‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, হৈ হৈ রৈ রৈ, জামায়াত-শিবির গেলি কই, হৈ হৈ রৈ রৈ-সন্ত্রাসীরা গেলি কই, হৈ হৈ রৈ রৈ-জামাত বিএনপি গেলি কই, আমরা সবাই মুজিব সেনা-ভয় করি না বুলেট বোমা’ এসব স্লোগান দিয়ে সরব ছিলেন ফার্মগেটের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা কর্মচারীরা। প্রধান কার্যালয়ের সামনে গত ৪ আগস্ট উক্ত ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো: জালাল উদ্দীনের নেতৃত্বে উচ্চকিত কণ্ঠে স্লোগানগুলো দিচ্ছিলেন ইনস্টিটিউটের ফ্যাসিবাদের দোসর কর্মকর্তারা কর্মচারীরা।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ঢাকাসহ সারা দেশে যখন ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষে কথিত 'শান্তি সমাবেশ' করেছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো: জালাল উদ্দীনের অতি আগ্রহ এবং প্রচন্ড চাপে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে এই কথিত 'শান্তি সমাবেশে ' অংশ নিতে বাধ্য হয়। এই কর্মসূচির একাধিক ছবি ও ভিডিও রয়েছে। এ কর্মসূচিতে দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।
একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন ছাত্র-জনতার রক্ত সিঁড়ি মাড়িয়ে অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার দুর্নীতিবাজ ও দলবাজদের সরিয়ে দেয়া হলেও বহাল তবিয়তে আছেন ছাত্রজনতাকে সন্ত্রাসী হিসেবে স্লোগান দেওয়া মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো: জালাল উদ্দীন এবং তার অনুসারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী দুর্নীতিবাজ মহাপরিচালক ও পরিচালকদের অপসারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো: জালাল উদ্দীন ও তার আওয়ামী অনুসারী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে আছেন এবং দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আওয়ামী কর্মকর্তারা।
এখনো বহাল তবিয়তে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রেনিং এন্ড কমিউনিকেশন বিভাগের সর্বজনবিদিত দুর্নীতিবাজ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। কোটায় নিয়োগ প্রাপ্ত এবং প্রচন্ড কোটার পক্ষে থাকা গণজাগরণ মঞ্চের সাবেক এই নেতা মহাপরিচালক মো: জালাল উদ্দীনের যোগ সাজসে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কেনা কাটা, অবৈধ টেন্ডার প্রক্রিয়া, অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ বাণিজ্যের মাধ্যমে আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত আছেন বলে জনশ্রুতি আছে।
একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ঐদিন প্রতিষ্ঠান প্রধানের পক্ষ থেকে কর্মসূচিতে আসতে বাধ্য করা হয়। বলা হয়েছিল তৎকালীন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার এসআরডিআইতে মতবিনিময় সভা করবেন। তাই সবাইকে অফিসে আসতেই হবে বলে ডিজি মো: জালাল উদ্দীন সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঐদিনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে বাধ্য করেন। উল্লেখ্য যে প্রধান কার্যালয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দলবাজ অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারী ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে পোস্টিং নিয়ে দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে রেখেছেন। সৎ কর্মকর্তাদের ২০-৩০ বছর ঢাকার বাহিরে ফেলে রাখা হয়েছে এবং তাদের পাপ্য অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। এখনোও যোগ্য ঐসব কর্মকর্তাগণ বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত।
জানা গেছে বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের নেতা দুর্নীতিবাজ 'মৃত্তিকা গবেষণা ও গবেষণাগার জোরদারকরণ প্রকল্পের' সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. মো: আবদুল বারীর মদদ পুষ্ট ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো: জালাল উদ্দীন ইতোমধ্যে স্বৈরাচার পতনের পর নিজেকে বিএনপি প্রমাণের জন্য জোর লবিং শুরু করেন। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার দ্বারস্থ হন। কিন্তু কেউ ই ওনাকে গ্রহণ করছেন না কারণ ওনি ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, "মৃত্তিকা গবেষণা ও গবেষণাগার জোরদারকরণ" প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. মো: আবদুল বারীর বিরুদ্ধে সমাপ্ত দুইটি প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। চাকরি থেকে অবসর নিলেও উক্ত সাবেক কর্মকর্তা এখনও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে কলকাঠি নাড়েন। ড.বারী প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি,সাবেক মন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বৈরাচারের দোসর কথিত সিনিয়র রাজনৈতিক নেতাদেরকেও প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকার সুবিধা দিয়েছেন।
গবেষণাগারের জন্য যন্ত্রপাতি, মেশিনপত্র এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদি কেনাসহ অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে পিডি ড. মো: আবদুল বারীর বিরুদ্ধে। সদ্য সমাপ্ত প্রকল্পের আগেও এই ড.বারী সার গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের পিডি থাকাকালীন সময়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে যা তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে বলে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা দাবি করেন। গত ৪ আগস্ট এই পিডির প্ররোচনায় ডিজি জালালসহ আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা ছাত্র-জনতাকে জামায়াত-শিবির, রাজাকার, সন্ত্রাসী উল্লেখ করে সমস্বরে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এসব কর্মকর্তারা সরাসরি ছাত্রজনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে খামারবাড়িতে গত ৪ আগস্ট কথিত শান্তি সমাবেশে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ছাত্রজনতাকে সন্ত্রাসী, জামায়াত-শিবির অভিহিত করে নানা স্লোগান তুলেছিলেন। তাদের অনেকে এখন সুর পাল্টিয়ে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছেন।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দু:শাসনে ভিন্ন রাজনৈতিক মতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন একটি অরাজকতা সৃষ্টি করছেন ডিজি জালাল উদ্দীন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একজন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে (SSO)কে মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (CSO) রুটিন দায়িত্ব দেন ডিজি জালাল উদ্দীন।যেখানে PSO চলতি দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে এই কাজ করেছেন। এর আগে DD admin এর পদ অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন থাকা অবস্থা পরে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মুখে অফিস আদেশ বাতিল করেন। কিন্তু ডিডি এডমিন পোস্টের চিঠি বাতিল হয় নি।