
সিরাজগঞ্জের ধামাইনগর ইউনিয়নের লবণকোটা গ্রাম এলাকায় অন্যান্য শ্রমিকের সঙ্গেই বোরো ধান নিড়ানির কাজ করছিলেন কুশল বালা সিং ও উষা রানী মাহাতো। তারা জানান, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পাবেন ৩৫০ টাকা। কিন্তু পাশেই কাজ করা একই ইউনিয়নের মহিষাচাপড় গ্রামের গণেশ মাহাতো পাবেন ৫০০ টাকা। একই রকম পরিশ্রম ও কাজ করলেও জেলার অদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী শ্রমিকরা যুগ যুগ ধরে এভাবেই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
এ জেলায় ফসল আবাদে আদিবাসী নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের বেশ কদর। এর কারণ আদিবাসী শ্রমিকরা বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে কাজ করেন। কাজে ফাঁকি দেন না। তার পরও বৈষম্যের শিকার হওয়ার কারণ অভাব। অভাবে পড়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী আগাম শ্রম বিক্রি করেন। আগে দাদন নেয়া টাকা পরিশোধে স্বল্প মজুরিতেও কাজ করতে বাধ্য হন।
আবার পুরুষের পাশাপাশি আদিবাসী নারী শ্রমিকরা সমান পরিশ্রম করলেও মজুরি পান কম। আদিবাসী নারী শ্রমিকদের মজুরির এ বৈষম্য চলছে যুগ যুগ ধরে। সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৫০টি গ্রামে প্রায় দুই লাখ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে।এর মধ্যে রায়গঞ্জ এবং তাড়াশ উপজেলায় প্রায় এক লাখের বেশি আদিবাসী মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে তাঁতী, বসাক, সিং, মাহাতো, উরাও, বুনা, সাঁওতাল, রাজোয়ার, তুরী ও মালিসহ অন্যান্য গোত্রের আদিবাসী ও নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে। এসব গোত্রের অধিকাংশ মানুষ ভূমিহীন গরিব। যারা শ্রমিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। এখন পুরোদমে চলছে বোরো আবাদ। এর মধ্যে নিভৃতে কাজ করে চলেছেন আদিবাসী শ্রমিকরা।
জেলা আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক পরেশ চন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘বর্তমানে যে হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সে তুলনায় মজুরি যথেষ্ট নয়, তার পরও হচ্ছে বৈষম্য। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে জীবনযাপনের ব্যয়ের মিল রেখে মজুরি নির্ধারণ এবং নারীদের মজুরি বৈষম্য দূর করার দাবি জানান তিনি।’
জেলা আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সুশীল চন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘আদিবাসী ও নৃ-গোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষ কৃষি শ্রমিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেন। বর্তমান বাজারের তুলনায় এমনিতেই মজুরি কম। তার পরও একই সমান কাজ করলেও নারী শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম দেয়া হচ্ছে।’
সিরাজগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘কৃষি শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি সরকার এখনো নির্ধারণ করে দেয়নি। একেক এলাকায় এবং একেক মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের মজুরি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। শ্রমিক এবং জমির মালিকরা তাদের সমঝোতার ভিত্তিতে মজুরি নির্ধারণ করে নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘একই স্থানে সমানভাবে কাজ করে নারী পুরুষের মজুরির পার্থক্য হওয়া উচিত নয়। আইন প্রয়োগ করে মজুরির বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। বিষয়টি সবার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা উচিত। তিনি যোগ করেন, সরকার সব শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণের পরিকল্পনা নিয়েছে। সেটা বাস্তবায়ন হলে কেউ মজুরি নিয়ে বৈষম্য করতে পারবে না।’