ঢাকা, ৬ মে ২০২৪, সোমবার

তীব্র গরমে লবণ উৎপাদন বেড়েছে



জাতীয়

বণিক বার্তা

(১ সপ্তাহ আগে) ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন

agribarta

তীব্র গরমে কৃষিপণ্য উৎপাদনসহ নানা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম লবণ। বৃষ্টিপাতহীন গরমের উত্তাপে লবণের উৎপাদন বেড়েছে। প্রতি তিনদিনে দেশে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় এক লাখ টন। স্বাভাবিক সময়ে লবণ উৎপাদনে সময় লাগে ৬-১০ দিন। তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় দ্রুত লবণ উৎপাদন হচ্ছে। তাপমাত্রা বেশি ও মেঘমুক্ত আকাশ পাওয়া গেলে দু-তিনদিনেই পরিপক্ব লবণ ঘরে তুলছেন চাষীরা। সবশেষ এক সপ্তাহ ধরে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় লবণ উৎপাদন হচ্ছে।

সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় নভেম্বর থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়। চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত উৎপাদন কিছুটা ধীরগতির হলেও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদন বেড়েছে। মৌসুমের শেষ আড়াই মাসে বার্ষিক উৎপাদনের অর্ধেক লবণ উৎপাদন হয়েছে। সর্বশেষ এক সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৩২ হাজার টনেরও বেশি উৎপাদন হয়েছে। এ হিসাবে প্রতি তিনদিনে উৎপাদন হয়েছে প্রায় এক লাখ টন। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে মৌসুম শেষে দেশে লবণ উৎপাদনের নতুন রেকর্ড গড়বে কৃষক।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, মেঘহীন রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া লবণ উৎপাদনে সবচেয়ে উপযোগী। একাধিক ঘূর্ণিঝড় ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে মৌসুমের শুরুতে লবণ উৎপাদনের গতি ছিল শ্লথ। যার কারণে মজুদ সংকটে দেশে দাম বাড়তে থাকে। আপৎকালীন হিসেবে এক লাখ টন লবণ আমদানিও করা হয়। শুরুতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও গত এক মাসে দিনভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে উৎপাদন।

বিসিকের তথ্যানুযায়ী, দেশে এ বছর ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর (বিসিকের নিবন্ধিত) জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। এসব জমিতে চাষ করছেন ৪০ হাজার ৬৯৫ জন কৃষক। দেশীয় চাহিদা অনুযায়ী চলতি বছর ২৫ লাখ ২৮ হাজার টন লবণের চাহিদা ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২১ এপ্রিল পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৪৩২ টন। গত বছরের একই সময়ে উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ২৩ হাজার ৮৯৭ টন। অর্থাৎ ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বাড়তি উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৫ টন।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৬২ বছরের ইতিহাসে ৬৬ হাজার ৪২০ একর জমিতে রেকর্ড ২২ লাখ ৩০ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছিল। গত বছর ৩৯ হাজার ৪৬৭ চাষী লবণ মাঠে উৎপাদনে ছিল। ২০২২ সালে উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৩৯ হাজার টন।  এ বছর আগামী মে মাসের মাঝামাঝি কিংবা শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। পুরো মৌসুম উৎপাদন পাওয়া গেলে এই ধারাবাহিকতায় আরো অন্তত সাত-আট লাখ টন লবণ উৎপাদন হবে। সেক্ষেত্রে ৬৩ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে লবণ উৎপাদনের রেকর্ড তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন বিসিক কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক ও কক্সবাজারের লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের প্রধান মো. জাফর ইকবাল ভুঁইয়া বলেন, ‘আবহাওয়া শুষ্ক ও তীব্র গরমের কারণে লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুম চলছে। আগে আট-নয়দিনে লবণ পরিপক্ক হলেও এখন ২৪ ঘণ্টা কিংবা ২৪ ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে লবণ তুলতে পারছেন কৃষকরা। গ্রীষ্মের উত্তাপ বেশি হওয়ায় সকালে মাঠে সামুদ্রিক পানি জমানো হলে রাতেই শক্ত দানায় রূপান্তরিত হচ্ছে লবণ। এ কারণে  প্রতিদিন ৩০ হাজার টনেরও বেশি লবণ উৎপাদন করছেন কৃষক।’ এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে লবণের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।

বিসিকের কর্মকর্তারা জানান, কৃষিপণ্য উৎপাদনে বড় বাধা গরম। তাপদাহে পোলট্রি, মৎস্য, চা, খরিপ-১ মৌসুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু সমুদ্রের নোনা পানি শুকিয়ে লবণ উৎপাদন হওয়ায় গরম আশীর্বাদ হিসেবে হাজির হয়েছে খাতসংশ্লিষ্টদের জন্য। বাড়তি উৎপাদন হওয়ায় মাঠে ও পাইকারি বাজারে লবণের দাম কমেছে মণপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা। সর্বশেষ ২১ এপ্রিল মাঠ পর্যায়ে ক্রুড (অপরিশোধিত) লবণ বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৩২০ টাকা। যদিও বিগত বছরের একই সময়ে লবণের মাঠ পর্যায়ের দাম ছিল ৩৯০ টাকা।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. নুরুল কবির বলেন, ‘গরমের কারণে ভালো মানের লবণ উৎপাদন হওয়ায় ঘাটতি থাকবে না। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে লবণের আপৎকালীন মজুদ গড়ে তোলা উচিত বিসিকের।’ এতে মিল মালিকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি কৃষকও উপকৃত হবেন বলে মনে করেন তিনি।