ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার

পোল্ট্রি বিপ্লবে জয়পুরহাটের নতুন উদ্যোক্তারা



উদ্যোক্তা

এগ্রিবার্তা ডেস্ক

(১ বছর আগে) ৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:২০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১১:৪৮ অপরাহ্ন

agribarta

জয়পুরহাট জেলা কৃষি নির্ভর অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে দ্রুত উন্নতি করছে, যেখানে ডিম উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি হচ্ছে। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রচেষ্টায় জেলার কৃষি অর্থনীতির পরিসরও বাড়ছে।

বর্তমানে জয়পুরহাটে ৬৫১টি লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে, যেখানে বছরে ৩১ কোটি ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। জেলার ডিমের চাহিদা ৯ কোটি ৯৪ লাখ, ফলে উৎপাদিত ডিমের বাজার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উপরে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জেলার চাহিদা মিটিয়ে ২০ কোটির বেশি ডিম দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। মুরগি পালনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ জড়িত রয়েছে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালগঞ্জ এলাকার খামারি মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, তার খামারে প্রায় ৮ হাজার মুরগি রয়েছে এবং প্রতিদিন অন্তত সাড়ে ৩ হাজার ডিম উৎপাদন হয়। গত মাস থেকে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকার উপরে। তিনি উল্লেখ করেন, “মুরগির খাবার ও মেডিসিনের বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই ডিমের দাম বেড়ে গেছে।”

মঞ্জুরুলের খামারে তিনতলা দেখাশোনা করছেন আনিসুর রহমান। তিনি জানান, হাইব্রিড জাতের মুরগি ১৪০ দিনে ডিম দেওয়া শুরু করে এবং ১৮ মাস পর্যন্ত ভালোভাবে ডিম দেয়। এরপর এসব মুরগি বাজারে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

ডিম উৎপাদনের সাথে জড়িত একাধিক খামারি জানান, খাবারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে প্রতি পিস ডিম উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ৯ টাকার উপরে, যা খুচরা পর্যায়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

২০০০ সালের পর জয়পুরহাটে পোল্ট্রি বিপ্লব ঘটেছে এবং জামালগঞ্জের অধিকাংশ বাড়িতে মুরগি পালন শুরু হয়েছে। পোল্ট্রি ছাড়া এখানে অন্য কোনো শিল্প বড় আকারে গড়ে ওঠেনি। ব্যবসায়ীরা জানান, এ শিল্পে জেলায় দিনে ৪ থেকে ৪.৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়।

বর্তমানে পোল্ট্রি খাতে অনেক শিক্ষিত যুবক যুক্ত হচ্ছেন। সদরের মাদারগঞ্জ এলকার দেলোয়ার হোসেন জানান, তার খামারে দুই হাজার ডিম উৎপাদনকারী মুরগি রয়েছে। তিনি বলেন, “ব্যবসা সফল হওয়ায় অনেক মানুষ মুরগি পালনের দিকে ঝুঁকছেন।”

জয়পুরহাটের বেসরকারি সংস্থা জাকস ফাউন্ডেশন আধুনিক ব্যবসাবান্ধব পদ্ধতিতে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অর্থায়ন করছে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ), পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও ডেনিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ডানিডা)।

জাকসের নির্বাহী পরিচালক মো. নূরুল আমিন বলেন, “আমরা নিরাপদ ও টেকসই বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই।”

জেলায় নিরাপদ উপায়ে উৎপাদিত মাংস ও ডিম বিক্রির জন্য গ্রিন হারভেস্ট মিট নামের একটি প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। তাদের মাধ্যমে নিরাপদ উপায়ে উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারসহ রাজধানীতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

মো. রাশেদুজ্জামান নামে এক উদ্যোক্তা চাকরি ছেড়ে জয়পুরহাটে এসে ডিমের ব্যবসা করছেন এবং প্রতি মাসে অন্তত ১০ ট্রাক ডিম ঢাকায় সরবরাহ করেন।

জয়পুরহাটে সোনালী জাতের মুরগির বিপুল সংখ্যক খামার গড়ে উঠেছে এবং অর্ধশতাধিক হ্যাচারি রয়েছে। এখান থেকে বছরে প্রায় ১০ কোটি বাচ্চা উৎপাদন হয়।

পিকেএসএফ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে এবং জয়পুরহাটে কৃষকদের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন বলেন, “মুরগি পালনকে কেন্দ্র করে এখানে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “নিরাপদ উপায়ে খাদ্য উৎপাদনের জন্য আমরা চাষীদের সাথে কাজ করছি।”