
সম্প্রতি কিছু ছাত্র (সম্মানিত একজন শিক্ষকও) অর্গানোগ্রাম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত দুটি ডিগ্রীর (ডিভিএম ও এএইচ) বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কিছু জিজ্ঞাসা নিচে তুলে ধরা হল।
আপনি যে ডিগ্রী নিয়ে শিক্ষকতা/চাকুরী/ পড়াশোনা করছেন মানে ডিভিএম ডিগ্রী একটি বিশ্বমানের ডিগ্রী। কি কারনে আপনার মনে হচ্ছে যে এ ডিগ্রীটি অসম্পূর্ণ। এর সঙ্গে এএইচচ কে নিয়ে সম্পূর্ণ করতে হবে। এটিকে কম্বাইন্ড করার কথা বলে একদিকে আপনি দুটি বিশ্বমানের ডিগ্রীর প্রতি আঙ্গুল তুলছেন অন্যদিকে আপনার নিজের ডিগ্রীকে অপমান করছেন। আপনার কাছে বিনয়ের সাথে জানতে চাই যে বিশ্বের কোথাও কি ডিভিএম ডিগ্রী নেই? আমার জানামতে বিশ্বে এটি একটি স্বনামধন্য ডিগ্রী।কম্বাইন্ড করার মাধ্যমে আপনি এরকম একটি ডিগ্রীকে বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলতে চাচ্ছেন। ডিভিএম ডিগ্রী নিয়ে যারা ডক্টর হত, তাদের আপনি বিএসসি ডিগ্রীর আওতায় আনতে চাচ্ছেন। ডক্টর অফ ভেটেরিনারী মেডিসিন আর বিএসসি ইন ভেট সায়েন্স যে এক নয় এটি তো বুঝবেন নিশ্চয়।
আপনি কি ভেবে দেখেছেন কম্বাইন্ড করার কথা ভাবতে গিয়ে আপনি নিজের ডিগ্রীটাকে ছোট করছেন। এ দু ফ্যাকাল্টির প্রায় ২০০০০ (বিশ হাজার) গ্রাজুয়েট যাদের অনেকেই এ ডিগ্রী (ডিভিএম বা এএইচ) নিয়ে গর্ব করেন, অহংকার করেন। অনেকেই স্ব স্ব জায়গায় কাজ করে প্রাণিসম্পদের উন্নতিতে অবদান রাখছেন। কম্বাইন্ড ডিগ্রীর কথা বলে (বলতে চেয়েছেন ডিগ্রীদুটো এককভাবে কার্যকর নয়, তাই কম্বাইন্ড দরকার) আপনি তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন , প্রাণিসম্পদে তাদের অবদানকে সন্দিহান করে তুলেছেন। কিন্তু যারা এই ডিগ্রীটাকে (ডিভিএম) নিয়ে গর্ববোধ করেন, তাদের কথা চিন্তা করছেন কি?
আপনি বলছেন দুধরনের গ্রাজুয়েট বের হওয়ার কারনে তাদের প্রোডাকশন (জাত ও পুষ্টি) ও রোগব্যধির মধ্যে সম্পর্কটা অজানা থেকে যাচ্ছে। তাই তাদের এক করা প্রয়োজন। এটির সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষন করছি বিনয়ের সঙ্গে। আপনার ভাষ্যমতে বর্তমান বাংলাদেশে এরকমভাবে মার্জ করে কয়েকটা ডিগ্রী থাকলেই হত। তারা একসঙ্গে অনেক জ্ঞান রাখতো। একটি ইন্ডাস্ট্রিতে শুধুমাত্র একজন নিয়োগ দিলেই হত। বিশেষ বিশেষ দক্ষতার জনবল দরকার নেই। বাকৃবিতেই এত ডিগ্রীর ও দরকার ছিলো না তাহলে। আপনার ভাষ্যমতে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এর আলাদা ডিগ্রীর দরকার নেই (এগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং তো আছেই), আবার ফিশারিজকে আলাদা ডিগ্রী না দিয়ে বিএসসি ভেট সাইন্স, এএইচ এন্ড ফিশারিজ নামে একটি ডিগ্রী থাকলেই তো হয় (যেহেতু একই মন্ত্রণালয়ের অধিনে, উপজেলায় একজন থাকলেই হবে, একই সাথে লাইভস্টোক ও ফিশ প্রোডাকশন এন্ড ট্রিটমেন্ট)। দূরে যেতে বলবো না বাংলাদেশেই একটু চোখ খুলে তাকান। স্পেশালাইজড ডিগ্রীর কথা বাদই দিলাম, একাধিক স্পেশালাইজড বিশ্ববিদ্যালয় (বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়) পর্যন্ত হয়ে গেছে। বর্হিবিশ্বের কথা বলে আপনাদের বিব্রত করতে চাই না। বিনয়ের সাথে বলতে চাই আপনাদের থেকে ও মেধাবী, উন্নত চিন্তা ও জ্ঞানসমৃদ্ধ মানুষদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিশনের পরামর্শেই আজ থেকে প্রায় ৫৫ বছর আগে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীগুলো চালু করা হয়। আপনারা কি চান প্রাণিসম্পদ আবার ৫৫ বছর পিছিয়ে যাক? গ্লোবালাইজেশনের কথা বলেছেন, অথচ কার্যক্ষেত্রে বলছেন তার উল্টো। স্মার্ট গ্রাজুয়েটের কথা বলে, সমাধান টানছেন তাদের সত্যিকারের এনালগ বানিয়ে।
