিশিষ্ট (৪০০০ বেড) একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি যেটিতে শুধু সংক্রামক রোগের চিকিৎসা করা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে, সব সাসপেক্টকে পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যেসব দেশ করোনা থেকে উত্তরনের পথে, বাংলাদেশেরও তাদের কৌশল অনুসরণ করা উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশে অনেক সিন্ধান্ত আপনার হস্তক্ষেপ ছাড়া হয় না । এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এটাই সবার প্রত্যাশা। করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়ে ভালো থাকুক বাংলাদেশ, এই প্রার্থণা সৃষ্টিকর্তার কাছে।

মোঃ নূরন্নবী ইসলাম
লেকচারার
এ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
email: sagor.as@bau.edu.bd




  এ বিভাগের অন্যান্য