প্রাণিসম্পদ হতে আসে ৭৬%, ফিশারিজ হতে ২৪%

আমরা সবাই কম বেশী একটা তথ্যের সাথে পরিচিত যে, বাংলাদেশের মোট প্রাণিজ প্রোটিন সরবরাহের ৬০% বা ৮০% আসে মৎস্যখাত থেকে বাকিটা প্রাণিসম্পদ থেকে কিন্তু এ তথ্যের সত্যতা নির্নয়ে কখনও পরিসংখ্যান কিংবা যুক্তির আশ্রয় নেওয়া হয় না বরং বারবার চেষ্টা করা হয় যেকোনভাবে এই তথ্যকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু এর বিপরীতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন, USDA ও FAO এর রিপোর্টে দেখা যায় দেশের প্রাণিজ আমিষের সরবরাহের ৭৬% আসে প্রাণিসম্পদ হতে, ফিশারিজ হতে আসে মাত্র ২৪%। বাংলাদেশের মোট প্রাণিজ প্রোটিন সরবরাহের ৬০% বা ৮০% আসে মৎস্যখাত থেকে, এই মিথ্যা দাবির ময়নাতদন্তে আজকে লেখার মূল বিষয়বস্তু।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২০১৮-১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্যকে উপস্থাপন করলে আমরা পাই,
এবার আসি কোন প্রাণিজ উৎস থেকে আমরা কত শতাংশ আমিষ পাচ্ছি -
এবার আসি জাতীয় সরবরাহে কোন খাতের নিট সরবরাহ কত-
মৎস্য খাত
প্রাণিসম্পদ খাত

উপরের তথ্য থেকে আমরা যোগ করলেই মোট প্রাণিজ আমিষের যে চিত্র পাই, তা হচ্ছে মৎস্যখাত থেকে ৭.৪৫ লক্ষ মেট্রিক টন এবং প্রাণিসম্পদ খাত থেকে ২৩.৯৩ লক্ষ মেট্রিক টন। যা শতকরা হিসাবে মৎস্যখাতের জন্য ২৪ এবং প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য ৭৬ শতাংশ হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, কেউ কেউ হয়ত মৎস্য কিংবা প্রাণিসম্পদের উৎস সমূহ থেকে প্রাপ্ত আমিষের শতকরা হিসাবে ১-২% কম বেশী করতে পারেন কিন্তু তাতেও মোট শতাংশে বেশি পরিবর্তন হওয়ার কথা না।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের বিদায়ী প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু উপস্থাপিত তথ্য অনুসারে জানা যায়, দেশের মোট প্রাণিজ আমিষের ২৪% আসে মৎস্য খাত থেকে এবং ৭৬% আসে প্রাণিসম্পদ খাত থেকে। যা উপরোক্ত হিসাবকেই সত্যায়িত করে মাত্র। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একটি অঞ্চলের গবেষণা রিপোর্ট ও উপরোক্ত দাবীকেই প্রমাণিত করে, যেখানে দুধকে হিসাবেই আনা হয়নি। গবেষনা রিপোর্টটি পাওয়া যাবে এখানে।
এবার যদি আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ধারাবাহিক উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করি, তাহলে নিম্নোক্ত তথ্য সমূহ পাব-
২০১০-১১ অর্থ বছরে -
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে -
তথ্যসূত্র :
উপরের ধারাবাহিক তথ্যেও দেখা যায় কোন সময়ই মৎস্য উৎপাদন মোট প্রাণিসম্পদ পন্যের সমান বা বেশি ছিলোনা। তারপরেও অবাক হতে হয়, যখন আমরা দেখি অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক বা সরকারি উচ্চপদস্থ ক্যাডার অফিসার কেউ মিডিয়াতে মৎস্য খাতের এই ২৪% প্রাণিজ আমিষ সরবরাহকে কে ৬০% কিংবা কেউ আরেকটু বাড়িয়ে ৮০% ও বলে। অনেক সময় জাতীয় সংবাদ মাধ্যমসমূহকেও বিভ্রান্তিতে ফেলানো হয় কেননা আমরা দেখি কিছু কিছু জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে ৬০% প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ করছে মতস্যখাত। এমনকি জেলা, উপজেলার সমন্বয় সভায় মাথাপিছু ৬০গ্রাম মৎস্য প্রাপ্তিকে ৬০% প্রাণিজ আমিষ প্রাপ্তি বলে চালিয়ে দেয়া হয়।
আমরা মনে করি, এখন ই উপযুক্ত সময় এই বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধান করার, যার যতটুকু অবদান ততটুকুন প্রচার করার মাঝেই সম্মান। কিন্তু উচ্চপদস্থ কারো মুখে মিথ্যা তথ্য যেমন একটি অধিদপ্তরের অর্জনকে ছোট করে, তেমনি সেই অধিদপ্তরের নৈতিক ভিত্তিকেও ঠুনকো প্রমান করতে যথেষ্ট। যার যতটুকু প্রাপ্য ততটুকু মর্যাদা প্রদাণ করা সময়ের দাবি, ভূল তথ্য যেমন জনগনকে বিভ্রান্ত করে তেমনি পলিসি মেকিং এ ভুল পথ দেখায়। তাই জাতীয় স্বার্থেই আমাদের উচিত সঠিক তথ্যের ভিত্তিতেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের।
লেখকঃ
ডাঃ মোঃ নূরে আলম
ভেটেরিনারি সার্জন,
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকা।
আএলএসটি, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
nurealamdr@gmail.com