Immuno-chromatographic kit এবং Molecular detection পদ্ধতি

সম্প্রতি বাংলাদেশে উদ্ভাবিত নোভেল করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ কিট নিয়ে দেশে-বিদেশে বেশ আলোচনা বিভিন্ন গণমাধ্যম মারফত জানতে পারছি। একজন গবেষক, শিক্ষক, চিকিৎসক কিংবা ভেটেরিনারিয়ান হওয়ার সুবাদে এই দুঃসময়েও এই ভাইরাস ও তা নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে একটু পড়াশুনা করলাম। আমাদের সীমিত পুঁথিগত এবং ব্যবহারিক বিদ্যা থেকে কিছু উপলব্ধি আপনাদের সদয় অবগতির জন্য তুলে ধরছি। উল্লেখ্য, লেখাটা পড়তে হলে ধৈর্য্য সহকারে পুরোটা পড়তে হবে, কেননা অল্প কথায় এই লেখাটি শেষ করা যাবে না। চেষ্টা করেছি সহজবোধ্য করে লিখতে। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যে, এই লেখাটি কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে নয়। আমাদের সীমিত জ্ঞানের মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোকপাত মাত্র। বিজ্ঞানভিত্তিক গ্রহণযোগ্য যেকোনো ব্যাখ্যা কেউ দিলে, তা সবসময় স্বাগতম।
আমাদের দেশে উদ্ভাবিত নোভেল করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ কিট এর কাজ করার পদ্ধতি-
বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাতকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েব পেইজ মারফত জানতে পারলাম যে, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের দ্বারা উদ্ভাবিত এই কিটটি কাজ করবে “র্যাপিড ডট ব্লট পদ্ধতি”-তে যা কিনা ব্লাড গ্রুপ সনাক্তকরণের মত। এই পদ্ধতিটি ২০০৩ সালে SARS-CoV1, যা বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই ভাইরাস দ্রুত সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিলো। র্যাপিড ডট পদ্ধতিটি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীর SARS-CoV1 এর দ্রুত সনাক্তকরণের উপর প্রকাশিত জার্নাল প্রবন্ধ থেকে জানা যায় যে, এটি আসলে এক ধরনের dot blot enzyme-linked immunosorbent assay (ELISA) পরীক্ষা।
ডট ব্লট টেস্টের মূলমন্ত্র হলো- Recognition and binding of an antigen by the specific antibody। মানে হলো- নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি কর্তৃক নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনকে চিহ্নিত করে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে প্রথমে একটি কমপ্লেক্স তৈরি করা এবং পরবর্তীতে সংযুক্ত থাকা।
অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কি?
অ্যান্টিজেন হলো এমন যে কোনো বহিঃস্থ পদার্থ (Foreign to the body) যা কিনা প্রাণিদেহে প্রবেশ করে তার বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করে। এই রোগ প্রতিরোধকারী উপাদানগুলোর একটি হলো অ্যান্টিবডি বা immunoglobulin (Ig) যা কিনা অ্যান্টিজেনকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য দেহের ভিতর তৈরি হয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধের স্বীকৃত দুটি পদ্ধতি হলো- ১) অ্যান্টিবডি বা immunoglobulin (Ig) mediated যাকে সহজ ভাষায় বলে অ্যান্টিবডি নিয়ন্ত্রিত মাধ্যম; ২) কোষ নিয়ন্ত্রিত অর্থাৎ Cytotoxic T cell- নিয়ন্ত্রিত মাধ্যম।
অ্যান্টিজেনের প্রভাবে দেহে বিভিন্ন ধরণের Ig তৈরি হয়ে থাকে (যেমন- IgM, IgG, IgA, IgD এবং IgE)। সকল Igs-এর উপস্থিতির ভিত্তিতে কি ধরণের সংক্রমণ হয়েছে তা সম্পর্কে একটি ধারণাও পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে বুঝা যায় যে, কি ধরনের অ্যান্টিজেন শরীরে প্রবেশের ফলে (সংক্রমণটি জীবাণুঘটিত নাকি অ্যাালার্জিজনিত নাকি পরজীবিজনিত) কি ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে ।
