
বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বিশ্বের যেসব দেশের মানুষজন ভাত খায় সেই তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ দ্বিগুণ ভাত খায়। তিনি চালের চাহিদা কমাতে ভাত কম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে রোববার তিনি এসব মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রতি গড়ে প্রায় ২০০ গ্রাম চাল খায়।
কিন্তু বাংলাদেশে জনপ্রতি গড়ে চাল খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ৪০০ গ্রাম। বাংলাদেশের মানুষ কেন বেশি ভাত খায়?
বক্তব্যের যেসব সমালোচনা হচ্ছে
কৃষিমন্ত্রী অবশ্য আরও বলেছেন, বাংলাদেশকে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য দেয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু ভাত বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাবার, প্রিয় খাবার। তাই তার এই বক্তব্যের 'ভাত কম খান' অংশটির দিকেই বেশিরভাগের মনোযোগ চলে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই হাস্যরস করেছেন। আবার অনেকে তার সমালোচনা করছেন।
দেশের প্রথম সারির একটি বাংলা দৈনিকের ফেসবুক পাতায় এই খবরটির নিচে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কমেন্ট পড়েছে।
সেখানে ঠাট্টা করে একজন লিখেছেন, "চালের দাম আর একটু বাড়াইয়া দেন এমনিতেই মানুষ কিনতে পারবে না।"
আর একজনের মন্তব্য, "ধনী ব্যক্তিরা ভাত কম খেয়ে, কাজুবাদাম, খেজুর, আপেল, মাল্টাসহ বিভিন্ন বিদেশি ফল খায়। আর গরু, খাসি, ভেড়ার মাংসতো আছেই। গরীবের ভাত, রুটি সম্বল। এটাও যদি খেতে না দেন তাহলে বেঁচে থাকাই কষ্ট।"
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ফেসবুক পাতায় একজন লিখেছেন, "ক্ষেত খামারে কাজ করে দেখেন যে কৃষি কাজ কত কঠিন। কষ্টের কাজ তাই ভাত খাই বেশি।"
আর একজন লিখেছেন, "আপনারা বাসমতীর কোরমা পোলাও খান। সাধারণ মানুষের ডাল-ভাতও খাওয়া বন্ধ করে দিন।"
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এমন বক্তব্য দেয়ার আগে কৃষিমন্ত্রীর সংবেদনশীল হওয়া উচিৎ ছিল কি না।
যেসব কারণে বাংলাদেশের মানুষ ভাত বেশি খায়
পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলছেন, একটি এলাকার মানুষের প্রধান খাবার কি হবে তা নির্ভর করে ওই অঞ্চলের আবহাওয়াগত কারণে যে খাদ্য বেশি উৎপাদন হয় তার উপর।
"আবহাওয়া ও ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবেই ধান চাষের জন্য খুব উৎকৃষ্ট জায়গা। পুরো বাংলাদেশ জুড়ে ধান চাষ হয়। সারা বছর জুড়ে নানা জাতের ধান হয়। তাই বাংলাদেশের মানুষ ভাত বেশি খাবে সেটাই স্বাভাবিক।"
তিনি বলছেন, একসময় পুরোটাই কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে খাবারের অভ্যাস কৃষকের দ্বারাই তৈরি হয়েছে।
তার ভাষায়, "কৃষকেরা কাজে যাওয়ার আগে দেখবেন সকালে ভরপেট ভাত বা পান্তা ভাত খায়। তাকে সারাদিন রোদে বৃষ্টিতে কাজ করতে হয়। ভাত শরীরে প্রচুর এনার্জি দেয়। বেশিক্ষণ পেট ভরা থাকে। গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখে। ভাতকে বলা হয় 'সুপার ফুড'। যারা প্রচুর কায়িক পরিশ্রম করে তাদের ভাত দরকার হয়।"
চালের প্রতিটি অংশ ব্যবহারযোগ্য। চাল দিয়ে ভাত ছাড়াও খিচুড়ি, বিরিয়ানি, পোলাও, পায়েস, ক্ষীর এরকম নানাবিধ খাবার তৈরি করা যায়।
চালের গুড়া দিয়ে হরেকরকম পিঠা তৈরি করা যায়। এমন বৈচিত্র্য বেশিরভাগ খাদ্য দ্রব্যের নেই।
দারিদ্র এবং ভাত
বাংলাদেশে এখন ধানের পাশাপাশি প্রচুর সবজি, রবি শস্য উৎপাদন হয়, মাছ চাষ হয়। দেশে প্রচুর মুরগির খামার রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে মাংস বিক্রির জন্য খামারে গরু লালনপালন করা হয়।
কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে এখনও দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ অর্থাৎ প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের পুষ্টিকর খাবার জোগাড়ের ক্ষমতা নেই।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং বাংলাদেশ সরকারের করা এক যৌথ সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।