www.agribarta.com:: কৃষকের চোখে বাংলাদেশ
শিরোনাম:

বোরো ঠিকমতো চাষ করতে না পারলে চালের দাম আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে


 দৈনিক বণিক বার্তা'র পক্ষ থেকে গৃহীত সাক্ষাৎকার    ৩১ আগস্ট ২০২২, বুধবার, ৬:৫০   সম্পাদকীয় বিভাগ


ড. এম আসাদুজ্জামান বিআইডিএসের প্রফেসরিয়াল ফেলো ও সাবেক গবেষণা পরিচালক। সরকারের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া দেশের খাদ্য, কৃষি ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক নীতি এবং গবেষণায় যুক্ত আছেন। দেশের অর্থনীতিতে রাশিয়া-ইউক্রেনের প্রভাব, কৃষিতে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব, সেচে পানির অপচয়, সরকারের খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য প্রভৃতি বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে বণিক বার্তার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

কভিডের পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের টানাপড়েনে পুরো বিশ্ব ব্যবস্থা এখন টালমাটাল। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। পুরো বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

প্রায় তিন বছর করোনা মহামারী চলেছে, যদিও এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এসেছে। কভিডে আন্তর্জাতিকভাবে সংক্রমণ ঘটলেও সেটা কীভাবে সামাল দেবে, তা অনেকটা নির্ভর করেছে অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপ ও নীতির ওপর। এটা মোটামুটি আমাদের হাতের মুঠোয় ছিল। কিছু অসংগতি থাকলেও বলতে হবে বাংলাদেশ ভালোই সামাল দিতে পেরেছে। এক চিকিৎসক আমাকে বলেছেন, যেসব দেশে ছোটবেলায় শিশুদের বিসিজি টিকা দিয়েছে, সেসব দেশে কভিডের প্রকোপ তুলনামূলক কম। বাংলাদেশে এ টিকা বাধ্যতামূলক। এদিক থেকে বাংলাদেশ হয়তো অন্য এক স্বাস্থ্য নীতির সুফল পেয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্যের ব্যাপার ছাড়াও আরেকটা বিষয়ে বাংলাদেশ অনেকটা উতরে যেতে পেরেছে, শিল্পে কিছুটা প্রভাব ফেললেও কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় কভিড বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।

কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলো, এখন এর প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হলো বাণিজ্য অবরোধ দেয়া হলে সমস্যাটা একটু অন্য ধরনের হয়ে গেল। আমরা জানি, গমের ক্ষেত্রে রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। যেহেতু আমাদের খাদ্যতালিকায় চালের পরই গমের অবস্থান, সেহেতু আমাদের ওপর একটা ধাক্কা এসেছে। একই সঙ্গে আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায়ও একটা আঘাত এসেছে। আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ কমে গিয়েছে। অনেকে মনে করেন, রিজার্ভ এখন ৩০-৩২ বিলিয়ন ডলারের ওপর হবে না। রিজার্ভ স্থবির কোনো সঞ্চিতি নয়। আমদানি বিল মেটাতে প্রতিনিয়ত খরচ হচ্ছে। আবার রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়লে পূরণ হচ্ছে। এটা এক চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মধ্যে যা সমস্যা বলে মনে হয় তা হলো অনাবশ্যক আমদানি অনেক বেড়েছে। এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, কোনো অর্থনীতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে গেলে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মধ্যে ভোগের ধরনে পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশেও এটা হয়েছে। এখনকার দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বিলাসপণ্য উদ্ভাবিত হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে জেনে যাই এবং কেনার ইচ্ছা মনের মধ্যে তৈরি হয়। এ ধরনের পণ্য যেগুলো জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যক নয়, সেগুলো আমদানি করার কারণে আমদানি বিল বেড়ে গিয়েছে। এ জন্যই বাণিজ্য ঘাটতির ব্যবধান স্ফীত হয়েছে এবং রিজার্ভ কমে গেছে। সব মিলিয়ে বাইরের ঘটনাপ্রবাহে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমি বলব, এসব উদ্যোগ যদি আরো এক বছর আগে তারা নিত, তাহলে আজকের এ দুর্ভোগ হতো না।

খাদ্য উৎপাদনে ভালো করার কারণে আমরা আগের অনেক সংকট মোকাবেলা করতে পেরেছি। কিন্তু এখন অনেকে বলছে, সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে করণীয় কী?

