
নেত্রকোনা জেলা, যেখানে হাওর ও পাহাড়ের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিরাজমান, সেখানে কৃষি, মাছ উৎপাদন এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। দিন দিন বন্যপ্রাণী কমে যাচ্ছে এবং এর ফলে কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে, যা জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওর অঞ্চলে অতিথি পাখির দেখা মেলেনা। ফসলি জমিতে কার্যকরী সরীসৃপ প্রাণী না থাকায় পোকামাকড় ধানের ক্ষতি করছে। বর্ষা মৌসুমে পানি না থাকার কারণে এবং পাহাড়ি ঢলের ফলে ফসলি জমি ডুবে যাচ্ছে। উজানের বালুর কারণে ভূমির উর্বরতা কমছে।
প্রতি বছর কৃষকদের নতুন জাতের ধান রোপণ করতে হচ্ছে। পাহাড়ের গাছ কাটা একটি পুরনো সমস্যা, যা অব্যাহত রয়েছে। বনজঙ্গল ধ্বংস হওয়ায় পশু-পাখিরা বন ছেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। সম্প্রতি সাপসহ বিভিন্ন প্রাণী ধরা পড়ছে, যার মধ্যে সাপের সংখ্যা বেশি। কিছু সাপকে হত্যা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পরিবেশবিদরা জানান, গত ২০ বছরে এই অঞ্চলে অন্তত অর্ধশতাধিক বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে, যার প্রভাব কৃষি ও স্থানীয় পরিবেশে পড়ছে। নেত্রকোনা এখন দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
সেভ দ্য এনিমেল অব সুসংয়ের সভাপতি রিফাত আহমেদ রাসেল জানান, চলতি বছরে উজানের ঢলে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ভেসে এসেছে, যার মধ্যে সরীসৃপ প্রাণী অন্যতম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাসেলস ভাইপার আতঙ্কের গুজবের কারণে অনেক সাপ হত্যা করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান বলেন, সাপ কৃষি জমির ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু সাপসহ অন্যান্য সরীসৃপ প্রাণীর সংখ্যা
কমে যাওয়ায় কৃষিতে পোকামাকড় বাড়ছে এবং কৃষকের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।