www.agribarta.com:: কৃষকের চোখে বাংলাদেশ
শিরোনাম:

সর্বস্তরে প্রাণিসম্পদ সেবা দিতে প্রয়োজন ইউনিয়ন পর্যায়ে ভেটেরিনারি সার্জন


 এগ্রিবার্তা ডেস্কঃ    ৮ মে ২০২০, শুক্রবার, ৯:৪৫   সম্পাদকীয় বিভাগ


প্রাণিজ প্রোটিনের ঘাটতি মোকাবেলায় এবং ব্যাপক বেকার সমস্যা দূর করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে জনগুরুত্ব বিবেচনায় প্রাণিসম্পদ বিভাগকে জরুরী বিভাগ হিসেবে ঘোষনা করা একান্ত প্রয়োজন। সেইসাথে প্রাণিসম্পদ বিভাগের জনবল সমস্যা নিরসনকল্পে প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম দ্রুত বাস্তবায়ন এবং প্রতিটি ইউনিয়নে ভেটেরিনারি সার্জন নিয়োগ প্রদান একান্ত অপরিহার্য। এর মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ সেবা জনগনের দোরগোড়ায় পৌছে দেয়া সম্ভব হবে। প্রতিটি উপজেলায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা ও রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা সম্বলিত ভেটেরিনারি হাসপাতাল নির্মান এবং ভ্রাম্যমান ভেটেরিনারি ক্লিনিক চালুকরণ একান্ত প্রয়োজন।

জাতীয় ডেইরী ও পোল্ট্রি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠনের মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়ের বিশেষায়িত গবেষণা, মান নিয়ন্ত্রন, প্রকল্প প্রণয়ন পূর্বক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। প্রাণিজাত পণ্য বিপননে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ বিপনন দপ্তর নামে একটি উইং খোলা এখন সময়ের দাবী। এর ফলে খামারীদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করণ এবং প্রাণিজপণ্য বিক্রয় কেন্দ্র সমূহ তদারকি ও রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনা সহজ হবে।

ক্ষতিগ্রস্থ খামারি ও বেকার প্রাণিসম্পদ শ্রমিকদের সরকারি ত্রান সহায়তার আওতায় নিয়ে আসা এবং এককালীন অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা। বন্ধ হয়ে যাওয়া খামারগুলোকে চালু করতে বিশেষ প্রণোদনার আওতায় খামারিদের আর্থিক অনুদান নিশ্চিত করা। করোনাকালীন সময়কার বিদ্যুৎবিল মওকুফসহ সকল খামারের বৈদ্যুতিক বিলে ভর্তূকী প্রদান এবং কৃষি রেটে বিল প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী প্রয়োজন।

চলমান খামারগুলোর ব্যাংক লোনের কিস্তি স্থগিত করন ও সুদ মওকুফ করন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রনোদনা যেন প্রকৃত খামারী পায় সেজন্য সঠিক নীতিমালা প্রনয়ন প্রয়োজন। ঋণ আবেদনপত্র খামারীগণ উপজেলা কৃষি ঋণ কমিটির সভাপতি ( উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) এর নিকট জমা প্রদান করবেন এবং সভাপতি সেটা যাচাই বাছাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ( উপজেলা প্রাণিসম্পদ/মৎস্য/কৃষি কর্মকর্তা) এর নিকট প্রেরণ করবেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সুপারিশ এর প্রেক্ষিতে সভাপতি ব্যাংক প্রতিনিধিসহ প্রাথমিক তালিকা প্রণয়ন করবেন। উপজেলা কৃষি ঋণ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে জেলা কৃষি ঋণ কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি তদারকি টিম গঠন করতে হবে যেন কোন খামারী গ্রহনকৃত টাকা অন্যখাতে ব্যবহার না করতে পারেন। এক্ষেত্রে খামারীদের নিকট থেকে স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা নেয়া যেতে পারে।

প্রকৃত প্রান্তিক খামারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ঋণ প্রাপ্তি নীতিমালা সহজীকরণ পূর্বক খামারী বাছাইয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রনয়ন করতে হবে। ঋণ প্রাপ্ত খামারীকে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষন, নিয়মিত পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা সংশ্লিষ্ট প্রানিসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে এবং প্রাণিসম্পদ বীমা ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।