সংবাদ প্রতিবেদন যতটুকু পর্যালোচনা করেছি, সারের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধির বিষয়টি কৃষি মন্ত্রণালয় পরিষ্কার করে বলেনি। কিন্তু আমরা তা জানি। প্রথমত, ইউরিয়া আমরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ব্যবহার করছি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কেন করি? সেটা আমরা কিছুটা জানি। ব্যর্থতা হলো সরকারের। আমি সব সরকারেরই কথা বলব। সেটি হলো, ইউরিয়া কম ব্যবহার করেও যে একই ফলন পাওয়া যায় তা প্রমাণ করতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ব্যর্থ হয়েছে। কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। ডায়ামনিয়াম ফসফেটে তো নাইট্রোজেন আছে, সুতরাং এটি ব্যবহার না করে কেন ইউরিয়া ব্যবহার করছে? এটা মুখে বললে হবে না। কৃষককে পাশাপাশি দেখানো দরকার ছিল ইউরিয়া এত ব্যবহার না করেও ফলন বাড়ানো যায়। একটা বিষয় বুঝতে হবে। আমরা যখন সারের সুষম ব্যবহারের কথা বলি তখন পটাশ, ফসফেট, জিঙ্ক, ক্ষুদ্র পুষ্টিকণিকা সবই বলি। কিন্তু অন্য উপাদানগুলো অনেক সময় মেলে না। এখানে কিছু বিষয় আছে। এক, ইউরিয়া সবসময় পাওয়া যায়, অন্যগুলো সবসময় মেলে না। আবার ইউরিয়া বেশ খানিকটা দেশে উৎপাদন হয়, যদিও এখন অনেকখানি বাইরে থেকে আসে। কিন্তু অন্যগুলো পুরোটাই বাইরে থেকে আসে। কোনো কোনোটি পুরো বিশ্বে এক বা দুটি দেশই একমাত্র সরবরাহকারী। এক্ষেত্রে একটা অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। আমি জানি এবং কৃষকের সঙ্গেও কথা বলেছি, ইউরিয়া ব্যবহার করলে গাছ অনেক সবুজ হয়, দেখতে মনে হয় খুব ভালো হচ্ছে। এটাও একটা ফ্যাক্টর। এটা থেকে কৃষককে সরিয়ে নিয়ে আসার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের যে রকম জোরেশোরে প্রচারণা চালানো উচিত ছিল। সেটা তারা করেনি। ডেমোস্ট্রেশন প্লট করে দেখানো উচিত, এত কম ইউরিয়া ব্যবহার করেও আমরা একই ফলন পাচ্ছি। তারা এটা করতে পারত। কতটুকু করেছে, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এটা করলে নিঃসন্দেহে কৃষক আগ্রহী হতেন। কম পয়সা লাগলে কৃষক করবেন না কেন?

আরেকটা বিষয় হলো, কেজিপ্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে তাতে আমাদের ফলনে তেমন খরচ বাড়ার কথা নয়। সমস্যা হলো, সুষম ব্যবহারের জন্য অন্য উপাদানগুলো পাওয়া যাবে কিনা। একই সঙ্গে কৃষকের মনের মধ্যে একটা বিষয় আছে, ইউরিয়া ব্যবহার করতে হবে। তার পর আরেকটা বিষয় আছে, হয়তো প্রতি কেজিতে ২০-৫০ পয়সা বাড়ল, কিন্তু বেশকিছু ধান উৎপাদন করতে গিয়ে যদি তিন হাজারের জায়গায় ৪ হাজার টাকার ইউরিয়া কিনতে হয়, তখন ওই যে ১ হাজার টাকা বাড়তি ব্যয়, এর ধাক্কা লাগবে। প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সা বেশি লাগবে, সেটি চিন্তা করবে না। চিন্তা করবে মোট টাকাটা। সুতরাং এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টর। সারের দাম বৃদ্ধিজনিত বিষয়টি এভাবে এসেছে।

