ঢাকা, ২১ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার

বর্জ্য থেকে সম্পদ: দেশে মাছ-মুরগির সম্ভাবনাময় খাদ্য ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই



উদ্যোক্তা

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৩ সপ্তাহ আগে) ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

agribarta

চার বছর আগে পাবনার আটঘরিয়ার পারসিধাই গ্রামের শিমুল হোসেন ছিলেন ঋণের ভারে জর্জরিত। তবে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষের মাধ্যমে তিনি আজ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। ১৬ লাখ টাকা ঋণ শোধ করে এখন তিনি প্রতি মাসে আয় করছেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। কক্সবাজারে নতুন একটি খামারও গড়ে তুলেছেন।

ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই দেখতে সাধারণ মাছির মতো হলেও এটি মূলত একটি বিশেষ ধরনের পোকা। এদের লার্ভা পচা-আবর্জনা, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ও হোটেলের উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেড়ে ওঠে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পোকা মাছ ও পোলট্রির খাদ্যের জন্য একটি কার্যকর ও সাশ্রয়ী বিকল্প হতে পারে। এর প্রোটিনসমৃদ্ধ লার্ভা কম খরচে গৃহপালিত প্রাণীর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।

ঢাকায় ফ্যাশন ডিজাইনের ডিপ্লোমা শেষে চাকরিতে যুক্ত হয়েছিলেন শিমুল। তবে কৃষিতে নিজের কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৮ সালে ফিরে আসেন গ্রামে এবং হাঁস পালনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবে ১৮ লাখ টাকার ঋণে জড়িয়ে পড়েন।

পরবর্তীতে ইউটিউবে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই সম্পর্কে জানার পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নেন। তিনি বাজার সম্পর্কে গবেষণা করে পোকার খামার শুরু করেন। পাবনার পিসিডির সহায়তায় ঋণ ও প্রশিক্ষণ পেয়ে তিন বছরের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ান। বর্তমানে প্রতিদিন ৩০০ কেজি লার্ভা উৎপাদন করছেন, যা স্থানীয় ও ঢাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

শুরুতে অনেকেই শিমুলকে নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, তবে তার সাফল্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সম্প্রতি তিনি ভারত, নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তানে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের মাদার পোকা রপ্তানি করেছেন।

প্রচলিত পোলট্রি ও ফিশ ফিডে যেখানে সর্বোচ্চ ৩৩% প্রোটিন থাকে, সেখানে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভায় ৪৩-৫৫% প্রোটিন রয়েছে। উৎপাদন খরচও তুলনামূলকভাবে কম। প্রতি কেজি লার্ভা উৎপাদনে খরচ হয় মাত্র ১০-১২ টাকা, যা বিক্রি হয় ৫০-৮০ টাকায়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, এই পোকা ফিশারিজ ও পোলট্রি শিল্পের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। কম খরচে বেশি পুষ্টিমান পাওয়ার জন্য ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের চাষ বাড়ানো উচিত।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে এই শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩৪%। বর্তমানে দেশে মাছ ও পোলট্রি খাদ্যের বাজার প্রায় ৯৮৬ কোটি টাকার, যা প্রতি বছর বাড়ছে।

ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষ পদ্ধতি

  • পোকার পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় প্রজনন সম্পন্ন হয়, এরপর কাঠের স্তরে ডিম পাড়ে।
  • আট থেকে দশ দিনের মধ্যে ডিম থেকে লার্ভা ফোটে।
  • ২০-৩০ দিনের মধ্যে লার্ভা মাছ, হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহারযোগ্য হয়।
  • লার্ভাগুলো পরিণত হয়ে মাছিতে পরিণত হয় এবং আবার ডিম পাড়ে।

বর্তমানে দেশের ২৫টি জেলায় প্রায় ২৮০ জন উদ্যোক্তা বাণিজ্যিকভাবে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষ করছেন। প্রতি মাসে উৎপাদিত ৭০ টন পোকার বাজারমূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় এই শিল্পের প্রসার ঘটছে।

পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, "আফ্রিকা ও ইন্দোনেশিয়ায় এটি ব্যাপকভাবে চাষ হয়। বাংলাদেশেও এ খাতকে আরও সম্প্রসারিত করতে চাই, যাতে নতুন উদ্যোক্তারা উপকৃত হন।"