অনেক খুঁজেও ডিএলএসের সমস্যা সমাধানকল্পে কোন সুস্পষ্ট ধারনা পাই নি । আছে শুধু দু ফ্যাকাল্টিকে উস্কে দেয়ার মত কিছু কথা। যার যেটা কাজ তাকে সেটা করতে দিলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। একব্যক্তিই নিজেকে সবজান্তা ভেবে কাজ করতে গেলেই সমস্যা হবে। ট্রিটমেন্ট করবে ভেটেরিনারি গ্রাজুয়েট আর সম্প্রসারন কাজে থাকবে প্রডাকশন গ্রাজুয়েট। সেক্ষেত্রে যদি মনে হয় যে বর্তমানে আরও ডাক্তার দরকার সেটা নতুন পোষ্টের জন্য বলেন আপনারা। আরও ভিএস পোষ্ট নিয়ে আসেন। সেখানে তো আমাদের কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু সম্প্রসারন পোষ্টটিতে একজন ডক্টর কখনোই ঢুকতে পারে না। যেখানে এই পোষ্টের বিপরিতে বাংলাদেশে স্পেশালাইজড (এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী) গ্রাজুয়েট রয়েছে। সরকার দেশকে উন্নত করার জন্য যখন অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সেখানে দুটো আলাদা ডাইরেক্টরেট কি অসম্ভব, পোল্ট্রি উন্নয়ন বোর্ড, ডেইরি ডেভেলোপমেন্ট র্বোড, পেট এনিম্যাল রিসার্চ ইন্সটিউট অসম্ভব? না অসম্ভব নয়, শুধু আমাদের কিছু মানুষের সদিচ্ছার অভাব। তারা এ দুপক্ষের বিবাদ নিয়ে রাজনীতি করতে চায় আর কিছুই নয়। সমস্যার সমাধান হলে তো রাজনীতি ও বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের কৃষিশিক্ষা ও এর উন্নয়নে বাকৃবি স্বনামধন্য ও পুরোধা। বাকী সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একে আদর্শ মনে করে এবং একে ফলো করে। বিনয়ের সাথে বলছি একথা স্বিকার করতে বোধহয় খুব কষ্ট হয় আপনাদের। তা না হলে বাকৃবিতে প্রতিষ্ঠিত দুটো ডিগ্রী সম্পর্কে এরকম মন্তব্য করতে পারতেন না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ডিগ্রী থাকবে কোনটি থাকবে না সে বিষয়ে বাংলাদেশের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে ফলো করা কতটা যৌক্তিক ভেবে দেখবেন।
যারা এ দু‘ফ্যাকাল্টির এলামনাই তাদের বলতে চাই আজ হয়তো আপনারা স্ব স্ব র্কমক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দু ফ্যাকাল্টি হয়তো কোন প্রয়োজনে পড়ে না আপনার। কিন্তু আপনি কি বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন এ ডিগ্রী আপনাকে কিছুই দেয় নি? আজ আপনার পরিচয়, কথা বলার সাহস, আপনার প্রতিষ্ঠা এ গুলোতে এ ডিগ্রীর কোন অবদান নেই? প্রত্যেকটা পেশার ধরণ আলাদা। পেশাগত সমস্যা থাকবেই। ডিএলএস-এ হয়তো একটু বেশী। তার জন্য আপনি আপনার ডিগ্রীকে গালি দিবেন বা অপমান করবেন এটি কখনোই কাম্য নয়। কৃষিতে সর্বোচ্চ প্রায় ৫-৭% ছাত্রছাত্রী বিসিএস ক্যাডার হয় প্রত্যেক বছর। আমাদের ও এর কাছাকাছি সংখ্যক ছাত্র বিসিএস পেয়ে ডিএলএসে চাকুরি করে। আমরাও চাই আপনাদের এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হোক। তাই বলে আপনি আপনার ডিগ্রী অপমান করতে পারেন না। আজ যে ডিগ্রীকে আপনি হেয় করছেন, অনেকেই সেটিকে নিয়েই গর্ব করে (বাকী ৯০ ভাগ ছাত্র) (যারা হয়তো ডিএলএসে নেই বা আছে)। দুটো ডিগ্রী এক করা কোন সমাধান নয় এবং এটি কোন দিন ও সম্ভব নয়। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, হাজবেন্ড্রী ও ততদিন থাকবে। দুটো ডিগ্রী এক করা নিয়ে কথা বলা বৃথা। অতএব বিকল্প সমাধান-ই শ্রেয়।
পরিশেষে সকলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, শুধুমাত্র সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় এ ধরনের কথা ব্যক্তিস্বার্থ ব্যতিরেকে দেশের সার্বিক উন্নতিতে কোন অবদান রাখে না । দুটো ফ্যাকাল্টি স্ব স্ব মহিমায় মহিমান্বিত। দেশের প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন এগিয়ে যাক সবার হাত ধরে, এ প্রত্যাশা সবার।
মোঃ নূরন্নবী ইসলাম
লেকচারার, অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
(বি. দ্রঃ মতামত লেখকের একান্তই ব্যক্তিগত। মতামতের জন্য এগ্রিবার্তা.কম দায়ী নয়।)