আমরা জানি যে, প্রাণিদেহে জীবাণুঘটিত সংক্রমনের প্রথম ধাপে Interferon (α, β, γ) ও এরপরে পাওয়া যায় IgM-কে; আর IgM-এর পরে IgG-কে পাওয়া যায়। শুধুমাত্র IgM এর উপস্থিতি জানিয়ে দেয় যে, সংক্রমণটি প্রথমবারই ঘটেছে কিংবা সংক্রমণটি নিকটবর্তী সময়ে ঘটেছে কিংবা এখনো সক্রিয় আছে। এর পরের ধাপে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য শরীরে পাওয়া যায় IgG-কে। IgG এর উপস্থিতির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, সংক্রমণটি বেশ অনেকদিন ধরে চলছে কিংবা সংক্রমণটি আরোগ্য হয়েছে কিন্তু শরীরকে পরবর্তীতে একই সংক্রমণ হতে রক্ষা করার জন্য স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে। কোনো ক্ষেত্রে IgM-এর সাথে IgG এর উপস্থিতি একই সাথে দেখতে পারলে বুঝাবে যে, ঐ সংক্রমণটি পূর্বেও কমপক্ষে একবার হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ এর কথা। কোনো সংক্রমণের প্রাথমিক তীব্রতার (Incubation period, Acute infection) সময়ে আমরা সাধারনত IgM-কেই পেয়ে থাকি; যদি IgG-এর সাথে IgM-কে একই সঙ্গে পাওয়া যায় তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে , ঐ ব্যক্তি দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। ধারণা করা যায়, নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে। তবে নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি বা পুণরাবৃত্তির কোনো ইতিহাস এখনো প্রমাণিত হয়নি।
নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য রক্তে IgM বা IgG- এর উপস্থিতি শুধুমাত্র সংক্রমণ হয়েছে জানাবে কিন্তু সংক্রমণের কারণ অর্থাৎ নভেল করোনা ভাইরাস দিয়ে যে সংক্রমণ হয়েছে তা বলতে পারবে না। কেননা নোভেল করোনা ভাইরাসের (SARS-CoV2) নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন এর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য SARS-CoV2-এর নির্দিষ্ট মনোক্লোনাল/ পলিক্লোনাল অ্যান্টিবডিটিকে প্রথমে সনাক্ত করবে। এছাড়াও এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট প্রোটিন (S Protein)-এর বিরুদ্ধে পলিক্লোনাল অ্যান্টিবডি দিয়েও এই ভাইরাস সঠিকভাবে সনাক্ত করা সম্ভব। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে পাওয়া যাবে এই নোভেল করোনা ভাইরাস-এর নির্দিষ্ট মনোক্লোনাল/ পলিক্লোনাল অ্যান্টিবডি? এই নির্দিষ্ট পলিক্লোনাল অ্যান্টিবডি শরীরে নোভেল করোনা ভাইরাস-এর সংক্রমণ ছাড়া কি কি ভাবে পাওয়া সম্ভব তারও কিন্তু কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নাই। শুধু তাই নয়, কোনো গবেষণাগারে নির্দিষ্ট ভাইরাসের নির্দিষ্ট প্রোটিনের বিরুদ্ধে যখন কোনো মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি তৈরি করা হয় সেই ক্ষেত্রে কিন্তু যথেষ্ট সময় লাগবে; এমনকি এর জন্য বছরেরও উপর সময় লাগতে পারে।
তাছাড়া এর সাথে আরো যে প্রশ্নটি উঠে আসে তা হলো কোথা থেকে পাওয়া গেলো এই নোভেল করোনা ভাইরাস Specific অ্যান্টিজেন? এই নোভেল করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে কথা বলার কারণ হলো – সাধারণত দেখা যায় যে, কোনো নির্দিষ্ট ভাইরাসের নির্দিষ্ট প্রোটিনের নির্দিষ্ট অংশকে নির্ধারণ (Target) করে অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সনাক্তকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন- এইচ আই ভি এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন ভাইরাসটি সনাক্তকরণ পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়, একইভাবে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের জন্যও ভাইরাসটির বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টিজেনকে সনাক্তকরণ পরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই নোভেল করোনা ভাইরাসের কোন অংশটি সনাক্তকরণের জন্য কি কি ব্যবহৃত হচ্ছে সে সম্পর্কে কোনো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না