ঢাকা, ২১ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার

কেন কৃষি গবেষণার প্রয়োজন



কৃষি

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(৩ দিন আগে) ১৭ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ৮:০৮ অপরাহ্ন

agribarta

কৃষি হলো একটি দেশের অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার অন্যতম প্রধান ভিত্তি। তাই কৃষির উন্নতির জন্য গবেষণা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কৃষি গবেষণার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি, উন্নতমানের বীজ, জৈব সার এবং টেকসই উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়, যা কৃষির উৎপাদনশীলতা ও মান বৃদ্ধি করে।

বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন, মাটির উর্বরতা হ্রাস, পোকামাকড়ের আক্রমণ এবং পানির অভাব কৃষিক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কৃষি গবেষণার মাধ্যমে এসব সমস্যার কার্যকর সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, গবেষণার ফলে এখন এমন ধানের জাত পাওয়া যাচ্ছে যা খরা, লবণাক্ততা ও বন্যা সহ্য করতে পারে। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে।

কৃষি গবেষণা শুধু ফসল উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি পশুপালন, মৎস্যচাষ এবং কৃষি-প্রযুক্তি উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উন্নত জাতের গবাদিপশু ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গবেষণা অপরিহার্য। এছাড়া কৃষি গবেষণার ফলেই কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সময় ও খরচ বাঁচাতে পারছেন।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও কৃষি গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষিতে উৎপাদন বাড়লে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়, রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হয়। একই সঙ্গে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয়, যা একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

সব মিলিয়ে বলা যায়, কৃষি গবেষণা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং একটি দেশের টেকসই উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তার মূল চাবিকাঠি। তাই কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগ ও গুরুত্ব দেওয়া প্রতিটি দেশের অগ্রগতির জন্য অত্যাবশ্যক।

শ্বের অনেক দেশই কৃষি গবেষণায় ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে কৃষির সম্পর্ক সরাসরি। নিচে কয়েকটি কৃষি গবেষণায় অগ্রণী দেশ তুলে ধরা হলো —


১. যুক্তরাষ্ট্র (United States)

কৃষি গবেষণায় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ।

তাদের USDA (United States Department of Agriculture) এবং Land Grant Universities নিয়মিত নতুন ফসলের জাত, মাটি ব্যবস্থাপনা ও কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে।

উন্নত ড্রোন, এআই ও জেনেটিক প্রযুক্তি কৃষিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।

২. নেদারল্যান্ডস (Netherlands)

ছোট দেশ হলেও কৃষি প্রযুক্তিতে অত্যন্ত উন্নত।

Wageningen University বিশ্বের সেরা কৃষি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।

টেকসই কৃষি, গ্রিনহাউস চাষ ও হাইড্রোপনিক্স প্রযুক্তিতে বিশ্বনেতা।

৩. চীন (China)

কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশাল গবেষণা বাজেট রাখে।

জিন সম্পাদনা (CRISPR) প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন করছে।

৪. ভারত (India)

ICAR (Indian Council of Agricultural Research) দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

ধান, গম, তুলা, চা ও সবজি উৎপাদনে নানা উদ্ভাবন করেছে।

কৃষিতে এআই ও স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহারেও অগ্রগতি অর্জন করছে।

৫. ইসরায়েল (Israel)

শুষ্ক মরুভূমির দেশ হয়েও উন্নত ড্রিপ ইরিগেশন (Drop Irrigation) প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।

পানি ব্যবস্থাপনা, স্মার্ট কৃষি ও ফসল উৎপাদনে বিশ্বে উদাহরণ।

৬. অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ব্রাজিল

এ দেশগুলোও কৃষি গবেষণায় ব্যাপক বিনিয়োগ করে।

বিশেষ করে ব্রাজিল টেকসই কৃষি ও সয়াবিন গবেষণায় অগ্রগামী।

কৃষি গবেষণায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে —
যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, চীন, ভারত, ইসরায়েল, ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া।
এই দেশগুলোর গবেষণা মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশও কৃষিতে দ্রুত উন্নতি করছে।