তবে তার চেয়ে বড় বিষয়, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। এর দাম বাড়ায় পাওয়ারটিলারে, সেচে অনেক বেশি খরচ বেড়ে যাবে। কীভাবে বাড়বে, তা কল্পনা করাও কঠিন। কেন্দ্র থেকে হয়তো বলা হচ্ছে, ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু মাঠে গিয়ে দেখা যাবে ১০০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাবেন অনেকে। এখানে আরেকটি বিষয় আছে যার ওপর কারো কোনো হাত নেই। তা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এ বছর সারা বিশ্বে খরা চলছে। পানির স্তর এত নিচে নেমেছে যে খাওয়ার পানি পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। আমাদের দেশে কয়েক বছর ধরে যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন কম বৃষ্টি হয়, পরে মোটামুটি বৃষ্টি হয়। এবার আষাঢ়ে তেমন বৃষ্টি হয়নি। শ্রাবণ মাস শেষ হয়ে গিয়েছে। ভাদ্র চলছে, তেমন বৃষ্টি হয়নি। এখন বৃষ্টি হলেও খুব একটা লাভ নেই। আমন অনেক জায়গায় ঠিকমতো রোপণ করা যায়নি। তাই আশঙ্কা, আমনের উৎপাদন কমবে।

বোরোতেও এর প্রভাব পড়বে। বৃষ্টি হয়নি। কাজেই ভূগর্ভস্থ পানির মজুদও কমে যাবে। আগে আমরা বৃষ্টি না হলে আমনে সম্পূূরক সেচ দিতাম অক্টোবরের দিকে। এখন তো রোপণের জন্যও সেচ দিতে হচ্ছে। তার মানে অনেক বেশি পানির প্রয়োজন হচ্ছে। বোরোর জন্য যে পানি লাগত তা তো নিঃশেষ হচ্ছেই, আবার রিচার্জিংও হচ্ছে না। আমাদের মোট চালের প্রায় ৬০ শতাংশ বোরো থেকে আসে। বোরো উৎপাদনের সময় দেখা যাবে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে মোট সেচের ৭০ শতাংশই নলকূপের মাধ্যমে দেয়া হয়। বিশেষ করে শ্যালো টিউবওয়েল ব্যবহার করা হয়। কাজেই অনেক জায়গায় হয়তো পুরোপুরি পানি পাওয়া যাবে না। এমনটা হলে অনেক জমিই অনাবাদি পড়ে থাকবে। বোরোর সময় অনাবাদি পড়ে থাকবে, অবস্থা কী হবে চিন্তা করুন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত যে খরাটা চলছে, তার ওপর কারো হাত নেই। কিন্তু তার পরও বলব, একটা হাত আছে। এ রকম অবস্থা যে আসতে পারে, তা আমরা বিশেষ কোনো চিন্তা করিনি।

ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে পানি বেশি ব্যবহার হয় বলে একটা অভিযোগ আছে...