এই কিটে। এমনকি এই টেস্টের জন্য কোন রোগী থেকে কিভাবে অ্যান্টিজেনটিকে (নোভেল করোনা ভাইরাস) পৃথক করে কোন অংশটিকে সনাক্ত করার জন্য নেয়া হয়েছে তা যদি নির্দিষ্ট করা না থাকে তাহলে এই কিট কখনোই শুধুমাত্র নোভেল করোনা ভাইরাসকে সনাক্ত করতে পারবে না এবং এই কিটটি নোভেল করোনা ভাইরাসের জন্য হয়ে যাবে অনির্দিষ্ট (Nonspecific kit) একটি কিট। সেক্ষেত্রে এই কিটটি দিয়ে SARS-CoV2 ছাড়াও অন্য অনেক সংক্রমণেরই ফলাফল পজিটিভ আসবে (এমনকি Corona virus এর অন্যান্য strain এর জন্যও); যার ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফলস পজিটিভ ফলাফল আসবে যা থেকে ভূক্তোভোগীসহ সাধারণ জনমনে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে।
শুধু তাই নয়, এই কিটে পজিটিভ ফলাফল পেলে যেকোনো আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিশ্চিত হবার জন্য পরবর্তীতে অ্যান্টিবডি নিষ্ক্রিয়করণ টেস্টের (VNT) স্মরণাপন্ন হতেই হবে আবারও। কেননা, যে SARS-CoV1 সনাক্তকরণ কিটকে রেফারেন্স হিসেবে উদ্ধৃতি দেয়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রেও কিন্তু অ্যান্টিবডি নিষ্ক্রিয়করণ টেস্ট করতঃ একাধিক ফলস পজিটিভ ফলাফলের কথা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। যদিও ফলস পজিটিভ ফলাফল ফলস নেগেটিভ ফলাফলের চেয়ে কম ক্ষতিকর। কিন্তু এই ফলস পজিটিভ ফলাফলের কারণে করোনা ব্যতীত অন্য রোগে রোগাক্রান্ত রোগীকে নিশ্চিতকরণ পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল বা টেস্ট কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হতে পারে যা কিনা সেই ব্যক্তির করোনাতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবে নিঃসন্দেহে। তাছাড়া রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ঐ ব্যক্তির মৃত্যু ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
উপরোন্তু SARS- CoV -এর জন্য উল্লেখিত জার্নাল প্রবন্ধতে দেখা যাচ্ছে যে, সেখানে IgG-এর সাথে অ্যান্টিজেন সংযুক্ত হয়ে SARS-CoV1-কে সনাক্ত করা হয়েছে; যা এই ক্ষেত্রে কি করে সম্ভব তা বোধগম্য নয় কেননা এখানে সংক্রমণের প্রাথমিক তীব্রতার ধাপ (Acute infection) বিরাজমান থাকবে এবং IgG অনুপস্থিত থাকবে। এক্ষেত্রে কিটটি ফলস নেগেটিভ ফলাফল দিবে। যা কিনা খুবই ভয়ংকর বিষয়। একজন ব্যক্তি যিনি কিনা করোনাতে আক্রান্ত কিন্তু এই কিটের ফলাফল বলছে তিনি আক্রান্ত নন; তখন সেই আক্রান্ত ব্যক্তি বিনা দ্বিধায় রোগ ছড়াতে থাকবেন সবার মাঝে। এটাই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয় রোগাক্রান্ত ব্যক্তি উপযুক্ত চিকিৎসা না নিয়ে রোগকে জটিল করে ফেলবেন; এমনকি এর ফলে তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
যদি ধরেও নেয়া হয় যে IgM এর সাথে SARS-CoV2 সংযুক্ত হয়েছে তবে আরো অনেক প্রশ্ন এসে ভীড় করে-
আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে IgM-এর উপস্থতি ধরা পরে সাধারনতঃ ৭ দিনের পরে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিলিয়ে যায় ১২ দিনের মাথায়; আর এর পরে আসে IgG। নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের উন্মেষপর্ব বা Incubation period ২ - ১৪ দিন (সূত্র-WHO)। সেক্ষেত্রে সাধারণ হিসেব মতে, IgM-এর উপস্থিতি কিন্তু ৭ দিনের আগে ধরা পড়বে না এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কিটটি আবারো ফলস নেগেটিভ ফলাফল দিবে।
উল্লেখিত আল-জাজিরা সংবাদ মাধ্যমের ২০ মার্চ ২০২০ এ এই কিট নিয়ে এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে এই কিট নিয়ে বিজ্ঞানী সেখানে যা বলছেন-
“When asked about the supposed disadvantages of the test kit, Dr Sil said, "The rapid dot blot test could record false-negative if used at a wrong time."
