ঢাকা, ৬ নভেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বটগাছ



সম্পাদকীয়

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৬ মাস আগে) ২২ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:২৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১:০৯ অপরাহ্ন

agribarta

গ্রামবাংলার প্রতিটি জনপদে একসময় যেসব গাছ মানুষকে ছায়া দিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে—সেসব গাছের মাঝে বটগাছ ছিল অগ্রগণ্য। শুধু একটি গাছ নয়, এটি ছিল আবেগ, সংস্কৃতি, সভ্যতা আর স্মৃতির কেন্দ্রবিন্দু। তাই তো একে বলা হয় 'বৃক্ষরাজ'। বিশাল ছায়া, ঝুলন্ত শিকড় আর প্রশান্তির বাতাসে গ্রামবাসীর প্রতিদিনের জীবনে ছিল এর অপরিহার্য উপস্থিতি।

বটগাছ ঘিরেই গড়ে উঠত মেলা, বসত আঞ্চলিক বৈঠক বা পঞ্চায়েতের সালিশ। গ্রামীণ খেলাধুলা থেকে শুরু করে পূজা-পার্বণ, সবকিছুতেই বটগাছ ছিল ঘরের চেয়েও আপন। দালানকোঠার অভাবে যেখানে বড় কোনো স্থাপনা ছিল না, সেখানে ছায়াঘেরা একখানা বটগাছই হয়ে উঠত ‘মিলনমেলা’র জায়গা।

বটগাছ শুধু মানুষের আবেগের গাছই নয়, এটি পরিবেশেরও এক প্রকৃত রক্ষাকর্তা। প্রতিদিন একটি পরিপূর্ণ বটগাছ প্রায় ৬০-৭০ গ্যালন জলীয় বাষ্প ছাড়ে, যা এলাকাজুড়ে আর্দ্রতা ও ঠান্ডা পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর ছায়ায় আশ্রয় পায় প্রায় ৩৫০ ধরনের পাখি ও কীটপতঙ্গ। ফল খেয়ে বেঁচে থাকে শালিক, কাক, বাঁদুড়, এমনকি বিপন্ন প্রজাতির পাখিও।

ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বটগাছ পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। অনেক জায়গায় এর নিচে গড়ে ওঠে মন্দির, আবার অনেক স্থানে বটগাছ কাটাও নিষিদ্ধ। ভারতের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবেও এটি স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশেও বটগাছকে কেন্দ্র করে বহু সাহিত্য রচিত হয়েছে, যা আজও পাঠকহৃদয়ে রয়ে গেছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়—সময় পাল্টেছে, পাল্টেছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। গ্রামেও গড়ে উঠছে কংক্রিটের অট্টালিকা, কাটা পড়ছে বটসহ শতবর্ষী গাছগুলো। পরিবেশ ধ্বংসের এই যাত্রায় হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক শীতলতা, হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য।

আধুনিকায়নের তো দরকার আছে, কিন্তু তার মানে কি শিকড়কেই উপড়ে ফেলা? সময় এসেছে নিজেদের প্রশ্ন করার—এই প্রাকৃতিক বাতানুকুল বৃক্ষরাজকে আমরা কীভাবে রক্ষা করব?

সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে সচেতনতা বাড়াতে হবে, স্কুল-কলেজে বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি প্রাচীন বৃক্ষ সংরক্ষণের শিক্ষাও দিতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে বটগাছের গুরুত্ব ও ভালোবাসার গল্প।

সম্পাদকীয় থেকে আরও পড়ুন

সর্বশেষ