কুমিল্লাসহ যে সকল জেলায় দুধ বিক্রয়ের কোন সেন্টার নেই (আড়ং, মিল্ক ভিটা, প্রাণ) সেই সকল জেলায় প্রণোদনার মাধ্যমে (বেসরকারী উদ্যোক্তা বা সমিতির পরিচালনায়) দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করা প্রয়োজন। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে খামারীদেরকে দুধ পরিবহনের জন্য মিল্ক ক্যান ও কুল ভ্যান (যাতে দুধের গুণগত মান দীর্ঘক্ষণ বজায় থাকে) বিনামূল্যে বা ভর্তূকী মূল্যে (কৃষি সেক্টরের ট্রাক্টর এর অনুরুপ) সরবরাহ প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া মিল্কিং মেশিন, চপার মেশিন, ক্রিম সেপারেটর, সাইলেজ মেকিং মেশিন ইত্যাদিসহ প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যবহ্রত সকল মেশিনারিজ ক্রয়ে ভর্তূকী প্রদানের মাধ্যমে খামারীদের এখাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা যেতে পারে। প্রয়োজনীয় সহযোগীতার মাধ্যমে (বেসরকারী উদ্যোক্তা বা সমিতির পরিচালনায়) প্রতিটি জেলা ও উপজেলা সদরে এক বা একাধিক প্রাণিজ পুষ্টি বিক্রয় আউটলেট স্থাপন করা প্রয়োজন যেখানে ভোক্তাগণ খামারের উৎপাদিত খাটি, এন্টিবায়োটিক বা ভেজালমুক্ত প্রাণিজ পণ্য (দুধ, ডিম, ড্রেসড পোল্ট্রি ) সুলভমূল্যে ক্রয় করতে সক্ষম হবেন।

গাভীর খামার লাভজনক করতে হলে কাঁচা ঘাসের কোন বিকল্প নেই, সেজন্য খামারীদের ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ঘাসের বীজ ( ভূট্টা, সরগম, জাম্বু, মাসকালাই ইত্যাদি) , সার, ও সাইলেজ তৈরীতে সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। এর প্রভাবে দানাদার খাদ্যের উপর চাপ কম পড়বে এবং গাভী পালনে খাদ্যখরচ কম হওয়ায় খামারী লাভবান হবেন। এজন্য দেশব্যাপী ব্যাপক ঘাস চাষের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।

নিয়মিত টিকা প্রদান ও কৃমিনাশক খাওয়ানোর মাধ্যমে গবাদিপশুর উৎপাদন ৩০ ভাগ বৃদ্ধি এবং মৃত্যুহার ৩০ ভাগ হ্রাস করা সম্ভব। তাই এই দুটি ক্ষেত্রকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে টিকা ও কৃমিনাশক প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। উল্লেখ্য যে বর্তমানে যে পরিমান কৃমিনাশক বা টিকা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মাধ্যমে বিতরণ করা হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

বর্তমানে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মক্ষেত্র এত বিস্তৃত যে প্রাণিসম্পদ রক্ষার্থে এবং খামারীদের কল্যাণে উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জনকে সর্বদা ব্যাস্ত থাকতে হয়। অনেক উপজেলায় মাত্র একজন কর্মকর্তা উভয় দায়িত্ব পালন করছেন। এমতবস্থায় প্রাণিসম্পদ সেবা অবিরত রাখা, প্রাণিসম্পদ উৎপাদন ও খামারীদের কল্যানে অধিকতর মনোনিবেশ করার স্বার্থে উক্ত কর্মকর্তাদ্বয়কে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন- পরীক্ষার ডিউটি, ট্যাগ অফিসার হিসেবে চাল বিতরণ, টিআর কাবিখা কার্যক্রম পরিদর্শন ইত্যাদি থেকে অব্যাহতি (জরুরী দুর্যোগ ব্যতীত) প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী।

খামারী যেন একটি নির্দিষ্ট মোবাইল নাম্বার থেকে সর্বদা সেবা গ্রহণ করতে পারেন সেজন্য উপজেলা কর্মকর্তাদের পদবীর বিপরীতে কর্পোরেট সিম প্রদান এবং তাদের মোবাইল ভাতা প্রাপ্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা আশু প্রয়োজন। জাত উন্নয়নে কৃত্রিম প্রজনন নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়নসহ প্রতিটি ইউনিয়নে কৃত্রিম প্রজনন কর্মী নিয়োগ এবং সিমেন ও নাইট্রোজেন এর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

খামারীদের তাৎক্ষনিক সেবা প্রদানের সুবিধার্থে ভেটেরিনারি সার্জন ও উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সরকারীভাবে মটরসাইকেল প্রদান এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত প্রাণিসম্পদ কর্মীদের সুদবিহীন কিস্তীতে মটর সাইকেল ক্রয়ের সুবিধা প্রদান এখাতের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। পোল্ট্রি ও পশুখাদ্য, মুরগীর বাচ্চা ইত্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণে এবং ভারত থেকে ১ দিনের বাচ্চা, ডিম, মাংস আমদানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন একান্ত জরুরী। দুগ্ধ শিল্পকে লাভবান ও বিকশিত করার স্বার্থে বিদেশ থেকে গুড়োদুধ আমদানী সম্পূর্নভাবে বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।

লেখকঃ
ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা
কুমিল্লা




  এ বিভাগের অন্যান্য