"Sometimes, it takes more than three days to develop antibodies in the blood cell, so if a test is conducted before three days, then it might come as false-negative”।
অর্থাৎ এই কিটের অসুবিধা নিয়ে প্রশ্ন করায় প্রধান বিজ্ঞানী নিজেই বলেছেন যে, র্যাপিড ডট ব্লট টেস্ট কিটটি ফলস নেগেটিভ ফলাফল দিতে পারে যদি ভুল সময়ে ব্যবহার করা হয়। কখনো কখনো রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে তিন দিনের বেশি সময় লাগতে পারে; তাই এই টেস্ট কিটটি যদি তিনদিনের আগে ব্যবহার করা হয় তাহলে ফলস নেগেটিভ ফলাফল দিতে পারে”। যেখানে দ্রুত রোগ নির্ণয় করে রোগীকে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন, সেখানে কিট-এর মাধ্যমে পরীক্ষার জন্য কমপক্ষে তিনদিন বিনা চিকিৎসায় অপেক্ষা করতে হবে। ততদিনে রোগীর অবস্থা কেমন হতে পারে সহজে অনুমেয়।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, রোগভেদে শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতিতে দিনের তারতম্য হতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, এই তিনদিনের গণনাটা কখন থেকে করা হবে? উপরোন্তু নোভেল করোনা ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য শরীরে অ্যান্টবডির উপস্থিতি যে তিন দিনের মাথায়ই হবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে কি?
কেননা এই “তিনদিনের তত্ত্ব”-এর বিপরীতে উহানের বক্ষব্যাধি হাসপাতাল- এর রোগীদের নিয়ে করা এক পরীক্ষাকে সামনে এনে “The Conversation” এর ২৬ মার্চ ২০২০ এ Alexander Edwards (Associate Professor in Biomedical Technology, University of Reading)- এর এক লেখাতে Zhang et al. (2020)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে, “সাধারনত নতুন সংক্রমণে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় লেগে যায় এবং অ্যান্টিবডি ভাইরাসের চেয়েও দীর্ঘসময় রক্তে থাকতে পারে এবং সংক্রমণের ইতিহাসকেই প্রতিফলিত করে। SARS-CoV2 ভাইরাসও এর ব্যতিক্রম নয়”। অর্থাৎ ভাইরাসের ক্ষেত্রে সংক্রমণ প্রারম্ভিক সময়ে অর্থাৎ সংক্রমণের প্রথম ধাপেও (তৃতীয় দিনে!!) এই কিট দিয়ে নেগেটিভ ফল আসার সম্ভাবনাই প্রবল।
যেহেতু এই কিটটি SARS-CoV1 সনাক্তকরণ কিটেরই আরেকটি নতুন সংস্করণ, তাই এখানে উল্লেখ্য যে, SARS-CoV1 সনাক্তকরন কিটটি দিয়ে Sub-clinical ( চিকিৎসা শাস্ত্রে আমরা যাকে বলি লক্ষণবিহীন সংক্রমণ) কেসসমূহের ক্ষেত্রে কি ঘটবে তা বিবেচনায় আনা হয়নি এবং সেক্ষেত্রে এই কিটের কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। SARS-CoV1 -এর ক্ষেত্রে লক্ষণবিহীন রোগাক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি; কিন্তু COVID-19-এ লক্ষণবিহীন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি একটি বড় সমস্যা। এমনকি এই লক্ষণহীন অবস্থায় একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি সবার অগোচরে এই রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। এই কিটটি কিন্তু সেই প্রেক্ষাপটকে অর্থাৎ লক্ষণবিহীন বাহককে কিভাবে চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে তা নিশ্চিত করে কিছু বলা হয় নাই।
