
প্রতিবছর মাসব্যাপী ইঁদুর নিধন অভিযান চালায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি বিভাগ। এবারও ১১ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত মাসব্যাপী ইঁদুর নিধন অভিযান চলমান আছে।
১৬ অক্টোবর উপজেলা পরিষদ চত্বরে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা আয়োজনের মাধ্যমে অভিযানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন। কিন্তু এই ইঁদুর নিধন কার্যক্রমের অভিযান শুধু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে ইঁদুর নিধন অভিযান কখনো হয়নি। কোথাও কোনো কৃষকের কাছে বিতরণ হয়নি ইঁদুর নিধনের ফাঁদ কিংবা বিষ। কেউ দেখেননি অভিযানের মাসে সুনির্দিষ্ট একটি এলাকায় ইঁদুর নিধন করতে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ইঁদুর নিধন কর্মসূচি কৃষকদের কাছে হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, তারা মাসব্যাপী ইঁদুর নিধনের বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করছে। দিচ্ছে নানা পরামর্শ। ইঁদুর নিধনের উপকরণ বিতরণে সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকায় শুধু পরামর্শেই এ অভিযান চলছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
‘৫ সেপ্টেম্বর লাভের ফসল কেটে নিচ্ছে ইঁদুর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কৃষি বিভাগ জানিয়েছিল, ছয় হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। মোট আউশ চাষের ১০ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ধান নষ্ট করেছে ইঁদুর। গেল আউশের সময় ১৬০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছিলেন উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের কৃষক কাজী নাজিম উদ্দিন। ফলন আসার আগমুহূর্তে তাঁর মোট ৩২ শতক জমির ধান কেটে নষ্ট করে ইঁদুর। দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কোনো ওষুধে কাজ হয়নি।
কৃষক নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ইঁদুর তাঁর আমন ধানও নষ্ট করতে শুরু করেছে। এবার তার চেয়েও আগাম আমন ধানের চাষ যাঁরা করেছেন, তাঁদের ক্ষতি হয়েছে বেশি। সরকারি ব্যবস্থাপনা ছাড়া কৃষকের পক্ষে ইঁদুর দমন সম্ভব নয়।
বসরতনগর গ্রামের কৃষক আদিত্যনাথ বলেন, উপজেলায় যত কৃষক আছেন, প্রত্যেকেই ইঁদুরের উৎপাতে কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। বাজারে যত ধরনের ইঁদুর মারার ওষুধ আছে, সব ব্যবহার করছেন কৃষকেরা। তবু ইঁদুরের উৎপাত কমছে না। কৃষি কর্মকর্তাদের শুষ্ক মৌসুমে দেখা গেলেও বর্ষায় কাউকে মাঠে দেখা যায়নি।
ইঁদুর দমন অভিযানকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন গুলিয়াখালীর কৃষক নুর উদ্দিন। তিনি বলেন, উপজেলা সদরে ব্যানার নিয়ে মিছিল করলে মাঠের ইঁদুর যাবে না। এ জন্য কৃষককে আর্থিকভাবে অথবা প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির শুরুতে ইঁদুর নিধনে কৃষকদের সরকারিভাবে সহায়তা করা হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন প্রতিবছর ইঁদুর নিধন অভিযানের জন্য খুব সামান্য টাকা (৪ হাজার টাকা) সরকার বরাদ্দ দেয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, মাসব্যাপী ইঁদুর নিধন বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। মাসব্যাপী কৃষকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাঁদের ইঁদুর মারার যত পদ্ধতি আছে, তা শিখিয়ে দেবেন।