ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, সোমবার

গবাদিপ্রাণীর বীমা নিয়ে খামারিদের জন্য বিশেষ সেবা দিচ্ছে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স



কৃষি

আবুল বাশার মিরাজ, বিশেষ প্রতিবেদক

(১০ মাস আগে) ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

agribarta

গবাদিপ্রাণী পালন বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এই খাত কৃষির পাশাপাশি মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে দুর্ঘটনা, অসুস্থতা কিংবা প্রাণীর মৃত্যু অনেক সময় খামারিদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে, খামারের প্রধান সম্পদ যদি কোনো কারণে নষ্ট হয়, তবে খামারিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড বিশেষ গবাদিপ্রাণী বীমা সেবা চালু করেছে।

ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুর রহমান বলেন, এই সেবার মাধ্যমে খামারিরা তাদের আর্থিক ঝুঁকি কমিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে গবাদিপ্রাণী পালন করতে পারবেন। গবাদী প্রাণী বীমা এমন একটি সেবা, যা গবাদিপ্রাণীর মৃত্যুর কারণে খামারিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। তিনি আরও জানান, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স এই সেবা চালু করেছে, যাতে খামারিরা আর্থিক সুরক্ষায় এগিয়ে থাকতে পারেন। বীমাকৃত প্রাণী যদি দুর্ঘটনা বা রোগের কারণে মারা যায়, তাহলে খামারি ক্ষতিপূরণ পাবেন।

গবাদিপ্রাণী বীমার মাধ্যমে খামারিরা তাদের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীকে বীমার আওতায় আনতে পারেন। তবে এই বীমার জন্য নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। খামারিদের বার্ষিক প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে, যা প্রাণীর বয়স, স্বাস্থ্য ও মূল্য নির্ভর করে। বীমা কার্যকর হওয়ার পর যদি কোনো গবাদিপ্রাণী দুর্ঘটনায় মারা যায় বা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটে, তাহলে খামারি ক্ষতিপূরণ পাবেন। বীমার অর্থ পেতে খামারিকে নির্দিষ্ট কিছু নথি জমা দিতে হবে, যেমন পশু চিকিৎসকের সার্টিফিকেট, বীমার কাগজপত্র ও প্রাণীর মৃত্যুর কারণ সংক্রান্ত রিপোর্ট। বীমা সংক্রান্ত যেকোনো সাহায্যের জন্য ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স-এর স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করা যাবে। এছাড়া, যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে খামারিরা অভিযোগ দাখিলের সুযোগও পাবেন।

ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গবাদিপ্রাণী বীমা গ্রহণ করে কুমিল্লার আসলাম আলী নামের একজন খামারি বলেন, প্রাণিবীমা গ্রহণ করে আমি ঝুঁকিহীন আছি। আমার গবাদী পশু লালন-পালন নিয়ে আর কোনো টেনশন নেই। কারণ, ইন্স্যুরেন্স করা আমার কোনো পশু যদি কোনো কারণে মারা যায়, তাহলে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নিকট থেকে সমদুয় অর্থ ফেরত পাবো। আর ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের প্রাণিবীমা করাও অনেক সহজ। তাই আমি খামারী ভাইদের বলবো, সবাই যেন এ বীমা গ্রহণ করে তাদের গবাদীপশুকে সুরক্ষিতভাবে লালন-পালন করে।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক জানান, গবাদিপ্রাণী বীমা খামারিদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধু আর্থিক সুরক্ষা নয়, বরং গবাদিপ্রাণী খাতের টেকসই উন্নয়নেও অবদান রাখবে। কারণ, খামারিরা যদি আর্থিক নিরাপত্তা পান, তাহলে তারা আরও বেশি প্রাণী পালনে আগ্রহী হবেন, যা দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গবাদিপ্রাণী বীমার প্রচলন বাড়লে খামারিরা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন এবং তাদের খামারের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি, এটি দেশের প্রাণিসম্পদ শিল্পকে আরও শক্তিশালী করবে।

গবাদিপ্রাণী বীমা করতে হলে খামারিদের ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের নিকটবর্তী অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রদান করে বীমার আবেদন করা যাবে। এরপর, নির্দিষ্ট প্রিমিয়াম পরিশোধ করলে বীমা কার্যকর হবে। ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের গবাদিপ্রাণী বীমা খামারিদের জন্য একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ। এটি খামারিদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারের সহযোগিতায় এ ধরনের উদ্যোগ আরও বিস্তৃত করা গেলে দেশের গবাদিপ্রাণী খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।