www.agribarta.com:: কৃষকের চোখে বাংলাদেশ
শিরোনাম:

করোনার একমাত্র প্রতিষেধক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: কিভাবে তা বাড়াবেন?


 এগ্রিবার্তা ডেস্কঃ    ১২ এপ্রিল ২০২০, রবিবার, ১০:৪৯   সম্পাদকীয় বিভাগ


করোনা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ 'কোভিড-১৯' ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে প্যানডেমিক আকার ধারন করেছে। এ রোগে এরই মধ্যে প্রান গিয়েছে এক লক্ষেরও বেশি মানুষের (১২ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত)। এ রোগের প্রতিষেধক তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা তেমন কোন সুখবর আমাদের দিতে পারেননি। এ পরিস্থিতিতে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করবার একটিই মাত্র অস্ত্র রয়েছে। আর সেটি হলো ঘরে থাকা আর নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো।

কেন দরকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো?
এ রোগটি একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ। অন্যান্য কোন জীবানু (যেমন, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, মাইকোপ্লাজমা, প্রটোজোয়া বা পরজীবি) দ্বারা শরীরে কোন রোগের আবির্ভাব হলে সেটির বিরুদ্ধে সহজেই ওষুধ প্রয়োগ করে সেই রোগকে নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব। কিন্তু, কোভিড-১৯ এর কোন প্রতিষেক না থাকায় আপনার শরীরকেই এ রোগের ভাইরাসের বিরুদ্ধে দূর্গ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় 'ইমুউনিটি বুস্টিং'। ঘরে বসেই আপনি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে অনুসরণ করে সহজেই আপনার ইমুউনিটিকে বুস্টিং করতে বা দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারেন।

১. ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন:
আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে প্রথমত আপনাকে প্রতিদিন পরিমিত পরিমানে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার গ্রহন করতে হবে। একজন সুস্থ্য মানুষের দেহে প্রতিদিন প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি প্রয়োজন হয়। ভিটামিন-সি শরীরের ইমিউনো সিস্টেমের বিভিন্ন কোষের রোগ প্রতিরোধী ভূমিকায় সরাসরি সাহায্য করে। যেমন, এটি শরীরের ডিফেন্সিভ ম্যাকানিজমের অন্যতম সৈনিক ম্যাক্রোফেজকে ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবানু ভক্ষণে সাহায্য করে। এছাড়াও কিছু কিছু লিম্ফোসাইটের রোগ প্রতিরোধী ভূমিকাতেও ভিটামিন-সি সাহায্য করে।

অপর দিকে এটি এন্টিঅক্সিডেন্টেরও অন্যতম উৎস। টক জাতীয় ফল যেমন, লেবু, আমলকি, পেয়ারা, তেতুল এমন কি কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-সি থাকে। কাঁচা হলুদ এবং আদাতেও ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। মধু বা কুসুম গরম পানিতে লেবুর রসের শরবত ভিটামিন-সি গ্রহনের একটি অন্যতম পদ্ধতি। তবে, ভিটামিন-সি জাতীয় কোন ট্যাবলেট গ্রহন না করাই ভালো। এতে অনেক সময় লিভার ও কিডনিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

২. নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য ও যথেষ্ট পরিমানে সবুজ সবজি গ্রহন:
নিয়মিত সবুজ সবজি গ্রহন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সবুজ সবজিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য গ্রহনের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় প্রচুর সবুজ সবজি রাখা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। খাদ্য গ্রহনে খুব তড়িঘড়ি না করে যথেষ্ট সময় নিয়ে খাবার খেতে হবে। এতে খাদ্য হজমে বিভিন্ন এনজাইম যথেষ্ট সময় পায় ও উৎকৃষ্ট পরিমানে নিউট্রিয়েন্টস শোষণের হার বাড়ে।

৩. ব্যায়াম :
বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য জরুরি, তেমনি যথেষ্ট পরিমান ব্যায়াম করাটাও জরুরি। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি একটি খুবই ভালো ব্যায়াম। সম্ভব হলে মেডিটেশন বা ইয়োগাও করা যেতে পারে।

৪. টাইমিং:
খাদ্য গ্রহনে টাইমিংয়ের পাশাপাশি ঘুমানোরও টাইমিং হওয়া প্রয়োজন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। এ ঘুমটি অবশ্যই রাতের একটি বড় অংশ জুড়ে হতো হবে। মনে রাখতে হবে, ঘুম বা রেস্টিং ফেজ হলো মানুষের শরীরের ন্যাচারাল হিলিং পিরিয়ড। শরীরের কোন কোষ আঘাত বা আক্রমন প্রাপ্ত হলে এ ঘুম বা হিলিং পিরিয়ডেই তার ক্ষয়রোধ হয়। এ ক্ষেত্রে শরীরের অন্ধকার পিরিয়ডেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাবার পাশাপাশি ভোরে ঘুম থেকো উঠে পড়াও জরুরি।

তবে মনে রাখতে হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা একদিনের কাজ নয়। এ অভ্যাসগুলো আপনার নিয়মিত চর্চা করতে হবে। অভ্যাস বদলান, আপনি সুস্থ্য থাকবেন।

লেখকঃ
ডা. মনোয়ার মাসুদ
ডিভিএম, এম.এস
রিসার্চ ফেলো কেএনইউ, দক্ষিণ কোরিয়া।




  এ বিভাগের অন্যান্য