এই কিট নিয়ে আরো যা বলা হয়েছে যে, এটি সস্তা (৩০০-৩৫০ টাকা) এবং ১৫ মিনিটে ফলাফল দিবে। কথাটি নিশ্চয়ই ঠিক। কিন্তু এই কিটের ফলাফল প্রাপ্তির সময়কাল এবং RT-PCR (WHO দ্বারা স্বীকৃত) যা ভাইরাস নিশ্চিতভাবে সনাক্তকরণের একমাত্র পদ্ধতি; এই দুইয়ের মাঝে তুলনা করতে যেয়ে RT-PCR-এর ফলাফল পাওয়ার সময়কালকে যতটা দীর্ঘমেয়াদী (পাঁচদিন) বলে প্রচার করা হচ্ছে আসলেই কি ততটাই সময় নিবে? বর্তমানে উন্নত RT-PCR পদ্ধতি (যেমন- Realtime LAMP) মাত্র ৩০ মিনিটেই একটি টেস্টের ফলাফল দিতে সক্ষম। কিন্তু এই মেশিনের সনাক্তকরণের জন্য সময় যাই লাগুক না কেন এই ভাইরাসটি অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ার কারণে কোনোভাবেই যেকোনো খোলা জায়গায় একে নিয়ে কোনো প্রকার পরীক্ষা করা যাবে না বা উচিৎ নয়। জীবিত SARS-CoV2 ভাইরাস নিয়ে কাজ করার জন্য গবেষণাগারের জৈব নিরাপত্তা অবশ্যই ৩+ (৪ হলে ভালো হয়) হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে RT-PCR মেশিন আছে কিন্তু শুধুমাত্র জৈব নিরাপত্তার বিবেচনায় এসময় মেশিনগুলোকে কাজে লাগান যাচ্ছে না। কেননা, RT-PCR পদ্ধতি ব্যবহারের সময়ও এই ভাইরাসটিকে সনাক্তকরণ চলাকালীন সময়ের এক পর্যায়ে ঐ নির্দিষ্ট জৈব নিরাপত্তার মাঝে নিষ্ক্রিয় (মৃত নয়) করে নিতে হয়; তা নাহলে গবেষণাগার ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
কিন্তু এই SARS-CoV2 ভাইরাস সনাক্তকরণ কিটটি কিভাবে সাধারণ কোনো গবেষণাগারে ব্যবহার করা যাবে তার ব্যাখ্যা কোথাও সঠিকভাবে দেওয়া হয় নাই। এত সংক্রামক একটি ভাইরাসকে (SARS-CoV2) কোনো ধরনের জৈব নিরাপত্তা (Bio-Safety Level-4) ছাড়া উন্মুক্তস্থানে টেস্ট করা যে নতুন কোনো ভয়ানক বিপদ ডেকে আনবে না সেই সম্পর্কে সতর্কীকরণ বা ব্যাখ্যাও কোথাও পাওয়া যায়নি।
পরিশেষে বলতে চাই যে, বর্তমানে বিশ্বের অনেক গবেষণাগার থেকেই SARS-CoV2 সনাক্তকরণের জন্য নানা ধরনের কিট (Immuno-chromatographic kit) তৈরির ঘোষণা দিচ্ছে। কিন্তু WHO কর্তৃক একমাত্র স্বীকৃত পদ্ধতি এখনো RT-PCR (Real time)/ Conventional RT-PCR পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ভাইরাসটি সঠিকভাবে একবারেই সনাক্তকরণ করা যাবে। যে কোনো ভাইরাসের অ্যান্টিজেন/ অ্যান্টিবডিকে নির্ণয়ের জন্য কোনো কিটকে স্বীকৃতি দেয়ার আগে ফলস পজিটিভ এবং ফলস নেগেটিভ ফলাফলকে অবশ্যই বিবেচনায় আনা উচিৎ। তা নাহলে ঐ কিট বিতর্কিত হতে বাধ্য। শুধু তাই নয়, আরো গভীর গবেষণা এবং পর্যালোচনা করা দরকার একটি কিটকে সকলের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার পূর্বে; তা নাহলে যেকোনো দেশকেই স্পেন এবং চেক রিপাবলিকের মত অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে ভুল কিট ব্যবহারের মাশুল হিসেবে।
লেখক: