
দেশের শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর। জেলার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সোনালি বোরো ধান। কৃষকরা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলনের পরও কাঙ্ক্ষিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। হাটবাজারে ধানের দাম কম থাকায় প্রতি মণ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। তাই ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মনে।
চিরিরবন্দর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরোর সোনালি শীষ। সোনালি ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাঁধে করে, কেউ ভ্যানে কেউ গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে আবার কেউ রাস্তার উপর খোলা মাঠে ধান শুকাতে ব্যস্তসময় পার করছে।
চিরিরবন্দর উপজেলার বড় গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আমি সাধারন কৃষক মানুষের কাছে বর্গা নিয়ে ৬ বিঘা জমিতে বোর ধান লাগিয়েছি। আল্লাহর রহমত ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধানের যে বাজার তাতে গায়ে গায়ে যায় লাভ নাই। এক বিঘা জমি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বর্গা নিয়েছি এর পরে হাল চাষ,ধানের বীজ, পানি,সার কিটনাষক সব কিছুর যে দাম তাতে এদিকে খরচ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা।এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন ৪০ মন বর্তমান ধানের বাজারে ৯০০ টাকা থেকে ১০০ টাকা মন। তহলে লাভ কোথায় ধান আবাদ করে ?
আউলিয়া পুকুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গির আলম বলেন, আমি ৬ বিঘা জমিতে চিকন জাতের ধান লাগিয়েছি তার মধ্যে ৪ বিঘা জমির ধান কাটছি ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ঝড় বৃষ্টি না থাকায় ধানের কোন ক্ষতি হয়নি। তবে ধানের বাজার খুব খারাপ এক বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।আমার এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন হয়েছে ৪৫ মন। এক ধান বিক্রি করছি ৯৫০ দরে। তাহলে বলেন কয়টাকা লাভ থাকে। বর্তমান বাজারে সব কিছুর দাম যে পরিমান বাড়ছে শুধু কৃষকরে ধানের মুল্য নাই। কৃষক যদি না বাছে তাহলে তো দেশের অবস্থা বেহাল হবে।
একই এলাকার আরেক কৃষক আশরাফুল আলম বলেন, আমি আগাম জাতের আলু লাগিয়েছিলাম আলু তোলার পলে বগুড়ার জিরা জাতের ধান লাগিয়েছি ৪ বিঘা জমিতে চার বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। বর্তাম যে ধানের বাজার তাতে ধান বিক্রি করব ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মত।
সরকার ধানের দাম দিছে ৩২ টাকা কেজি সে হিসাবে এক বস্থা ধানের দাম আসে ২ হাজার ৪০০ টাকা কিন্তু বাজারে সেই ধান বিক্রি করছি ১ হাজার ৯০০ টাকা। এত বেশি পরিশ্রম করে বলেন ধান আবার করে আমাদের কি লাভ থাকে?
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, চলতি বোর মৌসুমে এ উপজেলায় ১৯ হাজার ৬১৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতরে ধানের আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে কৃষকরা ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছে। এ পর্যন্ত ১১ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ পেয়েছি ঝড় বৃষ্টির সম্ভবানা রয়েছে তাই আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ৮০ শতাংশ ধান পাকলেই ধান করাটার পারমর্শ দিচ্ছি। চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ধানের ফলন তার্গেট ৪ .৫ মেট্রিক টন পার হেক্টর কিন্তু আমারা আগামা জাতের ধান গুলোতে হেক্টর প্রতি ৪.২৭মেট্রিক টন ধান পাচ্ছি।