এটা সত্যি, সেচের ক্ষেত্রে আমাদের প্রচুর পানির অপচয় হয়। সুতরাং বিশেষ করে শ্যালো টিউবওয়েলের ক্ষেত্রে পানির অপচয় রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যবস্থা যা হতে পারে তা হলো খরচ কমানো। সেচের জন্য ২ হাজারের জায়গায় ১ হাজার ৫০০ টাকা নেয়া হলে কৃষককে বলা যাবে, তোমার তো খরচ কমছে, তুমি এডব্লিউডি (পালাক্রমে জমি সেচ ও শুকানো) করো। তোমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি, কীভাবে করতে হবে। তখন সে আগ্রহী হবে যে তার একটু খরচ কমছে। আর যে পানি বিক্রেতা আছে, সে বলবে আমার তো আয় কমে গেল, তাহলে সে আয়টা কমপেনসেট করতে হবে। এটাকে সাধারণভাবে বলা হয় পেমেন্ট ফর ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস। আমি পানি সাশ্রয় করছি, ইকোসিস্টেম সার্ভিস দিচ্ছি, সুতরাং তার জন্য তাকে আমরা একটা পেমেন্ট দিচ্ছি? পেমেন্টটা আসবে কোথা থেকে। আমি মনে করি, পাইলটিং করা উচিত এবং প্রাথমিকভাবে সরকার থেকে বিষয়টি আসা উচিত। অনেকে বলতে পারে, এখন আবার কেন ভর্তুকি দেব? আমরা ইলিশ মাছ না ধরার জন্য জেলেদের সাবসিডি দিই না। এটাও তো পেমেন্ট ফর ইকোসিস্টেম সার্ভিস। গালভরা নাম দিই না বটে, কিন্তু কাজটা তো একই করছি। এ কাজটা সরকার করেছে বলেই তো গত কয়েক বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। সুতরাং আমরা এটা করে যে অভ্যস্ত না, সেটি নয়। আমরা তো করেছি। কাজেই আমরা পানির ক্ষেত্রেও এটা পাইলটিং করতে পারি। এ প্রেক্ষাপটে বলতে চাই, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পানি সংরক্ষণের একটা প্রকল্প আছে। সেখানে দুটি বিষয় দেখানোর একটা চেষ্টা আছে। একটা হলো, স্মার্ট কার্ডকে আরো কতদূর নেয়া যায়। আরেকটা হলো, পাইপের ব্যবহার। স্মার্টকার্ডে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ পানির অপচয় কমবে আর পাইপ দিলে আরো ৩০ শতাংশ কমবে। সে হিসেবে ৫০-৬০ শতাংশ পানি সাশ্রয় করা সম্ভব সুতরাং পরিপূর্ণভাবে এটা করা উচিত। এর সঙ্গে শ্যালো টিউবওয়েল এডব্লিউডি নিয়ে আসতে পারি, তাহলে পানির ব্যবহার অনেক কমানো সম্ভব। আজকের এ সমস্যা একদিনে তৈরি হয়নি, দীর্ঘদিনে হয়েছে। এখানে একটা বড় ধরনের নীতি ব্যর্থতা আছে।

আপনি কি সামনের বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কিত?

এবার বোরো মৌসুমে আমাদের কষ্ট হতে পারে। চালের দাম কত উঠবে, আমি জানি না। বোরো যদি আমরা ঠিকমতো চাষ না করতে পারি (না করতে পারার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে), তাহলে দাম অনেক বাড়ার আশঙ্কা আছে। ১৯৭৪ সালে কিন্তু উৎপাদনের ঘাটতি হয়নি; লোকের খাদ্যের অভিগম্যতা ছিল না। অমর্ত্য সেন যেটাকে বলেছেন এনটাইটেলমেন্ট। আয় ছিল না, কর্মসংস্থান ছিল না। কিন্তু খাদ্যের লভ্যতা ছিল। এখন তো ভয়াবহ মাত্রায় উৎপাদনে ঘাটতি হয়ে যেতে পারে। তখন টাকা থাকবে। কিন্তু মানুষ কিনতে পারবে না। সমস্যা হলো, পৃথিবীর অন্য দেশগুলোয়ও একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।

এখনো তো চাল রফতানি কেউ বন্ধ করেনি। আপনার কি মনে হয় আমদানির মাধ্যমে সরকারের চালের মজুদ গড়ে তোলা উচিত?

আমি মনে করি, সামনের আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় চালের পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তোলা এবং উন্নত মানের অনেক সাইলো স্থাপন করা উচিত। এগুলোই মেগাপ্রজেক্ট হওয়া প্রয়োজন। এখন থেকেই ফরওয়ার্ড পারচেজিং করা উচিত। ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের হাতে অবশ্যই চালের পর্যাপ্ত মজুদ রাখতে হবে কিংবা সরকার যদি ব্যক্তি আমদানিকারকদের এটা বলে যে তোমরা আমদানি করবে ঠিকই কিন্তু আমাকে হিসাব দিতে হবে, কত এনেছ, কত মজুদ আছে। প্রতি সপ্তাহে আমি স্পট বা ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন করব। তোমরা যা তথ্য দিচ্ছ, তা সঠিক কিনা। বাংলাদেশের কয়েক জায়গায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সার্ভার থাকবে, যাতে যেকোনো জায়গা থেকে সরকার তথ্য পেতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে ভাবার এখনই সময়।

মূল্যস্ফীতি এবং দারিদ্র্য এ দুটি ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে বলে মনে করছেন?

মূল্যস্ফীতি একটা বড় উদ্বেগের বিষয়। এখানে যে বেশকিছুটা আমদানি মূল্যস্ফীতি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সামনে বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। এটা না বাড়লে বাকি মূল্যস্ফীতি তেমন একটা দেখার দরকার নেই। দরিদ্র মানুষের অবস্থা ক্রমেই সঙ্গিন হচ্ছে। এমনকি উচ্চবিত্ত ছাড়া মধ্যবিত্তও যথেষ্ট কষ্টের মধ্যে পড়েছে। ডিমের দাম বাড়ার দুটি কারণ ছিল। একটা হলো, অন্য খাবারের তুলনায় ডিম সস্তা হওয়ায় অনেকেই ডিমের প্রতি ঝুঁকেছিল। ফলে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে সবকিছুর যেহেতু দাম বেড়েছে, তাই ডিমের দামও বেড়ে গিয়েছিল। এটাই হলো ঘটনা। প্রতিটি ডিমের জন্য তো আর বাড়তি পরিবহন লাগছে না। এর জন্য তো বাড়ার কথা নয়। সবকিছু যেহেতু বাড়ছে, তাই ডিমের দামও বাড়াতে হবে। এই হলো ব্যাপার। এখানে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উপায় নেই। এটা করলেও গ্রামের লোকের চেয়ে শহরের খেটে খাওয়া মানুষ বেশি ভুগবে। গ্রামে তো শাক-লতাপাতা কুড়িয়ে এনে খাবারের ব্যবস্থা করা যায়, শহরে তো সেটা করা যায় না। এর ফলে পুষ্টির যথেষ্ট ঘাটতি হবে।

অনেকেই শ্রমিকের রেশনের কথা বলেছেন। সরকার ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে খাদ্য দিচ্ছে...

সারা বিশ্বে এগুলোই হয়। একই বিষয় ব্রিটেনে ঘটলে তারাও রেশনিংই করবে। কিন্তু তাদের ব্যবস্থাপনাটা অনেক ভালো হবে। আমাদের মতো এ রকম হবে না। যার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। চেক অ্যান্ড ব্যালান্স বলে কিছু নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। আমরা কেন জানতে পারি না, প্রতিটি ব্যবসায়ীর খাদ্যপণ্য কতটা ইন হয়েছে আর কতটা আউট হয়েছে। এ হিসাব কেন খাদ্য মন্ত্রণালয় নিতে পারে না। নিবন্ধিত সব ব্যবসায়ীর প্রতি সপ্তাহে এটা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা সার্ভারে, ওয়েবসাইটে আসবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় বুঝবে, কত পণ্য কী অবস্থায় আছে। কেন এটা পারি না?




  এ বিভাগের অন্যান্য