www.agribarta.com:: কৃষকের চোখে বাংলাদেশ
শিরোনাম:

করোনা ভাইরাস সংক্রমণঃ যা জানা দরকার


 এগ্রিবার্তা ডেস্কঃ    ১০ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ৯:১৬   সম্পাদকীয় বিভাগ


ভাইরাসটি সাবমাইক্রোস্কোপিক। এর অর্থ হলো- ভাইরাস এতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে এটাকে খালি চোখে কখনই দেখা যাবেনা এটিকে দেখতে অবশ্যই মাইক্রোস্কোপ লাগবে। এমনকি সাধারন লাইট মাইক্রোস্কোপেও এদের দেখা যাবেনা এদেরকে দেখতে হবে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে।

করোনাভাইরাসের গঠন:
করোনা ভাইরাস দেখতে অনেকটা মুকুটের মতো। ইংরেজী crown আর corona এর ভাষাগত অর্থ একই। অনেকেই কদমফুলের মতও বলতে পারেন। কদম ফুলের বাইরে যেমন ছোট ছোট অসংখ্য পাঁপড়ি (কাঁটার মতো) থাকে এই ভাইরাসের বাহিরেও এরকম অসংখ্য স্পাইক বা কাঁটা থাকে। এটাকে বলে S- protein.

আকৃতি: মুকুটাকার/গোলাকার/কদমফুল

সাইজ: ১২৫ ন্যানোমিটার (আরও কম বা বেশিও হতে পারে)

গঠন:
এই ভাইরাসটি একটি +ssRNA এবং এনভেলপ যুক্ত ভাইরাস। গোলাকার এ ভাইরাসের প্রধান জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল হলো একটি +ssRNA (25-32 kb)। এই জেনিটিক ম্যাটেরিয়ালটি একটি নিউক্লিওক্যাপসিড-(n) এর সাথে সংযুক্ত থাকে এবং এর চারপাশে এটাকে ঘিরে একটা আবরন থাকে। এই আবরনটিই এনভেলপ। আর গুরুত্বপূর্ন এই জেনেটিক ম্যাটেরিয়ালটিকে রক্ষা করতে বাহির দিয়ে থাকে আরও একটি লিপিডের আবরন। আমরা যে সাবান পানি, বা ক্ষারজাতীয় দ্রব্যাদির ব্যবহারের কথা বলছি তারা কিন্তু এ লিপিড লেয়ারটিকে নষ্ট করে ভাইরাসটিকে মেরে ফেলে। আর এই লেয়ারের বাহিরে থাকে স্পাইক প্রোটিন। এই স্পাইকগুলোই মানুষের কোষে ভাইরাসটিকে সংযুক্ত হতে সাহায্য করে। (ভাইরাসের ছবিটি দেখুন)

কিভাবে এটি আমাদের শরীরে আঘাত হানে? (Pathogenesis):
এই ভাইরাসটি মূলত আমাদের শ্বাসতন্ত্রের (upper respiratory tract) উপরিভাগের মিউকোসাল বা গবলেট কোষকে আক্রমন করে। যেটা আমাদের শ্বাস নেয়ার পাইপের (ট্রাকিয়া, ব্রঙ্কাস, ব্রঙ্কিওল) কোষ। এরা কোষকে আক্রমন করে কোষের মধ্যে নিজের বংশ বিস্তার (replication) করে ও কোষটিকে মেরে ফেলে হাজার হাজার নিজের কপি তৈরি করে কোষের বাহিরে বেরিয়ে আসে। এরা পরবর্তীতে ফুসফুসের দিকে ধাবিত হয়। ফুসফুসের এলভিওলিতে এরা জমাট বাঁধে এবং তখনই নিউমোনিয়ার লক্ষন প্রকাশ পায়। ফুসফুসের এলভিওলাই রক্তের সাথে অক্সি হিমোগ্লোবিন তৈরির কাজটি করে থাকে। কিন্তু, করোনা ভাইরাসটি অক্সিজেনের ফিল্ট্রেসনে বাধা দেয়। এর ফলে রোগী অক্সিজেনের সংকটে ভোগে। এ সময় রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়।

হাইজ্যাকিং:
মজার ব্যাপার হলো, ভাইরাসটি একরনের হাইজ্যাকারের মতো। এরা কোষে প্রবেশ করে নিউক্লিয়াস, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ও গলগি বডিকে হাইজ্যাক করে নিজের RNA র কপি বানিয়ে নেয়। অন্যদিকে রাইবোজোমকে দিয়ে তার প্রয়োজনীয় সকল প্রোটিন বানিয়ে নেয়। পরবর্তীতে সব অঙ্গানু একসাথে (Assembly) হয়ে ভাইরাসের কপি হয়ে কোষটিকে মেরে ফেলে কোষের বাহিরে বের হয়ে যায়। (exocytosis)

ভাইরাসটি কিভাবে কোষের সাথে ফিক্সড হয়? (তালা-চাবি):
ভাইরাসটির স্পাইককে (S protein) যদি চাবির সাথে তুলনা করা হয় তবে এ চাবি দিয়ে মানুষের কোষের তালাকে (Receptor- ACE2) খোলা হয়। এই তালা চাবি র মিলনকে যদি আমরা কোন বিজ্ঞানি টার্গেট করে বন্ধ করতে পারি তাহলেই তৈরি হয়ে যাবে করোনার বিরুদ্ধে এন্টিভাইরাল।

লেখকঃ
ডা: মনোয়ার মাসুদ
ডিভিএম, এম.এস (মাইক্রোবায়োলজি)




  এ বিভাগের অন্যান্য